মুয়েলার প্রতিবেদনে যা আছে
১৯ এপ্রিল ২০১৯ ১০:৫১
২০১৬ সালের মার্কিন নির্বাচনে রুশ হস্তক্ষেপের অভিযোগ নিয়ে স্পেশাল কাউন্সেল রবার্ট মুয়েলারের চূড়ান্ত প্রতিবেদনে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একটি মিশ্র রূপ প্রতিফলিত হয়েছে- সন্দেহজনক ও নির্দোষ। রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট উভয় দলই প্রতিবেদনটি তাদের নিজের মতো করে বিতর্কে ব্যবহার করছে।
সম্প্রতি মুয়েলার ও তার দলের পুরো প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে। ৪৪৮ পৃষ্ঠার ওই প্রতিবেদন অনুসারে, ২০১৬ সালের নির্বাচনে রুশদের সঙ্গে কোনো আঁতাত ছিল না ট্রাম্প শিবিরের। কিন্তু ট্রাম্প এই অভিযোগে সংঘটিত তদন্ত প্রক্রিয়ায় বাধাগ্রস্থ করতে চেষ্টা চালিয়েছেন। যদিও তার চেষ্টাগুলো সফল হয়নি।
পূর্ণ প্রতিবেদনটিতে বেশকিছু নতুন তথ্য পাওয়া গেছে যেগুলো পূর্বের সংক্ষিপ্ত প্রতিবেদনে পাওয়া যায়নি। সেগুলো নিচে তুলে ধরা হলো:
প্রেসিডেন্ট হিসেবে আমার সময় ফুরিয়ে আসছে
প্রতিবেদন অনুসারে, ২০১৭ সালে মুয়েলারের নিয়োগের খবরে ভীত হয়ে ওঠেছিলেন ট্রাম্প। আতঙ্কিত হয়ে তৎকালীন সময়ের অ্যাটর্নি জেনারেল জেফ সেশন্সকে বলেছিলেন, ওহ ঈশ্বর! এটা ভয়াবহ। প্রেসিডেন্ট হিসেবে আমার সময় ফুরিয়ে আসছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট আরও বলেছিলেন, সবাই আমায় বলেছে, এরকম স্বতন্ত্র কাউন্সেলদের পাল্লায় পড়লে তা প্রেসিডেন্টের ভাবমূর্তি নষ্ট করে। তাদের তদন্ত বছরের পর বছর ঘুরতে থাকবে আর আমি কিছুই করতে পারবো না।
মুয়েলারকে সরাতে হবে
২০১৭ সালে মুয়েলারকে বরখাস্ত করতে চেয়েছিলেন ট্রাম্প। সাবেক হোয়াইট হাউজ কাউন্সেল ডোনাল্ড ম্যাকগাহনকে ডেকে এ বিষয়ে নির্দেশনাও দিয়েছিলেন তিনি।
ট্রাম্প ম্যাকগাহনকে বলেছিলেন, রডকে (ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল রড রজেনস্টাইন) ফোন দাও। তাকে বল যে এ বিষয়ে মুয়েলারের স্বার্থের সংঘাত রয়েছে। সে স্পেশাল কাউন্সেলের দায়িত্ব পালন করতে পারবে না। তাকে সরাতে হবে। এই কাজ শেষ করে আমায় ফোন দিও।
কিন্তু ট্রাম্পের অনুরোধ রাখেননি ম্যাকগাহন। উল্টো এমন অনুরোধ শুনে পদত্যাগ করতে চেয়েছিলেন তিনি।
রুশ আঁতাত ছিল না
মুয়েলারের প্রতিবেদন অনুসারে, ট্রাম্প শিবিরের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে রুশ কর্মকর্তাদের বেশ কয়েকবার যোগাযোগ হয়েছিল। ট্রাম্প শিবির কর্মকর্তারা ভেবেছিল, রুশদের সহায়তায় ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের সম্পর্কে তথ্যচুরি করে প্রকাশ করতে পারলে সেটা তাদের জন্য সুবিধাজনক হবে। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের জন্য পর্যাপ্ত অপরাধের প্রমাণ পাননি মুয়েলার ও তার দল।
তদন্ত প্রক্রিয়ায় বাধা
রুশ হস্তক্ষেপ তদন্ত প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টির ব্যাপারে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে নিশ্চিত প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে তিনি বিচার প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি করেননি- সেটাও নিশ্চিতভাবে উল্লেখ করা হয়নি প্রতিবেদন। প্রতিবেদন অনুসারে, তদন্তে পাওয়া তথ্য যাচাই করলে প্রেসিডেন্টের আচরণ ও উদ্দেশ্য বিবেচনায় এটা বলা কঠিন যে, তিনি কোনো অপরাধ ঢাকার চেষ্টা করেননি।
নির্দেশ প্রত্যাখ্যান
এদিকে, প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টির ক্ষেত্রে কোনো প্রমাণ না পাওয়া যাওয়ার একমাত্র কারণ হচ্ছে, প্রেসিডেন্টের প্রশাসনিক কর্মকর্তারা তার নির্দেশ পালনে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। এসব কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছেন, সাবেক এফবিআই পরিচালক জেমস কমি, সাবেক হোয়াইট হাউজ কাউন্সেল ডন ম্যাকগাহন ও সাবেক প্রচারণা শিবির ব্যবস্থাপক কোরি লিওয়ান্ডোওস্কি।
অপর্যাপ্ত লিখিত উত্তর
গত বছরের জানুয়ারিতে মুয়েলারকে সাক্ষাৎকার দিতে রাজি হন ট্রাম্প। এ বিষয়ে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়। কিন্তু এরপর এক বছরেরও বেশি সময় কেটে গেলেও তিনি ওই সাক্ষাৎকারের জন্য রাজি হননি। তার বদলে মুয়েলারের তৈরি করা প্রশ্নের লিখিত উত্তর দিতে রাজি হয়েছিলেন। এর মধ্যে তিনি কেবল রুশ আঁতাত সংক্রান্ত প্রশ্নগুলোর উত্তর দিয়েছেন। কিন্তু তদন্ত প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টির প্রয়াস সম্পর্কিত প্রশ্নগুলোর উত্তর দেননি। (বিবিসি অবলম্বনে)
সারাবাংলা/আরএ