Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বাজছে বৈশাখের গান, উৎসবে মাতোয়ারা চট্টগ্রাম


১৪ এপ্রিল ২০১৯ ১৩:০২

চট্টগ্রাম ব্যুরো: নতুন বছর, নতুন প্রাণে জেগে ওঠা। বাঙালি জাতির আপন অস্তিত্বের শেকড় আরেকবার পরখ করে দেখার দিন। সৃষ্টিসুখের উল্লাসে মেতে ওঠার দিন পহেলা বৈশাখ। রক্ষণশীলদের বিধিনিষেধের বেড়াজাল ভেঙ্গে বাঙালি মেতে ওঠেছে নতুনের উল্লাসে। বন্দরনগরী চট্টগ্রামের দিকে দিকে বৈশাখের জয়গান। উৎসবে মাতোয়ারা চট্টগ্রামবাসী।

রোববার (১৪ এপ্রিল) সকালের নতুন সূর্যোদয়ের পরই চট্টগ্রাম নগরীতে শুরু হয়েছে বৈশাখের আবাহন। নগরীর ডিসি হিল, সিআরবির শিরীষতলা- এই দু’টি মূল ভেন্যু তো আছেই, নগরজুড়ে এমন কোনো সড়ক, জনপদ, অলিগলি নেই যেখানে বর্ষবরণের উন্মাদনার ছোঁয়া লাগেনি। বাজছে বৈশাখের গান, নতুন শাড়ি, নতুন পাঞ্জাবি জড়িয়ে অলি-গলিতে সরব পদচারণা উৎবসপ্রিয় বাঙালির।

বিজ্ঞাপন

সকালের দিকে ডিসি হিল-সিআরবিতে মানুষের আনাগোনা কিছুটা কম থাকলেও বেলা বাড়ার সাথে সাথে রীতিমতো মানুষের ঢল নেমেছে। সকাল সাড়ে ১১টার দিকে ডিসি হিলের প্রবেশপথে দর্শনার্থীদের সারি চেরাগি পাহাড়ের কাছাকাছি গিয়ে পৌঁছে। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে শিরীষতলায় প্রবেশে ইচ্ছুক দর্শনার্থীর সারিও ছিল মূল মঞ্চ থেকে অন্তত এক কিলোমিটার দূরে।

নানান বয়সী শিশু কিশোর, তরুণ তরুণী বৃদ্ধরাও নববর্ষের অনুষ্ঠানে যোগ দেন। পরস্পরের সঙ্গে নববর্ষেও শুভেচ্ছা বিনিময় করেন তারা। সবার পরনে ছিল নতুন বছরের নতুন পোশাক।

নগরীর ডিসি হিলে এবার ৪১তম বর্ষবরণের আয়োজন করেছে সম্মিলিত পহেলা বৈশাখ উদযাপন পরিষদ। প্রতিবারের মতো এবারও তাদের স্লোগান ‘পহেলা বৈশাখ বাঙালির উৎসব, সবার যোগে জয়যুক্ত হোক’।

সকালে শ্রুতি-অঙ্গনের ভৈরবী রাগে ধ্রুপদ পরিবেশনের মধ্য দিয়ে ডিসি হিলে শুরু হয় বর্ষবরণের আয়োজন। এরপর থেকে চলছে বিভিন্ন সংগঠনের নাচ-গান ও আবৃত্তি পরিবেশনা। একক পরিবেশনাও চলছে মাঝে মাছে।

বিজ্ঞাপন

সম্মিলিত পহেলা বৈশাখ উদযাপন পরিষদের আহ্বায়ক আহমেদ ইকবাল হায়দার সারাবাংলাকে বলেন, ‘পহেলা বৈশাখ বাঙালির প্রাণের উৎসব। আমাদের বড় পরিচয় আমরা বাঙালি। এই একটি উৎসবে আমরা ধর্ম নির্বিশেষে সব মানুষ একত্রিত হয়। কোনো বিধিনিষেধ দিয়ে বাঙালিকে তার এই প্রাণের আয়োজন থেকে দূরে সরিয়ে রাখা যাবে না।’

নগরীর সিআরবির শিরীষতলায় ভায়োলিনিস্ট চিটাগং নামের একটি সংগঠনের বেহালা বাদনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় বৈশাখ বরণের মূল আয়োজন। গানে-নাচে উৎসবমুখর পাহাড়ঘেরা নৈসর্গিক সিআরবি এলাকায় যেন মানুষের জোয়ার নেমেছে। রোদ্রের তীব্রতা ও গরম উপেক্ষা করে মানুষ ছুটছে প্রাণের উৎসবে।

সিআরবি’র আয়োজক সংগঠন নববর্ষ উদযাপন পরিষদের সংগঠক ডা.চন্দন দাশ সারাবাংলাকে বলেন, যুগে যুগে বাঙালি জাতির আবহমান উৎসবকে ধর্মের বিধিনিষেধ দিয়ে আটকানোর চেষ্টা হয়েছে। বাঙালি কখনোই রক্ষণশীলতা-পশ্চাৎপদতার কাছে পরাভব মানেনি। এবারও বর্ষবরণের আয়োজনে চট্টগ্রামে যে মানুষের ঢল নেমেছে, সেটা প্রমাণ করে যে বাঙালি তার জাতিসত্তার আবহমান ঐতিহ্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।

সিআরবিতে বিকেলে অনুষ্ঠিত হবে ঐতিহ্যবাহী সাহাবুদ্দিনের বলীখেলা। সেই বলীখেলা দেখতে প্রতিবছর শত শত মানুষ ভিড় জমায়।

এদিকে রোববার সকাল ১০টায় নগরীর সার্সন রোডে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউট থেকে বের হয়ে বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রা।

নগরীর ডিসি হিলে পহেলা বৈশাখের উৎসবে আসা একটি আবাসন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা হুমায়রা নওরীন সারাবাংলাকে বলেন, ‘পহেলা বৈশাখ তো শুধু একটি উৎসব নয়। এটি বাঙালির একটি সম্মিলনের আয়োজন। এই উৎসব মানবিকতার কথা বলে। আজ সমাজে মানবিকতার খুবই অভাব। আমরা আজ দেখছি- মাদ্রাসার ভেতরে ছাত্রী নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে। প্রতিদিন খুন, ধর্ষণের মতো ঘটনা ঘটে চলেছে। বাঙালির এই সম্মিলিত উৎসব থেকে আমরা এসব অনাচারের প্রতিবাদ এবং মানবিক সমাজ নির্মাণের কথা বলতে চাই।’

নগরীর সিআরবিতে আসা বেসরকারি প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী ফাতেমা আবেদিন সায়রা সারাবাংলাকে বলেন, ‘ছোটবেলা আম্মু-আব্বুর সাথে আসতাম। এখন বন্ধুবান্ধবরা মিলে আসি। এই একটি উৎসবকে মনে হয় আমরা সবাই একসঙ্গে করি। এই উৎসবে এলে মনে হয়, বিভেদের উর্দ্ধে ওঠে আমরা সবাই মানুষ। এই মানুষের সংস্কৃতি যেদিন সারা বাংলাদেশে আমরা ছড়িয়ে দিতে পারব, সেদিনই আমরা সুন্দর স্বদেশ পাব।’

সারাবাংলা/আরডি/এনএইচ

চট্টগ্রাম বাংলা নববর্ষ ১৪২৬

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর