চাকরির আশ্বাস, হাতিয়ে নিল ৮ কোটি টাকা!
১৬ এপ্রিল ২০১৯ ১৮:৪৩
ঢাকা: চাকরির আশ্বাস দিয়ে একটি প্রতারক চক্র গত আট বছরে হাতিয়ে নিয়েছে প্রায় আট কোটি টাকা। ১৬০ জন চাকরি প্রত্যাশীর কাছ থেকে প্রতারকচক্রের সদস্যরা এসব টাকা হাতিয়ে নেয় বলে র্যাব জানিয়েছে। চাকরিপ্রার্থী প্রতিজনের কাছ থেকে অন্তত ৫ লাখ টাকা করে হাতিয়ে নেওয়া হয়।
মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) রাজধানীর কারওয়ানবাজারের র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাব-৪ এর পরিচালক ও অতিরিক্ত ডিআইজি চৌধুরী মঞ্জুরুল কবির। সোমবার রাতভর মিরপুর ও খিলক্ষেত এলাকায় অভিযান চালিয়ে এ প্রতারক চক্রের ১৬ সদস্যকে গ্রেফতার করে র্যাব-৪।
গ্রেফতার করা প্রতারকরা হলেন- লিঙ্কন ওরফে মাসুদ (৪৩), মো. হাছান জিয়া (৪৪), সাকির আলী (৩৬), জান্নাতুল ফেরদাউস ওরফে রাসেল (৩৩), মো. সেলিম সরদার (৪৩) শেখ জাকির হোসেন (৪০), আব্দুর কাদের শরীফ (৩৩), মো. হুমায়ূন কবির (৫০), খলিলুর রহমান (৪২), ইসমাঈল হোসেন (৩৬), মো. রবিউল ইসলাম ওরফে সম্রাট (২৫), আবুল হোসেন ওরফে সায়মন (২৮), মো. কেরামত হোসেন ওরফে সজিব (৩৮), রুবেল বিশ্বাস (৩৩) মো. কামরুজ্জামান (৪০) এবং মো. সাইফুল ইসলাম (২৬)। এসময় তাদের কাছ থেকে ২৩টি মোবাইল ফোন ও ১০টি ভুয়া নিয়োগপত্র এবং সিল জাল করার সরঞ্জামাদি জব্দ করা হয়।
র্যাব জানায়, পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিলেই প্রতারক চক্রটি ওই চাকরি কেন্দ্রীক প্রতিষ্ঠানের আশেপাশে চাকরি প্রত্যাশীদের খুঁজতে থাকে। চাকরি প্রত্যাশীদের খুঁজে পেলে তাদের কাছে নানান কৌশলে টাকার বিনিময়ে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিত চক্রটি। আর চাকরি প্রত্যাশীরাও লোভে পড়ে চক্রটির হাতে তুলে দিত লাখ লাখ টাকা। এভাবেই গত ৮ বছর ধরে প্রায় ১৬০ জন চাকরি প্রত্যাশির কাছ থেকে চক্রটি হাতিয়ে নেয় প্রায় ৮ কোটি টাকা।
র্যাব-৪ এর অধিনায়ক মঞ্জুরুল কবির বলেন, ‘এ চক্রটি পাঁচটি কৌশল অবলম্বন করে প্রতারণার কাজ করত। তারা প্রথমে সরকারের বিভিন্ন বিজ্ঞাপন- সেনাবাহিনী, রেলওয়ে, ব্যাংক ও ভূমিসহ বিভিন্ন সংস্থার বিজ্ঞাপন দেখে চাকরি প্রত্যাশীদের অনুসন্ধান করে। পরে তাদেরকে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার নামে প্রথমে সিভি কিংবা বায়োডাটা সংগ্রহ করে। এরপর তাদের ব্যবস্থাপনা টিমের সদস্যরা চাকরি প্রত্যাশীদের বিভিন্ন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার কথা বলে ভুয়া কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিত। এসময় ভুয়া কর্মকর্তারা চাকরি প্রত্যাশীদের কাগজপত্র লোক দেখানো যাচাইবাছাই করে চাকরির জন্য মোটা অংকের টাকার লিখিত কিংবা মৌখিক চুক্তি করে।’
র্যাব-৪ এর অধিনায়ক আরও বলেন, ‘চুক্তিতে রাজি হলে তাদেরকে পরবর্তীতে ভাইভার জন্য ডাকা হয়। আর ভাইভাতে সুকৌশলে তাদেরকে পাশ করিয়ে দেওয়া হবে মর্মে নিশ্চিত করে আরও বিশ্বস্ততা অর্জন করে তারা। পরে চাকরি প্রত্যাশীদের জানানো হতো চাকরির জন্য মেডিকেল সার্টিফিকেট প্রয়োজন। সেটিও তারা করে নিত। এরপর সব কৌশল শেষে চাকরি প্রত্যাশীদের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য ডাকা হতো। উচ্চপর্যায়ের সদস্যরা নিজেদের সুবিধা অনুযায়ী কখনও কর্নেল, কখনও মেয়র আবার কখনও সহকারী পরিচালক পরিচয় দিয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলত। কথার এক পর্যায়ে নিয়োগপত্র দিয়ে তাদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়ে কেটে পড়ত। পরবর্তীতে তাদের আর কোনো খোঁজ-খবর পাওয়া যেত না।’
মঞ্জুরুল কবির আরও বলেন, ‘এভাবেই চক্রটি প্রতারণা করত। তারা জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত ১৫০/৬০ লোকের সঙ্গে তারা প্রতারণা করেছে। গত আট বছর ধরে এ প্রতারণা চালিয়ে আসছিল তারা। প্রতিজনের কাছ থেকে সর্বনিম্ন ৫ লাখ টাকা করে নেওয়া হয়েছে। কারও কারও কাছ থেকে ৭ থেকে ১২ লাখ টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নিয়েছে তারা।’
এসময় চক্রটির প্রতারণার শিকার চাকরি প্রত্যাশী দুজন বাদল ও সফর আলী সংবাদ সম্মেলনে জানান, তাদের সিএমএইচে চাকরি দেওয়ার নামে ১১ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে চক্রটি। টাকা নেওয়ার পর তারা চাকরির নিয়োগ দিয়েছিল। কিন্তু চাকরিতে যোগ দিতে গিয়ে দেখেন সেটি ভুয়া। পরে তারা র্যাবকে বিষয়টি অবহিত করেন।
সারাবাংলা/এসএইচ/জেএএম