Monday 25 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

রানা প্লাজা ধস: ৬ বছরেও শেষ হয়নি ৩ মামলার বিচার


২৪ এপ্রিল ২০১৯ ০৯:৪০

ঢাকা: ছয় বছর আগে আজকের দিনে ধসে পড়েছিল সাভারের রানা প্লাজা। কয়েকটি পোশাক কারখানা নিয়ে গড়ে ওঠা ভবনটিতে ভয়াবহ সেই দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান এক হাজার ১৩৬ জন। আহত হন আরও প্রায় দেড় হাজার মানুষ। এত প্রাণহানির পেছনে দায় যাদের, তাদের বিচার শেষ হয়নি ছয় বছরেও।

ভবন ধসে বিপুলসংখ্যক মানুষ মারা যাওয়ার ঘটনায় ওই সময় মোট চারটি মামলা করা হয়। এর মধ্যে অবহেলার কারণে মৃত্যু উল্লেখ করে হত্যা মামলা দায়ের করে পুলিশ, ইমারত নির্মাণ আইন না মেনে ভবন নির্মাণ করায় একটি মামলা করে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) এবং ভবন নির্মাণে দুর্নীতি ও সম্পদের তথ্য গোপন সংক্রান্ত দু’টি মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

বিজ্ঞাপন

এর মধ্যে কেবল দুদকের দায়ের করা সম্পদের তথ্য গোপনের মামলাটি নিষ্পত্তি হয়েছে। এর বাইরে ভবন নির্মাণে দুর্নীতির মামলাটির বিচার কার্যক্রম চলমান। বাকি দু’টি মামলার কার্যক্রমই থমকে রয়েছে। মামলা দু’টিতে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। কিন্তু আসামিদের করা অবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ থাকায় বিচারকাজ পরিচালনা করতে পারছেন না বিচারিক আদালত।

সূচে ফোঁড়ে রানা প্লাজায় নিহতদের স্মরণ

রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় দায়ের করা হত্যা ও ইমারত আইনের মামলা দু’টি বিচারের জন্য প্রস্তুত হয় ২০১৬ সালে। একই বছরের ১৫ মার্চ মামলা দু’টি বিচার ও নিষ্পত্তির জন্য ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ এবং বিচারিক আদালতে পাঠানো হয়। একই বছরের ১৬ জুন ইমারত নির্মাণ আইনের মামলায় ভবন মালিক সোহেল রানাসহ ১৮ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিম মুস্তাফিজুর রহমান। ১৮ জুলাই হত্যা মামলায় ভবন মালিক সোহেল রানাসহ ৪১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ এসএম কুদ্দুস জামান।

বিজ্ঞাপন

তবে অভিযোগ গঠনের আদেশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে আট আসামি হাইকোর্টে আবেদন করেন। শুনানি শেষে প্রথমে আট জনের পক্ষেই স্থগিতাদেশ দেন আদালত। পরে ছয় জনের স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। বহাল থাকে সাভার পৌরসভার ওই সময়কার মেয়র রেফায়েত উল্লাহ এবং কাউন্সিলর মোহাম্মদ আলী খানের পক্ষের স্থগিতাদেশ।

বর্তমানে রানা প্লাজা হত্যা মামলাটি ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য রয়েছে। কিন্তু মোহাম্মাদ আলী খান ও রেফায়েত উল্লাহর পক্ষে হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ থাকায় মামলার কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়া যাচ্ছে না।

রানা প্লাজা ধসের ৫ বছর: স্বজনদের কান্না থামেনি আজও

এ বিষেয়ে ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের এডিশনাল পাবলিক প্রসিউকিউটর মো. মিজানুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘হত্যা মামলাটি সাক্ষ্য পর্যায়ে রয়েছে। কিন্তু এ মামলায় উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ থাকায় সাক্ষ্য নেওয়া যাচ্ছে না। মামলায় মোট আসামির সংখ্যা ৪১ জন। এদের মধ্যে দুই জন মারা গেছেন, বাকিদের মধ্যে ৩২ জন জামিনে, সাতজন পলাতক। কেবল রানা প্লাজার মালিক রানা কারাগারে রয়েছেন।’

রাষ্ট্রপক্ষ বহুবার সাক্ষী হাজির করলেও স্থগিতাদেশের কারণে সাক্ষ্য নেওয়া যাচ্ছে না জানিয়ে এই আইনজীবী বলেন, মামলার বিচার এগিয়ে নিতে অ্যাটর্নি জেনারেল কাছে একটি আবেদনপত্র পাঠানো হয়েছে, যেন এই দুই আসামিকে ছাড়াই মামলার কাজ শুরু করা যায়। কিন্তু এখানো সেই আবেদনের উত্তর হাতে এসে পৌঁছেনি। উচ্চ আদালতের অনুমতি পেলে দ্রুতই বিচারকাজ শুরু করতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। জানান, মামলার পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আগামী ২৩ মে দিন ঠিক করা আছে।

এদিকে, ২০১৫ সালের ১ জুন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সহকারী পুলিশ সুপার বিজয় কৃষ্ণ কর হত্যা ও ইমারত নির্মাণ আইনের আলাদা দুই মামলায় ঢাকার মুখ্য বিচারিক হাকিমের আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

ইমারত নির্মাণ আইনের অভিযুক্ত আসামিরা হলেন— ভবন মালিক সোহেল রানা, তার বাবা আব্দুল খালেক ওরফে কুলু খালেক, মা মর্জিনা বেগম, সাভার পৌরসভার মেয়র রেফায়েত উল্লাহ, কাউন্সিলর মোহাম্মাদ আলী খান, উপ-সহকারী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান রাসেল, নিউওয়েব বাটন লিমিটেডের চেয়ারম্যান বজলুস সামাদ আদনান, সাইট ইঞ্জিনিয়ার মো. সারোয়ার কামাল, আমিনুল ইসলাম, নিউওয়েব স্টাইলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহমুদুর রহমান তাপস, ইথার টেক্সটাইলের চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান ওরফে আনিসুজ্জামান, সাভার পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা উত্তম কুমার রায়, প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম, গার্মেন্টস ব্যবসায়ী মাহবুবুল আলম, সাবেক সহকারী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান, নগর পরিকল্পনাবিদ ফারজানা ইসলাম, নান্টু কন্ট্রাকটার এবং রেজাউল ইসলাম।

দুই মামলায় রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানা, তার বাবা আবদুল খালেক ওরফে খালেক কুলুসহ ৫৯ জনকে আসামি করা হয়েছে। তবে আসামিদের মধ্যে ১৭ জনের নাম উভয় মামলার অভিযোগপত্রে উল্লেখ থাকায় ব্যক্তি হিসেবে আসামি ৪২ জন। এর মধ্যে হত্যা মামলায় ৪১ জনকে আসামি করা হয়েছে এবং সাক্ষী করা হয়েছে ৫৯৪ জনকে। ইমারত নির্মাণ আইনের মামলায় ১৮ জনকে আসামি করা হয়েছে এবং সাক্ষী করা হয়েছে ১৩৫ জনকে।

আদালতের একটি সূত্র জানিয়েছে ইমারত নির্মাণ আইনের মামলাটি বিচারিক আদালতে রিভিশনের জন্য রয়েছে। এ মামলারও কার্যক্রম এখনো শুরু হয়নি।

অন্যদিকে নকশাবহির্ভূত ভবন নির্মাণের অভিযোগে ২০১৪ সালের ১৫ জুন সাভার থানায় ১৭ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করে দুদক। মামলাটি চার্জশিটে ১২ আসামির কথা উল্লেখ করা হয়। সোহেল রানা ছাড়া অন্য ১১ জনই এখন জামিনে আছেন। এ মামলাটি বর্তমানে বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতে সাক্ষ্যগ্রহনের জন্য রয়েছে। এ পর্যন্ত কেবল একজনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেছেন আদালত। মামলার পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আগামী ২ মে দিন নির্ধারণ করা আছে।

জেলা ও দায়রা জজের পাবলিক প্রসিকিউটর খোন্দকার আবদুল মান্নান সারাবাংলাকে বলেন, হত্যা মামলাটি বিচারাধীন রয়েছে। অরেকটি মামলা উচ্চ আদালতে স্থগিত থাকায় বিচারকার্য শুরু করা যাচ্ছে না। তবে উচ্চ আদালতে অনুমতি পেলে এ মামলার কার্যক্রম শিগগিরই শুরু করা যাবে। সেইসঙ্গে এ মামলায় জড়িত সব আসামিকে বিচারের আওতায় এনে সাজা দেবেন আদালত।

এ বিষয়ে কথা হয় আসামিপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহাম্মদের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এই মামলায় রানা ছাড়া সব আসামি জামিনে আছেন। মামলার মূল আসামি রানার বাবা, তিনিও জামিনে আছে। অনেকবার জামিনের আবেদন করেও রানাকে জামিন দেননি বিচারক।’ অবশ্য সোহেল রানাকে সম্পূর্ণ নির্দোষ দাবি করেন তার আইনজীবী।

এই তিন মামলার বাইরে রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানার বিরুদ্ধে সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে দুদকের দায়ের করা মামলাটিই কেবল নিষ্পত্তি হয়েছে। এ মামলায় ২০১৭ সালের ২৯ আগস্ট সোহেল রানাকে তিন বছরের কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে আরও তিন মাসের কারাদণ্ডের আদেশ দেন ঢাকার বিশেষ জজ-৬-এর বিচারক।

সারাবাংলা/এআই/এসএমএন

৩ মামলার বিচার রানা প্লাজা সোহেল রানা হত্যা মামলা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর