বাসচালককে হত্যার প্রতিবাদে ৪৮ ঘণ্টার পরিবহন ধর্মঘট
২৩ এপ্রিল ২০১৯ ১৮:৫৬
চট্টগ্রাম ব্যুরো: পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সদস্য পরিচয়ে বাস থেকে চালককে নামিয়ে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে টানা ৪৮ ঘণ্টার পরিবহন ধর্মঘট ডেকেছে চট্টগ্রামের শ্রমিক সংগঠনগুলো। ঢাকা-চট্টগ্রামসহ ৬৮টি আন্তঃজেলা ও ১৯টি স্থানীয় রুটে একসঙ্গে ২৪ ঘণ্টা এবং বৃহত্তর চট্টগ্রামের ৫ জেলায় আরও ২৪ ঘণ্টা পরিবহন ধর্মঘট চলবে।
পরিবহন শ্রমিক নেতারা আল্টিমেটাম দিয়েছেন, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে হত্যাকারীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা না হলে বৃহত্তর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) সন্ধ্যায় পূর্বাঞ্চলীয় সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন এবং চট্টগ্রাম জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের যৌথ সভা শেষে এই কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
পূর্বাঞ্চলীয় সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি মৃণাল চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, বাস চালককে হত্যার প্রতিবাদে বুধবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টা শুধুমাত্র যাত্রীবাহী পরিবহন ধর্মঘট আহ্বান করা হয়েছে। চট্টগ্রাম থেকে দেশের অন্যান্য জেলায় চলা ৬৮টি রুট এবং আরাকান সড়ক সংশ্লিষ্ট দক্ষিণ চট্টগ্রামের ১৯টি রুটে এই পরিবহন ধর্মঘট চলবে।
এছাড়া রোববার (২৮ এপ্রিল) সকাল ৬টা থেকে পরদিন সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টা বৃহত্তর চট্টগ্রামের পাঁচ জেলায় পণ্য ও যাত্রীবাহী পরিবহন ধর্মঘট আহ্বান করা হয়েছে, জানান মৃণাল চৌধুরী।
মৃণাল চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, “চালককে বাস থেকে যারা নামিয়েছিল, তাদের কাছে হ্যান্ডকাপ, ওয়াকিটকি এবং অস্ত্র ছিল। একটি সাদা মাইক্রোবাসে করে এসে চালকের হাতে হ্যান্ডকাপ পরিয়ে তাকে নামানো হয় এবং রাস্তার পাশে নিয়ে পেটানো হয়। এক পর্যায়ে তার মুখের ওপর পানি ঢালা হয়। মৃত্যু নিশ্চিত করে তাকে বাসে ফেলে মাইক্রোবাসে করে খুনিরা চলে যায়। আমরা তাদের গোয়েন্দা পুলিশের সদস্য হিসেবেই চিহ্নিত করছি এবং প্রশাসনের কাছে জড়িতদের বিচার দাবি করছি।”
বাসচালককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ
প্রসঙ্গত, অভিযোগ উঠেছে, পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সদস্য পরিচয়ে শ্যামলী পরিবহনের একটি গাড়ির চালক জালাল উদ্দিনকে (৫০) পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
শ্যামলী পরিবহনের ওই বাসের সুপারভাইজার আজিম উদ্দিন জানান, সোমবার রাত ৮টায় যাত্রীবাহী বাসটি কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশে রওনা হয়। রাত সাড়ে ১১টার দিকে বাসটি পটিয়া উপজেলার শান্তিরহাট পার হয়ে শিকলবাহা (ভেল্লাপাড়া) ব্রিজ এলাকায় আসে। এ সময় ডিবি সদস্য পরিচয় দিয়ে আনুমানিক ৭ জন পুরুষ বাস থামান। এরপর তারা বাসে উঠে তল্লাশি শুরু করেন।
“এক পর্যায়ে তারা ড্রাইভারকে হাতকড়া পরিয়ে বাস থেকে নামিয়ে রাস্তার পাশে নিয়ে যায়। সেখানে তাকে বেধড়কভাবে পেটানো হয়। পেটাতে পেটাতে আবারও জালালকে বাসের ভেতরে এনে তারা বলেন, ‘ইয়াবা কোথায় রেখেছিস বল, বের করে দে।’ ড্রাইভার উত্তর দেন, ‘স্যার আমার কাছে কোনো ইয়াবা নেই।’ এ কথা শুনে ক্ষুব্ধ হয়ে ডিবি সদস্যরা তাকে আবারও নামিয়ে রাস্তার পাশে অন্ধকারের মধ্যে নিয়ে যায়। সেখানে তাকে লাঠি দিয়ে পেটানো হয়, রাস্তায় ফেলে লাথি মারা হয়। ১০ থেকে ১৫ মিনিট পর মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে বাসের ভেতরে ফেলে ডিবি সদস্যরা দ্রুত চলে যায়। এই ঘটনার পরে চট্টগ্রাম শহর থেকে বিকল্প চালক এনে বাসটিকে নগরীর কর্নেলহাট কাউন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়”- বলেন আজিম উদ্দিন।
তিনি বলেন, “রাত আড়াইটার দিকে আমরা ড্রাইভার জালালকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে লাশ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) মর্গে পাঠানো হয়। ময়নাতদন্ত শেষে লাশ দিনাজপুরে পরিবারের কাছে নিয়ে যাওয়া হবে।”
বিস্তারিত পড়ুন: ডিবি পরিচয়ে বাস থামিয়ে চালককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ
সারাবাংলা/আরডি/এটি