Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ম্যালেরিয়ারোধে ‘ক্রসবর্ডার এরিয়া’ চিহ্নিত করার তাগিদ


২৫ এপ্রিল ২০১৯ ১৮:৩২

রাঙামাটি থেকে ফিরে: ম্যালেরিয়ারোধে দেশে ক্রসবর্ডার এরিয়া চিহ্নিত করতে হবে। এজন্য ক্রসবর্ডার কোলাবোরেশন বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, কেবল বাংলাদেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বা অধিদফতর একা না, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পার্শ্ববর্তী দেশ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ সবার সহযোগিতার মাধ্যমে এই কাজ এগিয়ে নিতে হবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আঞ্চলিক সহযোগিতা ছাড়া দেশ থেকে ম্যালেরিয়া নির্মূল করা সম্ভব হবে না। কারণ শহর বা শহরের কাছাকাছি এলাকাতে ম্যালেরিয়া কমে গেলেও দেশের সীমান্তবর্তী এলাকায় ক্রসবর্ডার কোলাবোরেশন, ক্রসবর্ডার এরিয়া চিহ্নিত না করা গেলে ম্যালেরিয়ার প্রাদুর্ভাব কমানো যাবে না। একইসঙ্গে সরকার এবং বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলোর বাইরেও যারা আছেন তাদেরও এ নিয়ে কাজ করতে হবে।

বিজ্ঞাপন

বাহক মশার অনুপ্রবেশই ম্যালেরিয়ারোধে বড় চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তাই ২০৩০ সালের মধ্যে ম্যালেরিয়া নির্মূলের লক্ষমাত্রা অর্জন করতে হলে এ বিষয়ে নজর দিতে হবে, কাজ করতে হবে সবাইকে নিয়ে। আর এজন্য ‘বর্ডার এরিয়া’ এমনকি অনেক জায়গায় ‘নোম্যান্স ল্যান্ড’ বা বর্ডারের কাছাকাছি যে মানুষগুলো থাকে তাদের ‘আর্লি ডায়াগোনসিস’ এর আওতায় আনতে হবে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল কর্মসূচি থেকে জানা যায়, দেশে বর্তমানে ম্যালেরিয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে ১ কোটি ৮০ লাখ মানুষ। ২০১৮ সালে মোট ১০ হাজার ৫২৩ জন ম্যালেরিয়া রোগী শনাক্ত হয়, যাদের মধ্যে মারা যান ৭ জন। তবে ২০০৮ সালের তুলনায় ২০১৮ সালে ম্যালেরিয়া রোগীর সংখ্যা শতকরা ৮৮ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার শতকরা ৯৫ শতাংশ কমিয়ে আনা গেছে।

বিজ্ঞাপন

তবে পাবর্ত্য এলাকাগুলো দুর্গম হওয়ায় দ্রুততম সময়ের মধ্যে রোগ নির্ণয় না করতে পারা এবং চিকিৎসা দিতে না পারা, ক্রসবর্ডার এলাকায় ম্যালেরিয়া আক্রান্তের প্রবণতা বেশি হওয়া এবং সব ঝূঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে ম্যালেরিয়ার চিকিৎসা আওতায় আনা এখনো চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়ে গেছে।

দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সিলেট, হবিগঞ্জ, নেত্রকোণা, ময়মনসিংহ, শেরপুর এবং কুড়িগ্রাম- এই ১৩ জেলার ৭১টি উপজেলায় ম্যালেরিয়ার প্রার্দুভাব বেশি। আর এই জেলাগুলোর মধ্যে আবার তিন পাবর্ত্য জেলা বান্দরবান, রাঙামাটি এবং খাগড়াছড়ির সীমান্তবর্তী, পাহাড় ও বনাঞ্চলবেষ্টিত হওয়াতে ম্যালেরিয়ার প্রকোপ বেশি। যেখানে দেশের মোট ম্যালেরিয়া রোগীর শতকরা ৯১ শতাংশ। এই তিন জেলাকে উচ্চ ম্যালেরিয়াপ্রবণ অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত করেছে সরকার।

জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল ও এডিস মশাবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. এম এম আক্তারুজ্জামান সারাবাংলাকে বলেন, ‘বাংলাদেশ-ভারত-মিয়ানমার এ তিন দেশের মধ্যে এমন অনেক নোম্যান্স ল্যান্ড রয়েছে যেখানে কোনো ধরনের চিকিৎসাব্যবস্থা নেই। সেসব বিষয়ে এখন ভাবতে হবে। এজন্য তিন দেশের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের এগিয়ে আসতে হবে। এ লক্ষ্যে আগামী জুলাই বা আগস্টে একটি বৈঠক হবে ত্রিপুরার ধলাইতে।’ যেখানে বাংলাদেশ, ভারত, মিয়ানমারসহ পাশ্ববর্তী দেশের স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত থাকবেন বলেও জানান তিনি।

অন্য দেশ থেকে আসা মশা দেশে রোগ বয়ে আনছে কিনা সেটাও দেখতে হবে জানিয়ে ডা. এম এম আক্তারুজ্জামান বলেন, ‘মশা আক্রান্ত হলে ম্যালেরিয়া এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় ছড়িয়ে পরে। আর সামনে বৃষ্টির মৌসুম শুরু হবে। একটা মশা থেকে হাজার হাজার মশার জন্ম হয়। মশা থেকে মানুষ, সেখান থেকে ক্লাস্টার, ক্লাস্টার থেকে আউটব্রেক। তাই এসব ট্রান্সমিশন বন্ধ করতে চাই।’

অপরদিকে ব্র্যাকের যক্ষ্মা ও ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির পরিচালক ডা. আকরামুল ইসলাম জানান, বাংলাদেশ, ভারত এবং মিয়ানমারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ অন্যান্যদের এখানে কাজ করতে হবে। নিজের অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী এলাকাতে ম্যালেরিয়া রোগীর সংখ্যা বেশি। আর সেখান থেকে বাংলাদেশে প্রায় কয়েক লাখ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে এবং প্রতিদিন করছে। তাই দেশে এখনো ম্যালেরিয়ার ঝুঁকি কমেনি। এই ঝুঁকি কমাতে মিয়ানমারের সঙ্গে কাজ করা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।’

তিনি বলেন, এছাড়া মিজোরাম, ত্রিপুরা ও রাখাইন এ তিন জায়গাতে ম্যালেরিয়া রোগী বেশি।’ তাই সীমান্ত এলাকায় ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণ করতে এই তিন দেশের সমন্বয় দরকার। সেখানে তিন দেশ মিলে কাজ করতে হবে, সমন্বিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে বলেও জানান তিনি।

সারাবাংলা/জেএ/এমও

এডিস মশা ক্রসবর্ডার পার্বত্য এলাকা ম্যালেরিয়া রাঙামাটি

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর