‘সিগারেটের পাশাপাশি জর্দা-গুলেও ট্যাক্স বাড়ানো হবে’
২২ এপ্রিল ২০১৯ ১১:৪৫
ঢাকা: ভ্যাট বা মূল্য সংযোজন কর-এর নতুন আইন বাস্তবায়ন নিয়ে নানামুখী চ্যালেঞ্জে পড়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। ভ্যাটের সর্বোচ্চ হার ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করার জন্য কয়েকবার বলেছেন অর্থমন্ত্রী। যার ফলে উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এনবিআরের রাজস্ব আহরণের সক্ষমতা নিয়ে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে সারাবাংলাকে জানিয়েছেন এসব বিষয়ে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সারাবাংলার স্টাফ করেসপন্ডেন্ট শেখ জাহিদুজ্জামান।
শেখ জাহিদুজ্জামান: সিগারেটের ট্যাক্স বাড়ানো কথা বললেও জর্দা বা তামাকের ট্যাক্স কেন বাড়ছে না?
মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া: সিগারেটের পাশাপাশি এবার জর্দা, তামাক ও গুলের ওপরও ট্যাক্স বাড়ানো হবে। তবে সফল কতটুকু হবো সেটা পরে দেখা যাবে। এসব কোম্পানিগুলোকে বেশি করে ধরা হবে যেন আগামী বছর থেকে এদের কাছ থেকে বেশি রাজস্ব আদায় সম্ভব হয়।
শেখ জাহিদুজ্জামান: ভ্যাট আইন নিয়ে আপনার অভিমত কি?
মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া: প্রথমত এবার আমরা ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন করবো। সেজন্য যা যা করা দরকার সেটা আমরা করছি। ভ্যাটের কয়েকটি রেট করে দেবো। ১৫ শতাংশ ভ্যাটে যারা থাকবে তারা রেয়াত পাবে। আমদানি ক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ দিতে হবে, ভোক্তাদের জন্য যেটা নির্ধারণ করা হবে তারা সেটা দেবে। আর রেয়াত পেলে সুবিধা হচ্ছে ব্যবসায়ীদের ওপর চাপ কমবে। এছাড়া ১৫ শতাংশ যেটা আছে সেটা যদি আমরা ১০ শতাংশ করে দেই। আর তারা যদি রেয়াত না পাই তাহলে ১০ শতাংশ পুরোপুরি কিন্তু কনজ্যুমারদের ওপর চলে যায়। সেজন্য দাম বাড়ে। সে কারণে বড় ব্যবসায়ীরা আগ্রহী হয়েছেন। আর ছোট ব্যবসায়ীদের ওপর ভ্যাট কমিয়ে দেবো। তবে আমরা নিশ্চিত হতে চাই তারা ভ্যাট দেবে।
ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের ফলে ভ্যাটের পরিমাণ যদি বাড়ে। আর তখন কে কত ভ্যাট দিচ্ছে সেটা মেশিনের মাধ্যমে জানতে পারবো। ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের সঙ্গে সঙ্গে ট্যাক্সের পরিমাণ নিরুপণ করতে সুবিধা হবে।
শেখ জাহিদুজ্জামান: ভ্যাট আইন বাস্তবায়নে এনবিআর কতটুকু প্রস্তুত?
মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া: বাজেটের সঙ্গেই ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের নির্দেশনা সকল কমিশনারেটগুলোতে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। কমিশনারদের সঙ্গে নিয়মিত কথা হচ্ছে। প্রত্যেকেই জানে ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন হবে এবং কোনভাবে, কীভাবে বাস্তবায়ন হবে সেটাও সবার জানা। আমাদের যথেষ্ট প্রস্তুতি রয়েছে। এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা।
শেখ জাহিদুজ্জামান: বাজেট বাড়লেই রাজস্ব আহরণ বাড়ে, সেক্ষেত্রে এনবিআরের সক্ষমতা বাড়ছে কি-না?
মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া: প্রতিবছর বাজেটে রাজস্ব আহরণ যেহেতু বাড়ে। রাজস্ব আহরণও উল্লেখযোগ্য একটি পরিমাণে থাকবে। আমরা এ বছর যেমন চেষ্টায়, আছি যাতে রাজস্ব আহরণ ফুলফিল হয়। আগামীতেও যেন রাজস্ব আহরণ বাড়ে সেজন্য বিজনেস অ্যাকটিভিটি চালিয়ে যাচ্ছে। আর বিজনেস একটিভিটি বাড়লেই ভ্যাট-ট্যাক্স বাড়ে। একই সঙ্গে ভ্যাটে যেন ফাঁকি না দেয় সেদিকে লক্ষ্য রাখব।
আমরা অটোমেশনের দিকে যাচ্ছি। অটোমেশন জোরদার করতে হলে সবচেয়ে বেশি যেটা দরকার সেটা হলো মেশিনের ব্যবহার। মেশিন ক্রয়ের জন্য ইতোমধ্যে টেন্ডার দিয়েছি। খুব দ্রুতই টেন্ডার শেষ হবে। প্রত্যেকটি শুল্ক স্টেশনে স্ক্যানিং মেশিং থাকবে। স্বয়ংক্রিয় স্ক্যানার আছে তবে আরও পরিমাণ বাড়াতে হবে। যার ফলে ফাঁকি রোধ করা সম্ভব হবে। আর ফাঁকি রোধ করা সম্ভব হলে আমাদের রাজস্ব আহরণ বাড়বে। তবে জনবলের সংকটের কারণে রাজস্ব আহরণ চাইলেই বেশি আহরণ করা সম্ভব হয় না। তবে আমাদের সক্ষমতা রয়েছে।
শেখ জাহিদুজ্জামান: কেমন হতে যাচ্ছে এবারের বাজেট?
মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া: এবারের বাজেট হবে স্বয়ংসম্পূর্ণ। বাজেটে সবসময় আমরা সুষম বাজেট দেওয়ার চেষ্টা করি। সবসময় আবার সবার সব দাবি মেনে নেওয়াটাও সম্ভব হয় না। আমরা বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের কথা শুনি এরপর বাজেট বাস্তবায়নের চেষ্টা করি। ভ্যাট, কাস্টমস, ইনক্যাম ট্যাক্স ধার্য করার ক্ষেত্রে আমরা এবছর থেকে চেষ্টা করব যেন দীর্ঘমেয়াদী কিছু করা যায়। সেটা হলে ব্যবসায়ীদের জন্য সুবিধা হবে।
শেখ জাহিদুজ্জামান: প্রত্যক্ষ করের চেয়ে পরোক্ষ কর বেড়ে যাচ্ছে এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেবেন কি-না?
মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া: প্রত্যক্ষ কর তথা ১৬-২০ লাখ মানুষ রিটার্ন জমা দেয়। আর প্রত্যক্ষ কর আমরা অনেকের কাছ থেকে কিন্তু পাই। যেমন আমদানি ক্ষেত্রেও আমরা প্রত্যক্ষ কর রাখি। ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকেও প্রত্যক্ষ কর পাই। এগুলো মিলিয়ে আমরা প্রত্যক্ষ কর বাড়ানোর চেষ্টায় আছি। আমরা নতুন করে কর জরিপ শুরু করেছি। কর জরিপের প্রক্রিয়াটাকে আমরা আরও জোরদার করার চেষ্টা করছি। বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমাদের যারা ট্যাক্স পেয়ার তাদেরকে আমরা সুবিধা দিচ্ছি। অর্থাৎ প্রচার-প্রচারণা কিন্তু লেগেই আছে। একই সঙ্গে ব্যবসায়ীদের সঙ্গেও আমাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বাড়িয়েই যাচ্ছি। গ্রাম অঞ্চলেও আমরা আস্তে আস্তে যাচ্ছি। আর যারা ট্যাক্সের আওতার বাইরে আছে তাদেরকে আমরা অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করছি। একই সঙ্গে মানুষকে সচেতনতা করা চেষ্টা করছি। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে আমাদের কাছে করদাতার সংখ্যা বাড়ছে কিন্ত অপ্রাতিষ্ঠানিবভাবে করদাতার সংখ্যা বাড়ছে না।
শেখ জাহিদুজ্জামান: ন্যূনতম করসীমা বাড়ার কারণে মধ্যবিত্তেরা চাপে পড়ে যাচ্ছে কি-না?
মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া: ন্যূনতম করসীমা বাড়ার কারণে মধ্যবিত্তরা চাপে পড়ছে না। যারা সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী বা প্রান্তিক পর্যায়ে রয়েছেন এরা ন্যূনতম করটাই দেন। ন্যূনতম কর যেটা ৫, ১০ বা ১৫ হাজার টাকা সেটা এখন সবাই মেনে নিয়েছে। তবে ন্যূনতম করসীমা বাড়ানো হবে কি-না সেটা এখনো বলা যাচ্ছে না। এই বিষয়টা নিয়ে বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা চলছে। এটা আগে থেকে কিছু বলার সুযোগ নেই।
শেখ জাহিদুজ্জামান: ক্যাবল টিভির ওপর এনবিআরের নজর কতটুকু?
মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া: আমাদের জনবল সংকটের কারণে গতবার আমরা এটাকে নজর দিতে পারিনি। তবে এবার আমরা আউটসোর্সিং করে ডিজিটালাইজেশন করে ফেলব। যেন তাদের কাছ থেকে আমরা নিয়মিত ভ্যাট ও ট্যাক্স পাই। কেন না তাদেরকে অনেকে বিজ্ঞাপন দেয় ফলে সেটা থেকে কোনো রাজস্ব আমরা পাই না। তাই এবার থেকে আমরা নজরদারিতে রাখবো।
সারাবাংলা/এসজে/এমআই