‘পুলিশের দেখানো ছবি থেকে চিনতে পারি জঙ্গিরা আমার বাসায় থাকতো’
১৭ এপ্রিল ২০১৯ ১৯:২৭
ঢাকা: মিডিয়া প্রকাশিত এবং পুলিশের দেখানো ছবি থেকে চিনতে পারি আমার বাসায় যারা ভাড়া থাকতো তারা আসল নাম ঠিকানা ব্যবহার না করে আমার বাসা ভাড়া নিয়েছিল। তারা আসলে জঙ্গি ছিল বলে আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে জানিয়েছেন মিরপুরের মধ্য পাইকপাড়া এলাকার বাড়ির মালিক আনোয়ারুল আজিম।
বুধবার (১৯ এপ্রিল) দুপুরে ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মজিবুর রহমানের আদালতে তার জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়।
আনোয়ারুল আজিম আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে আরও বলেন, ‘২০১৬ সালের ১ জানুয়ারি হাসানসহ পাঁচজন থাকবে জানিয়ে আমার মিরপুর মধ্য পাইকপাড়ার বাসা ভাড়া নেয়। বাসায় ওঠার সময় তাদের তেমন কোনো জিনিস পত্র ছিল না। তারা সবাই ফ্লোরে থাকতো। মাঝে মধ্যে যুবক বয়সের কিছু লোকজন তাদের কাছে আসতো এবং অনেক সময় ধরে থাকার পর চলে যেত। ওই লোকগুলো সম্পর্কে হাসানকে জিজ্ঞাসা করলে সে জানাই, তারা তাদের সঙ্গে লেখাপড়া করে। আবার কখনো বলতো আত্মীয়। এভাবে তারা প্রায় পাঁচমাস ভাড়া থেকে বাসা ছেড়ে দেয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘এর কিছুদিন পর জঙ্গিরা গুলশান হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা চালাই। এ জঙ্গি হামলায় দেশি-বিদেশি অনেক লোক নিহত হন। পাঁচজন জঙ্গিও সেনাবাহিনীর অভিযানে নিহত হয়। মিডিয়া এবং পুলিশের দেখানো ছবি দেখে চিনতে পারি আমার বাসায় যারা ভাড়া থাকতো। যারা আসা যাওয়া করতো তাদের মধ্যে ওই মৃত জঙ্গিরা কেউ কেউ ছিল। পরে পুলিশের মাধ্যমে জানতে পারি, জঙ্গিরা আমার বাসায় চতুর্থ তলায় ভাড়া থেকে জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ দিত। জঙ্গিরা ছদ্মনাম ব্যবহার করে আমার বাসায় ভাড়া উঠেছিল। হাসানের প্রকৃত নাম রাকিবুল হাসান রিগ্যান বলেও জানতে পারি।’
বুধবার সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালের বিচারক তিনজন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ করে। তাদের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আদালত আগামী ২৪ এপ্রিল পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করেন।
সাক্ষীরা হলেন, জাহাজ বাড়ির মালিক মমতাজ পারভীন, রীনা সুলতানা ও আনোয়ারুল আজিম। আনোয়ারুল আজিম রীনা সুলতানের বাসায়ও জঙ্গিরা ভাড়া থাকতো।
জাহাজ বাড়ির মালিক মমতাজ পারভীন বলেন, ‘২০১৬ সালের ২৫ জুলাই রাত ১২টার পর আমার বাসার পঞ্চম তলায় পুলিশ অভিযান চালায়। পঞ্চম তলায় বিভিন্ন ভার্সিটির ছেলেরা থাকতো। আমি শুনেছি ওই অভিযানে ১১ জন ছাত্র মারা গেছে। এরপর পুলিশ একদিন আমার বাসায় এসে আমাকে জিজ্ঞাসা করে, এ বাড়ির বাড়িওয়ালা কেউ আছেন। তখন আমি দরজার এক পাল্লা খুলে বলি, আমিই বাড়িওয়ালা। তখন আমি অসুস্থ ছিলাম। পুলিশ আমাকে বলে, আপনাকে কিছু জিজ্ঞাসা করবো। পরের আমাকে থানায় নিয়ে যায়। পুলিশ বলে আপনাকে জিজ্ঞাসা করে ছেড়ে দেবো। পরে আমাকে চার থেকে সাড়ে চার মাস জেলে আটকিয়ে রাখে।’
এ মামলায় এখন পর্যন্ত ৩১ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, মামলাটিতে ২০১৮ সালের ২৬ নভেম্বর আট আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত।
পরে গত ২০১৮ সালের ২৯ আগস্ট পলাতক আসামি মো. শরিফুল ইসলাম ও মামুনুর রশিদের সম্পত্তি ক্রোক এবং তাদের বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করে আদালত।
আসামিরা হলেন, অস্ত্র ও বিস্ফোরক সরবরাহকারী নব্য জেএমবি নেতা হাদিসুর রহমান সাগর, বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডার নাগরিক তামিম চৌধুরীর সহযোগী আসলাম হোসেন ওরফে রাশেদ ওরফে আবু জাররা ওরফে র্যাশ, নব্য জেএমবির অস্ত্র ও বিস্ফোরক শাখার প্রধান মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজান, জঙ্গি রাকিবুল হাসান রিগ্যান, জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব ওরফে রাজীব গান্ধী, হামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারী আব্দুস সবুর খান (হাসান) ওরফে সোহেল মাহফুজ, মামুনুর রশিদ ও শরিফুল ইসলাম।
সারাবাংলা/এআই/এমআই