ডিবি পরিচয়ে বাস থামিয়ে চালককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ
২৩ এপ্রিল ২০১৯ ১৮:১১
চট্টগ্রাম ব্যুরো: পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সদস্য পরিচয়ে শ্যামলী পরিবহনের একটি গাড়ির চালককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। বাসটির সুপারভাইজারের দাবি, বেধড়ক পেটানোর কারণেই জালাল উদ্দিনের (৫০) মৃত্যু হয়েছে।
চালক হত্যার প্রতিবাদে মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) বিকেলে আন্দোলন শুরু করেছেন চট্টগ্রামের পরিবহন শ্রমিকরা। এর আগে সোমবার (২২ এপ্রিল) রাতে পটিয়া ও কর্ণফুলী উপজেলা সংলগ্ন শিকলবাহা ব্রিজ এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।
জালাল উদ্দিনের বাড়ি দিনাজপুর জেলায় বলে জানিয়েছেন শ্যামলী পরিবহনের ওই বাসের সুপারভাইজার আজিম উদ্দিন। তিনি জানান, সোমবার রাত ৮টায় যাত্রীবাহী বাসটি কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশে রওনা হয়। রাত সাড়ে ১১টার দিকে বাসটি পটিয়া উপজেলার শান্তিরহাট পার হয়ে শিকলবাহা (ভেল্লাপাড়া) ব্রিজ এলাকায় আসে। এ সময় ডিবি সদস্য পরিচয় দিয়ে আনুমানিক ৭ জন পুরুষ বাস থামান। এরপর তারা বাসে উঠে তল্লাশি শুরু করেন।
“এক পর্যায়ে তারা ড্রাইভারকে হাতকড়া পরিয়ে বাস থেকে নামিয়ে রাস্তার পাশে নিয়ে যায়। সেখানে তাকে বেধড়কভাবে পেটানো হয়। পেটাতে পেটাতে আবারও জালালকে বাসের ভেতরে এনে তারা বলেন, ‘ইয়াবা কোথায় রেখেছিস বল, বের করে দে।’ ড্রাইভার উত্তর দেন, ‘স্যার আমার কাছে কোনো ইয়াবা নেই।’ এ কথা শুনে ক্ষুব্ধ হয়ে ডিবি সদস্যরা তাকে আবারও নামিয়ে রাস্তার পাশে অন্ধকারের মধ্যে নিয়ে যায়। সেখানে তাকে লাঠি দিয়ে পেটানো হয়, রাস্তায় ফেলে লাথি মারা হয়। ১০ থেকে ১৫ মিনিট পর মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে বাসের ভেতরে ফেলে ডিবি সদস্যরা দ্রুত চলে যায়। এই ঘটনার পরে চট্টগ্রাম শহর থেকে বিকল্প চালক এনে বাসটিকে নগরীর কর্নেলহাট কাউন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়”- বলেন আজিম উদ্দিন।
তিনি বলেন, “রাত আড়াইটার দিকে আমরা ড্রাইভার জালালকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে লাশ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) মর্গে পাঠানো হয়। ময়নাতদন্ত শেষে লাশ দিনাজপুরে পরিবারের কাছে নিয়ে যাওয়া হবে।”
তবে চমেক হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়িতে দায়িত্বরত ব্যক্তিরা বিষয়টি সত্য নয় বলে জানিয়েছেন। সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আলাউদ্দিন তালুকদার সারাবাংলাকে বলেন, ‘শ্যামলী পরিবহনের কোনো গাড়িচালককে হাসপাতালে আনার তথ্য আমাদের রেকর্ডে নেই।’
এ প্রসঙ্গে শ্যামলী পরিবহন ও এনা ট্রাভেলসের চট্টগ্রাম অঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক বাবুল আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, “জালালের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পরে আমরা পুলিশ সুপারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তাকে বিষয়টি অবহিত করেছি। তিনি মামলা করার পরামর্শ দিয়েছেন এবং আইনগত পদক্ষেপ নেবেন বলে আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার (এসপি) নুরে আলম মিনা সারাবাংলাকে বলেন, ‘শিকলবাহা ব্রিজটি পটিয়া ও কর্ণফুলী থানার সীমানায় পড়েছে। পটিয়ায় ঘটনা হলে অবশ্যই মামলা নিয়ে তারপর আমার জেলা পুলিশ আইনগত পদক্ষেপ নেবে। আর কর্ণফুলী থানায় ঘটনা হলে এটি চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের আওতাধীন এলাকা। তখন সিএমপি এই বিষয়ে পদক্ষেপ নেবে। আমি তাদের বলেছি, ঘটনাস্থলটা যেন আমাদের দেখিয়ে দেওয়া হয়। তারপর যা যা করতে হয়, সেটা আমরা করব।’
তিনি জানান, পুলিশের ধারণা- গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয়ে পেশাদার অপরাধী চক্রের কেউ এই ঘটনা ঘটিয়েছে।
নুরে আলম মিনা সারাবাংলাকে বলেন, ‘বাসের সুপারভাইজার ও প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে তথ্য পেয়েছি- ডিবি পরিচয়ে যারা বাসে উঠেছিল তারা সাদা পোশাকে ছিল। শার্টের ওপর ডিবি’র ইউনিফর্ম ছিল না। যদি সত্যিই ডিবি’র টিম রাতে অভিযান চালাতো, তাহলে অবশ্যই ইউনিফর্ম থাকত। আর জেলা পুলিশের ডিবি ইউনিটকে শুধু মামলার তদন্ত ছাড়া অভিযানে এখন পাঠানো হয় না।’
নগর গোয়েন্দা পুলিশের বন্দর জোনের উপ-কমিশনার এস এম মোস্তাইন হোসেন সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, তাদের কোন টিম গত (সোমবার) রাতে কর্ণফুলী থানা এলাকায় অভিযানে যায়নি। এরপরও ঘটনা যদি কর্ণফুলী থানা এলাকায় হয় তাহলে মামলা দায়েরের পর আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।
এর আগে বাসচালক জালালের মৃত্যুর প্রতিবাদে আন্দোলনের কর্মসূচি নির্ধারণ করতে মঙ্গলবার বৈঠকে বসেন পূর্বাঞ্চলীয় সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন ও চট্টগ্রাম জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের নেতারা।
জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি মো. মুছা সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা বৃহত্তর আন্দোলনে যাব। এভাবে একজন মানুষকে রাতের আঁধারে গাড়ি থেকে নামিয়ে মেরে ফেলা হবে, এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।’
সারাবাংলা/আরডি/এটি