Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বাইরে বন্ধের নোটিশ, ভেতরে চলছে কোচিং


১৮ এপ্রিল ২০১৯ ২০:৩২

ঢাকা: উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে কোচিং সেন্টার বন্ধের নির্দেশনা দেওয়া হলেও তা মানছে না ঢাকার বেশিরভাগ কোচিং সেন্টার।  সরকারি নির্দেশ অমান্য করে এইচএসসি পরীক্ষার সময়েও অনেক কোচিং সেন্টার তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।  তবে এজন্য তারা আশ্রয় নিচ্ছে বিভিন্ন ধরনের কৌশলের।

মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) ও বুধবার (১৭ এপ্রিল) ঢাকার বিভিন্ন কোচিং সেন্টারে গিয়ে দেখা গেছে, সব কোচিং সেন্টারের সামনেই টাঙানো বন্ধের নোটিশ। তবে ভেতরে ঠিকই ক্লাস নিচ্ছেন কোচিং শিক্ষকরা। কোথাও কোথাও কোচিং বন্ধ করে কিন্ডার গার্টেন চালু রাখার নামে নেওয়া হচ্ছে ক্লাস। বেশিরভাগ কোচিং সেন্টারেই নবম-দশম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের পড়ানো হচ্ছে। এসব কোচিং সেন্টারের শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, উচ্চ মাধ্যমিকের কোচিং বন্ধ থাকলেও দশম শ্রেণি পর্যন্ত সব শ্রেণির কোচিংই চালু রেখেছেন তারা।

বিজ্ঞাপন

সরেজমিনে রাজধানীর এজিবি কলোনির হাসপাতাল জোন এলাকার সেফ কোচিং সেন্টারে গিয়ে দেখা যায়, কিন্ডার গার্টেনের আড়ালে কোচিং সেন্টার চালু রেখেছেন তারা। প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, একদিনের জন্যও সরকারি নির্দেশনা মানেনি কোচিং সেন্টারটি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সেফ কোচিং সেন্টারের শিক্ষক সজল সারাবাংলাকে বলেন, ‘শুরুতে আমরা কোচিং সেন্টার বন্ধ রেখেছিলাম। কিন্তু পরে দেখেছি আমাদের শিক্ষার্থীরা অন্যান্য কোচিংয়ে চলে যাচ্ছে। মানে অন্যরা ঠিকই কোচিং চালু রেখেছে। ফলে আমাদের ব্যবসায়িক ক্ষতির দিকটি বিবেচনা করে কোচিং চালু করতে বাধ্য হয়েছি। আমাদের তো কিছু করার নেই। তবে আমরা উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের পড়াচ্ছি না।’

বিজ্ঞাপন

এ বিষয়ে যোগাযোগ করলেও সেফ কোচিংয়ের স্বত্বাধিকারী শাহাদাত ঢালীর কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

ওই কোচিংয়ে অবস্থানের সময় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের অনেকেই এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমরা অনুরোধ করে কোচিং চালু রেখেছি। সামনে অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা, এখন কোচিং না করলে ফল খারাপ হবে। আমরা নিরুপায়।’উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের জন্য ছোটদের কেন ভুক্তভোগী হতে হবে বলেও প্রশ্নও রাখেন তারা।

মতিঝিলের আরেকটি পরিচিত কোচিং সেন্টার প্রতিভা।  শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ না মেনে অনেকটা প্রকাশ্যেই কোচিং কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে তারা।

জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির কোষাধ্যক্ষ সোহরাব হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘কোচিং চালু রাখার জন্য অভিভাবকদের চাপ রয়েছে। এছাড়া স্কুলের শিক্ষকরা ঠিকই ছাত্রদের কোচিং করাচ্ছেন। ফলে আমাদের ছাত্ররা তাদের কাছে চলে যাচ্ছে। স্কুলের শিক্ষকরা যদি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা না মানেন, আমাদের কী করার আছে? আমরা তো আর স্কুলে পড়াই না।’

খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, মতিঝিল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অনেক শিক্ষকই কোচিং কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। ব্যক্তিগতভাবে তাদের অনেকের কাছেই পড়ছেন শিক্ষার্থীরা। অনেকে আবার বাসা ভাড়া করে ব্যাচে পড়াচ্ছেন শিক্ষার্থীদের।

এ বিষয়ে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক বলেন, ‘কোচিং শিক্ষক হিসেবে যাদের জনপ্রিয়তা রয়েছে তারা কেউ কোচিং বন্ধ করেননি। একটু খোঁজ নিলেই তাদের ব্যাপারে জানা যাবে। তাদের অনেকে অতীতে প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গেও হয়তো জড়িত ছিলেন। কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয় তাদের কার্যক্রম সম্পর্কে একেবারেই উদাসীন। আমরা চাই, মন্ত্রণালয় তাদের বিষয়টি খতিয়ে দেখুক।’

মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ না মেনে কৌশলে কোচিং চালু রাখার বিষয়ে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, ‘প্রাথমিক পর্যন্ত যেসব কোচিং রয়েছে, সেগুলো আমরা এমনিতেও শিথিল রেখেছি। কিন্তু সেটি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের জন্য কোনোভাবেই প্রযোজ্য নয়। আর কোনো স্কুল বা কলেজ শিক্ষক যদি কোচিংয়ে যুক্ত থাকেন, তাহলে আমরা অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেব। এটা অন্যায়। আমরা খোঁজ নিয়ে দেখছি।’

প্রসঙ্গত, উচ্চ মাধ্যমিক (এইচএসসি) ও সমমান পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে এপ্রিলের ১ তারিখ থেকে মে মাসের ৬ তারিখ পর্যন্ত দেশের সব কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

সারাবাংলা/টিএস/টিআর/এমএনএইচ

কোচিং সেন্টার

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর