আগামী তিন মাসে বিদ্যুৎ ঘাটতি চার হাজার মেগাওয়াট
২৭ জানুয়ারি ২০১৮ ১১:০৬
হাসান আজাদ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
ঢাকা : আসছে গ্রীষ্ম ও সেচ মৌসুমে বিদ্যুতের ঘাটতি থাকবে চার হাজার মেগাওয়াট। গত ডিসেম্বর থেকে সেচ মৌসুম শুরু হলেও এই ঘাটতি হবে ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত। এখন শীতকাল হওয়ায় বিদ্যুতের চাহিদা কম থাকলেও গ্রীষ্মকালে তা স্বাভাবিক ভাবেই বাড়বে।
চলতি সেচ মৌসুমে বিদ্যুতের চাহিদা ঠিক করা হয়েছে ১১ হাজার ৪শ মেগাওয়াট। আর গ্রীষ্মে নির্ধারণ করা হয়েছে ১৩ হাজার ৬৭৫ মেগাওয়াট। গত গ্রীষ্মে বিদ্যুতের সবোর্চ্চ উৎপাদন করা হয়েছে ৯ হাজার ৫০৭ মেগাওয়াট। এখন চাহিদা কম হওয়ায় গড়ে দৈনিক ৮ থেকে ৮ হাজার একশ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। এই হিসেবে গরম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেচের জন্য বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে যাবে। বিদ্যুৎ বিভাগের প্রাক্কলন অনুযায়ী গ্রীষ্ম আর সেচে আগামী মার্চ-এপ্রিলে সেচে ঘাটতি হবে চার হাজার মেগাওয়াট।
এদিকে, এই সংকট মোকাবেলায় পেট্রোবাংলার কাছে নূন্যতম ১২শ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস চেয়েছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। এছাড়া পিডিবির ফাস্ট ট্যাকের আওতায় এক হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতার ১০টি জ্বালানি তেল নির্ভর বিদ্যুৎকেন্দ্র আগামী ফেব্রুয়ারি-মার্চের মধ্যে উৎপাদনে আসবে বলে জানান বিদ্যুৎ বিভাগ ও পিডিবির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
গত ২১ জানুয়ারি বিদ্যুৎ বিভাগের চলতি সেচ মৌসুমে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করার বিষয়ে এক বৈঠকে পিডিবির কর্মকর্তারা সেচের সময় বিদ্যুতের এই চিত্র তুলে ধরেন। বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ এই বৈঠকের সভাপতিত্ব করেন। প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক, বিদ্যুৎ সচিব, পিডিবির চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্ট দফতরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এই বৈঠকে ছিলেন।
আসছে গ্রীষ্মে ও চলতি সেচ মৌসুমে বিদ্যুতের চাহিদা প্রাক্কলন করে সরকারের কাছে দেওয়া পিডিবির হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, এবারের গ্রীষ্মে বিদ্যুতের চাহিদা দাঁড়াবে ১৩ হাজার ৬৭৫ মেগাওয়াট। আর ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া সেচ মৌসুমের জন্য চাহিদা হল ১১ হাজার ৪’শ মেগাওয়াট। এর মধ্যে ৫ শতাংশ প্রাথমিক খরচ ও ৩ শতাংশ সঞ্চালন খরচও রয়েছে। এর বিপরীতে পিডিবির দাবি অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রাথমিক জ্বালানি নিশ্চিত করা গেলে ১৩ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারবে। এর মধ্যে গ্যাসই প্রধান। কিন্তু চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রয়োজনীয় গ্যাস না পাওয়ার কারণে বর্তমানে দুই হাজার ২২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারছে না। আর গরম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই ঘাটতির পরিমাণও বেড়ে যাবে।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু এ প্রসঙ্গে সারাবাংলা’কে বলেন, সেচে যাতে কোনও ঘাটতি না হয় সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।এছাড়া পেট্রোবাংলাকে বলা হয়েছে সেচ মৌসুমে বিদ্যুৎ উৎপাদনে যাতে চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস সরবরাহ করে। তিনি বলেন, আগামী দুই মাসের মধ্যে তেল চালিত বেশ কিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে আসবে। ফলে সেচের সময় বিদ্যুতের কোনও সংকট থাকবে না।
সেচ নিয়ে বৈঠকে উপস্থিত এক কর্মকর্তা বলেন, সেচ মৌসুমে ভেড়ামারা ৩৬০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্লান্ট ও সিরাজগঞ্জ ২২৫ মেগাওয়াট ক্ষমতার কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ারসহ যেসব গ্যাস ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্বিঘ্নে উৎপাদন করতে সক্ষম, সেগুলোতে নিরবিচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ করতে পেট্রোবাংলাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া একই সঙ্গে সার কারখানাগুলোর উৎপাদন বন্ধ রেখে বিদ্যুতে গ্যাস দেওয়ার বিষয়েও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এছাড়া সংকট সামাল দিতে উৎপাদন শিডিউল তৈরি করতে পিডিবিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এ বছরে সারাদেশে প্রায় ৪৮ লাখ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ করা হবে। আর সেচের জন্য তিন লাখ ৬৫ হাজহার সেচ পাম্প চালানো হবে। পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) মোট সেচ পাম্পের মধ্যে তিন লাখ ২০ হাজার পাম্পে বিদ্যুৎ সংযোগ দিবে। অন্য বিতরণ কোম্পানিগুলো বাকি পাম্পগুলোতে সংযোগ দিবে। মোট সেচ পাম্পের মধ্যে ৮০ ভাগ সেচ পাম্পই বিদ্যুৎ নির্ভর। বাকিগুলো ডিজেল নির্ভর। সেচ পাম্পের মধ্যে রাজশাহী ও রংপুরে সবচেয়ে বেশি ৪৯ শতাংশ। ময়মনসিংহে ২১ শতাংশ, খুলনায় ১৪ শতাংশ। আর বাকি ১৬ শতাংশ পাম্প রয়েছে অন্যান্য সব জেলাতে।
সারাবাংলা/এইচএ/জেডএফ