‘মাহফুজউল্লাহ’র হৃদস্পন্দন থামেনি, তবে আশা নেই’
২১ এপ্রিল ২০১৯ ২০:১০
ঢাকা: বিশিষ্ট সাংবাদিক ও লেখক মাহফুজউল্লাহ’র হৃদস্পন্দন এখনও না থামলেও তার বেঁচে থাকারও কোনো আশা নেই বলে জানিয়েছেন ব্যাংককে অবস্থানরত তার পরিবারের সদস্যরা। সেখানেই বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে রয়েছেন মাহফুজউল্লাহ। যদিও এর আগে তার এক মেয়ে অঙ্গনা সারাবাংলাকে জানিয়েছিলেন, তার বাবার মৃত্যু হয়েছে।
সারাবাংলার একজন প্রতিনিধিকে মাহফুজউল্লাহ’র পরিবারের দুই সদস্য জানান, এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তার লাইফ সাপোর্ট খুলে নেওয়া হয়নি। তারা মাহফুজউল্লাহ’র পাশেই রয়েছেন।
মাহফুজউল্লাহ’র পরিবারের একজন সদস্য সারাবাংলাকে বলেন, শনিবার (২০ এপ্রিল) রাতে লাইফ সাপোর্টে রাখা অবস্থাতেই একটি জরুরি ওষুধ দেওয়া হয়েছিল। ২১ এপ্রিল বিকেলে তা শেষ হয়ে যায়। তবে এই ওষুধে মাহফুজউল্লাহ’র শরীর সাড়া দেয়নি। সে কারণে ওই ওষুধটি আর না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় তার পরিবার। তবে শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য একটি ভেন্টিলেশন এখনও মাহফুজউল্লাহ’র শরীরে যুক্ত রয়েছে, যার মাধ্যমে তার হৃদস্পন্দন চলছে। তবে তার জীবনের আশা নেই।
এদিকে, বিএনপিপন্থী এই সাংবাদিকের মৃত্যুখবর নিশ্চিত করেছিলেন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) নেতা ডা. এ জেড এম জাহিদ। তিনি একাধিক সংবাদমাধ্যমকে জানান, ব্যাংককের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে মাহফুজউল্লাহ’র লাইফ সাপোর্ট খুলে নিয়ে চিকিৎসকরা রোববার (২১ এপ্রিল) বিকেল ৩টা ১০ মিনিটে তাকে মৃত ঘোষণা করেছেন। বিভিন্ন গণমাধ্যমে এ সংবাদ প্রকাশিত হয়। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিভিন্ন দল ও সংগঠন থেকে সংবাদমাধ্যমে শোক বার্তাও পাঠানো হয়।
মাহফুজউল্লাহ দীর্ঘদিন ধরে কিডনি ও উচ্চ রক্তচাপজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন। গত ২ এপ্রিল অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রেখে চিকিৎসা দেওয়া হয় তাকে। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ১০ এপ্রিল দিবাগত রাত ১২টার দিকে তাকে নিয়ে ব্যাংককের পথে রওনা দেয় পরিবার। পরদিন তাকে বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
১৯৫০ সালের ১০ মার্চ নোয়াখালীতে জন্মগ্রহণ করেন মাহফুজউল্লাহ। ছাত্রজীবনে বাম রাজনীতি করেছেন, ষাটের দশকে ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতিও ছিলেন। অংশ নিয়েছেন ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে। চীনে বিশেষজ্ঞ হিসেবে এবং কলকাতায় বাংলাদেশ উপদূতাবাসেও কাজ করেছেন তিনি। খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন। পরে ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতা ও গণযোগাযোগ বিভাগে শিক্ষকতায় নিয়োজিত ছিলেন।
ছাত্রজীবন থেকেই সাংবাদিকতায় যুক্ত হন মাহফুজউল্লাহ। সাপ্তাহিক বিচিত্রার জন্মলগ্ন থেকেই যুক্ত ছিলেন তিনি। পরে বিভিন্ন সময়ে দেশের নেতৃত্বস্থানীয় বাংলা ও ইংরেজি দৈনিকে কাজ করেছেন তিনি। দেশে পরিবেশ বিষয়ক সাংবাদিকতার পথিকৃৎ তিনি।
সাংবাদিকতার বাইরে লেখক হিসেবেও সুপরিচিত মাহফুজউল্লাহ। তার রচিত গ্রন্থের সংখ্যা পঞ্চাশের বেশি। ইতিহাস নিয়ে তার লেখা বইগুলোর অন্যতম ‘অভ্যুত্থানের ঊনসত্তর’ ও ‘পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন: গৌরবের দিনলিপি (১৯৫২-৭১)’। সর্বশেষ লিখেছেন ‘Begum Khaleda Zia: Her Life, Her Story’। এর আগে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের জীবনীগ্রন্থও লিখেছেন তিনি, বইটির নাম ‘President Zia of Bangladesh: A political Biography’।
ছাত্র জীবনে বাম রাজনীতি করলেও সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহ বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের থিংকট্যাংকের অন্যতম হিসেবে পরিচিত ছিলেন।
সারাবাংলা/এমএম/টিআর