Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘জিডিপি প্রবৃদ্ধির অনুপাতে কর্মসংস্থান বাড়ছে না’


২১ এপ্রিল ২০১৯ ১৯:১৮

ঢাকা: মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি যেভাবে বাড়ছে, দেশে কর্মসংস্থান ওইভাবে বাড়ছে না। প্রতিবছর দেশে নতুন করে ২২ লাখ লোক কর্মসংস্থানের জন্য তৈরি হচ্ছে। কিন্তু সে অনুপাতে কর্মসংস্থান তৈরি হচ্ছে না। বরং দিনদিন কর্মসংস্থানের প্রবৃদ্ধি কমছে। একসময় কর্মসংস্থানের প্রবৃদ্ধি তিন শতাংশ হলেও বর্তমানে তা কমে ১ শতাংশে নেমে এসেছে। ফলে আগামীতে কর্মসংস্থান সহায়ক প্রবৃদ্ধিতে জোর দিতে হবে।

বিজ্ঞাপন

রোববার (২১ এপ্রিল) রাজধানীর পুরানা পল্টনে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) ও বিশ্বব্যাংক গ্রুপের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশন (আইএফসি) আয়োজিত এক কর্মশালায় বক্তারা এসব কথা বলেন।

‘ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন অ্যান্ড বাংলাদেশ’ শীর্ষক কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন ইআরএফ সভাপতি সাইফ ইসলাম দিলাল। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক এসএম রাশিদুল ইসলামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন আইএফসির সিনিয়র ইকোনমিস্ট ড. মাসরুর রিয়াজ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য খোন্দকার মোহাম্মদ আমিনুর রহমান, ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি আবুল কাশেম, বিশ্বব্যাংকের বেসরকারিখাত বিশেষজ্ঞ নুসরাত নাহিদ বাবি, ইউকে এইডের প্রাইভেট সেক্টর ডেভেলপমেন্ট অ্যাডভাইজর মুশফিক ইবনে আকবর। কর্মশালায় ইআরএফের ৮০ জন সদস্য অংশ নেন।

ড. মাসরুর রিয়াজ বলেন, বর্তমানে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্টের (জনসংখ্যার বোনাস) মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। প্রতিবছর বাংলাদেশে ২০ লাখ মানুষ শ্রমবাজারে আসছে। কিন্তু ওইভাবে কর্মসংস্থান বাড়ছে না। একসময় বাংলাদেশে কর্মসংস্থানের প্রবৃদ্ধি ৩ শতাংশ হলে বর্তমানে তা ১ শতাংশে নেমে এসেছে। তাই কর্মসংস্থান তৈরি হয়— এ ধরনের শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার উদ্যোগ নিতে হবে।

আইএফসির এই সিনিয়র অর্থনীতিবিদ বলেন, কর্মসংস্থান বাড়াতে না পারলে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ট দায় হয়ে দাঁড়াবে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আমাদের প্রতিযোগী দেশগুলো আরও বেশি গতিতে আগাচ্ছে।

তিনি বলেন, একটি বিষয়ে লক্ষণীয়, বাংলাদেশে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আছে, সেগুলো ধরেও রাখতে পেরেছে বাংলাদেশ। কিন্তু নতুন বিনিয়োগ বাড়ছে না। প্রতিবছর ১ থেকে ২ বিলিয়ন ডলার সরারসি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) আসছে। কিন্তু এর অধিকাংশই পুনঃবিনিয়োগ। নতুন বিনিয়োগ আসছে না। রফতানি বেড়েছে, কিন্তু বাংলাদেশের মতো জনসংখ্যার দেশে আরও বৃদ্ধি জরুরি।

বিজ্ঞাপন

খোন্দকার মোহাম্মদ আমিনুর রহমান বলেন, বাংলাদেশে ব্যবসা সহজ করতে কাজ করছে সরকার। কাস্টমস থেকে কত সহজে পণ্য খালাস করা যায়, সে ব্যাপারে চেষ্টা চলছে। আমাদের প্রত্যাশা দ্রুতই এ কাজে সফলতা আসবে।

তিনি বলেন, আমদানি-রফতানির সময় কমিয়ে আনতে ৩৯টি প্রতিষ্ঠানকে একই ছাতার নিচে নিয়ে আসার জন্য কাজ করছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

আবুল কাশেম বলেন, সহজে ব্যবসা করার সূচকে অনেক পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। বিশ্বব্যাংকের ইজ অব ডুইং বিজনেস রিপোর্টে ১৯০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৭৬। কিন্ত ২০০৫-২০০৬ সালে ছিল ৬৫তম। বাংলাদেশ এই পিছিয়ে পড়ার কারণ হলো— আমাদের প্রতিযোগী দেশগুলো দ্রুত গতিতে সামনে এগিয়েছে।

তিনি বলেন, জিডিপি  প্রবৃদ্ধিসহ সবকিছুতেই বাংলাদেশের অগ্রগতি হচ্ছে। এরপরও মনে হচ্ছে, বাংলাদেশের আরও আগানো দরকার। কারণ আমাদের প্রতিযোগীরা বেশি গতিতে আগাচ্ছে।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, আশপাশের দেশগুলোর মধ্যে বন্দরের জটিলতায় সবচেয়ে পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। বিশেষ করে বাংলাদেশে আমদানি করা পণ্য কাস্টমসে খালাস করতে ৩৬০ ঘটনা সময় লাগে। আর রফতানি করা পণ্য জাহাজীকরণে সময় লাগে ৩১৫ ঘণ্টা। কিন্তু দক্ষিণ কোরিয়াতে আমদানি পণ্য ৭ ঘণ্টা এবং রফতানি পণ্য জাহাজীকরণে মাত্র ১৪ ঘণ্টা সময় লাগে। ভিয়েতনামে আমদানি ১৩২ এবং রফতানিতে ১০৫ ঘণ্টা সময় লাগে।

বক্তারা বলেন, পণ্য আমদানি-রফতানির অনুমোদনে মোট ৩৯টি সংস্থা রয়েছে। প্রতিটি আমদানি রফতানিতে গড়ে সাত থেকে আটটি সংস্থার অনুমোদন লাগে। এগুলো প্রক্রিয়া দীর্ঘ। ফলে বন্দরে অনেক বেশি সময় লাগে।

সাইফ ইসলাম দিলাল বলেন, সদস্যদের দক্ষতা বাড়াতে ইআরএফের এই ধরনের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। এ সময়ে কর্মশালায় সহায়তায় করায় আইএফসি এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে ধন্যবাদ জানান তিনি।

রাশিদুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ মোট অর্থনীতির বড় অংশই বিশ্ব বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত। এই বিষয়কে বিবেচনায় নিয়ে কর্মশালার বিষয়বস্তু নির্ধারণ করা হয়।

সারাবাংলা/জিএস/টিআর

ইআরএফ কর্মসংস্থান জিডিপি বিশ্বব্যাংক গ্রুপ বেকার সমস্যা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর