মসলা বিপুল সম্ভাবনাময়, উৎপাদনে আসছে প্রকল্প
২৫ এপ্রিল ২০১৯ ০৯:০২
ঢাকা: দেশে মসলার চাহিদা ক্রমেই বাড়ছে। সেই তুলনায় উৎপাদন হচ্ছে না। বিদেশ থেকে আমদানি করে ঘাটতি মেটাতে হচ্ছে। আর তাই বিভিন্ন ধরনের মসলা উৎপাদনের বিপুল সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর উদ্যোগ নিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়।
এজন্য ‘মানসম্মত মসলা বীজ উৎপাদন, প্রক্রিয়াকরণ ও বিতরণ’ নামের একটি প্রকল্প হাতে নিচ্ছে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি)। এটি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ৪৬ কোটি ৭২ লাখ টাকা। প্রকল্পটির অনুমোদন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে গত ২৪ মার্চ অনুষ্ঠিত হয়েছে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা। এতে সভাপতিত্ব করেন পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানি সম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সদস্য মো.জাকির হোসেন।
গত ১৫ এপ্রিল জারি করা সভার কার্যবিবরণীতে এ সব তথ্য জানাগেছে।
প্রকল্প ব্যয় ৫০ কোটি টাকার নিচে হওয়ায় পরিকল্পনামন্ত্রী এম,এ,মান্নান এটি অনুমোদন করবেন। অনুমোদন পেলে চলতি বছর থেকে ২০২২ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। দেশের ৫টি বিভাগের ১৫টি জেলার ১৪টি উপজেলা এবং চারটি সিটি করপোরেশনে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য ও কৃষি অর্থনীতিবিদ সমিতির সাবেক সভাপতি ড. শামসুল আলম সারাবাংলাকে বলেন, দেশে মসলার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। সেই তুলনায় যেহেতু উৎপাদন কম, সেহেতু এ ক্ষেত্রে উৎপাদন বৃদ্ধির সুযোগ রয়েছে। এ হিসেবে যে প্রকল্পটি হাতে নেয়া হচ্ছে আমি মনে করি এরকম প্রকল্প অপ্রচলিত ফসল উৎপাদনে ব্যাপক ভূমিক রাখবে।
প্রকল্পটির দায়িত্বপ্রাপ্ত কৃষি,পানি সম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের প্রধান প্রশান্ত কুমার চক্রবর্তী সারাংলাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা পিইসি সভা করেছি। সব ঠিক থাকলে পরিকল্পনামন্ত্রীর অনুমোদন নেওয়া হবে।’
পিইসি সভার কার্যবিবরণী সূত্রে জানা গেছে, প্রস্তাবিত প্রকল্পের মূল কার্যক্রম হচ্ছে বিভিন্ন জাতের ১ হাজার টন প্রত্যায়িত মসলা বীজ উৎপাদন করা। এর পাশাপাশি মসলা বীজ প্রক্রিয়াজাতকরণ, সংরক্ষণ ও বিতরণের সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধিকরণের জন্য প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে এ সব কার্যক্রমের মাধ্যমে দেশে কোন কোন মসলার উৎপাদন কি পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে পারে এবং তা দেশের সামগ্রিক কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থার কী পরিবর্তন আনবে, সে সংক্রান্ত কোন ব্যাখ্যা ডিপিপিতে দেয় হয়নি।
এ বিষয়ে সংস্থার প্রতিনিধি জানান, প্রস্তাবিত প্রকল্পের আওতায় উৎপাদিত ১ হাজার মেট্রিক টন বীজ ব্যবহার করে ১৪ হাজার ১৩৪ হেক্টর জমিতে মসলা চাষ করা যাবে, যার মাধ্যমে ১ লাখ ২৭ হাজার ৩১৬ মেট্রিক টন মসলা উৎপাদন করা যাবে। মসলা চাষে ধানের চেয়ে হেক্টর প্রতি ৫ থেকে ২৭ গুণ বেশি মুনাফা করা সম্ভব। অপরদিকে দেশে প্রতি বছর প্রচুর পরিমাণ মসলা বিদেশে থেকে আমদানি করতে হয়। মসলা চাষ বাড়ানোর মাধ্যমে এ সব বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করা সম্ভব হবে। সভায় জানানো হয়, প্রস্তাবিত প্রকল্পটির আগে পেঁয়াজ, রসুন, আদা, হলুদ ও মরিচ উৎপাদন বৃদ্ধির সমন্বিত প্রকল্প শিরোনামে একটি প্রকল্প ১৮ কোটি ৩৩ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০০৭ সালের জুলাই হতে ২০১০ সালের জুনের মধ্যে কৃষি মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন সংস্থা ডিএই, বারি, এআইএস ও বিএডিসি বাস্তবায়ন করেছে।
এই প্রকল্পের আওতায় মসলা বীজ উৎপাদন কার্যক্রম দেশের মসলা চাষের সম্প্রসারণ কতটুকু সহায়ক ভূমিকা পালন করছে এবং এই প্রকল্পের অভিজ্ঞতাগুলো বিবেচনা নিয়ে প্রস্তাবিত প্রকল্পের ডিজাইন করা হয়েছে কি-না এ বিষয়ে জানতে চাইলে সংস্থার প্রতিনিধি জানান, পূর্ববর্তী প্রকল্পে বিএডিসি অঙ্গের বীজ উৎপাদন ও বিতরণ লক্ষ্যমাত্রা পুরোপুরি অর্জন করা সম্ভব হয়নি। বারির প্রতিনিধি জানান, ডিপিপিতে প্রস্তাবিত মসলাগুলো ছাড়াও ইতোমধ্যে মেথি মৌরি ফিরিঙ্গীসহ বেশ কিছু প্রচলিত মসলার উন্নত জাত অবমুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া জিরা, পুদিনা, পেঁয়াজ ইত্যাদি মসলার উন্নত জাত শিগগিরই অবমুক্ত হবে।
প্রকল্পের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ২৭ প্রকার মসলা ব্যবহৃত হয়। তারমধ্যে ১৭ প্রকার মসলা এদেশে উৎপাদিত হয়। দেশে প্রধান কিছু মসলা যেমন, মরিচ, পেঁয়াজ, রসুন, আদা ও হলুদের পাশাপাশি কিছু অপ্রধান মসলা যেমন, ধনিয়া, মেথি, কালোজিরা, মৌরি, গোলমরিচ, শলফা ও জোয়ানের চাষাবাদ করা হয়ে থাকে। জিরা এলাচ, দারুচিনি লবঙ্গ, জয়ফল, পেস্তা বাদাম ইত্যাদিসহ অবশিষ্ট ১০ প্রকার মসলা বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়। বর্তমানে বাংলাদেশে বছরে মসলার চাহিদা ৩১ দশমিক ৫৪ টন, তারমধ্যে ৩ লাখ ৯৫ হাজার হেক্টর জমিতে ২৪ লাখ ৮৮ হাজার টন উৎপাদিত হচ্ছে। অভ্যন্তরীণ ঘাটতি মেটানোর জন্য আরও ৬ লাখ ৬৬ হাজার টন মসলা প্রয়োজন। প্রস্তাবে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশের মাটি ও আবহাওয়া মসলা উৎপাদনের জন্য বেশ উপযোগী। বাংলাদেশে কৃষি গবেষণা ইনষ্টিটিউট এর মসলা গবেষণা কেন্দ্র হতে ইতোমধ্যে ১৯ প্রকার মসলার ৩৮টি জাত অবমুক্ত করা হয়েছে।
মান সম্পন্ন মসলাবীজ প্রক্রিযাকরণের জন্য কালার স্টার যন্ত্র, সীডফিল্ম কোটিং মেশিন, সিড ফিল্ম কোটার, পেঁয়াজ বীজ আলাদাকরণ যন্ত্র, বাল্ব-গ্রেডিং যন্ত্রসহ অন্যান্য যন্ত্র বাবদ নতুনভাবে ৩৫৪ কোটি ৫০লাখ টাকাসহ মোট ৫৭৯ কোটি ২০ লাখ টাকার সংস্থান রাখা যেতে পারে। প্রশিক্ষণ, সেমিনার, কনফারেন্স ও মনিটরিং কার্যক্রমে গবেষণা প্রতিষ্ঠানের অন্তভুক্তি নিশ্চিত করতে হবে। খাতের সংখ্যা ও পরিমান যৌক্তিক পর্যায়ে নির্ধারণ করতে হবে এবং এ সংক্রান্ত সব ব্যয় অর্থ বিভাগের পরিপত্র অনুযায়ী প্রাক্কলনপূর্বক ডিপিপিতে সংযুক্ত করতে হবে। সভায় জানানো হয়, প্রস্তাবিত প্রকল্পের আওতায় মোটরযান, হিমাগার, অফিস ভবন ইত্যাদির মেরামত সংরক্ষণ ও পুনর্বাসন বাবদ মোট ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে। সবজি বীজ বিভাগের আওতায় বর্তমানে চলমান প্রকল্পের কার্যক্রম সঙ্গে দ্বৈততা বিবেচনায় মেরামত ও পুর্নবাসন খাতে প্রস্তাবিত আইটেম গুলোর ব্যয় পিডব্লিউডি রেট সিডিউল ২০১৮ অনুসারে প্রাক্কলন করে পূর্নাঙ্গ বিভাজন ডিপিপিতে সংযুক্ত করা, প্রস্তাবিত প্রতিটি মেরামত কাজের আগে ও পরের ছবি তুলে রাখা এবং মেরামত কাজ কতদিন স্থায়ী হবে সে সংক্রান্ত একটি ঘোষণাপত্র দেয়ার বিষয়টি ডিপিপিতে উল্লেখ রাখার বিষয়ে সভায় একমত পোষণ করা হয়।
সারাবাংলা/জেজে/এসএ