বছরে ভরাট হচ্ছে ৪২ হাজার একর কৃষিজমি ও জলাশয়
২৫ এপ্রিল ২০১৯ ১৮:৪১
ঢাকা: সারাদেশে প্রতিবছর ৪২ হাজার একর কৃষিজমি ও জলাশয় ভরাট হচ্ছে। এই ভরাটের মাত্রা দিনদিন বাড়ছে। অন্যদিকে, ১৯৯৯ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত প্রতিবছর গড়ে ৫ হাজার ৭৫৭ একর জলাভূমি ঢাকা থেকে হারিয়ে গেছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডির মাইডাস সেন্টারে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) পক্ষ থেকে গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। গবেষণা প্রকাশ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান।
‘ড্যাপ লঙ্ঘন করে ঢাকা ও এর চারপাশের জলাশয় ভরাটের চিত্র’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনটি তুলে ধরেন বিআইপি‘র গবেষক আদিল মোহাম্মদ খান। প্রতিবেদনে বলা হয়, ড্যাপ লঙ্ঘন করে ঢাকা ও এর চারপাশের জলাশয় ভরাটের কারণে গত ১০ বছরে অনেক জলাশয় হারিয়ে গেছে। এতে করে প্রকৃতিক ভারসাম্য, জীবৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও নগরের ভারসাম্য রক্ষা করা যাচ্ছে না। পাশাপাশি বৃষ্টির পানি সুষ্ঠু নির্গমনের মাধ্যমে জলাবদ্ধতা নিরসন করা যাচ্ছে না।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১০ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ঢাকা মহানগর ও এর চারপাশের ছয়টি এলাকার ৪১ শতাংশ জলাধার ভরাট হয়ে গেছে। এর মধ্যে সাভার থানার এলাকার ২০ হাজার ৬৩৮ একর বন্যাপ্রবণ ও জলাশয় অঞ্চলের মধ্যে ৩ হাজার ৬৫ একর ভরাট করা হয়েছে। এটি মোট এলাকার ১৫ শতাংশ। গাজীপুরে এমন অঞ্চল ভরাট হয়েছে ২ হাজার ৩৬০ একর, যা মোট জলাশয় এলাকার ১৭ শতাংশ। এছাড়াও ঢাকা-কেরানীগঞ্জের মোট জলাশয়ের ২১ শতাংশ, ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় ৩৬ শতাংশ এবং ঢাকা বিশদ অঞ্চল এলাকায় ২২ শতাংশ জলাশয় ভরাট করা হয়েছে।
টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, জলাশয় ভরাটের বিরুদ্ধে রাজউকের যতটা সোচ্চার হওয়ার কথা ছিল, তারা তা করেনি। বরং কোনো কোনো এলাকায় জলাধার ভরাট করে বিভিন্ন ডেভেলপার কোম্পানিকে অনুমোদন দিয়েছে। তবে আশার কথা, আদালত মধুমতি মডেল টাউনকে চূড়ান্তভাবে অবৈধ ঘোষণা করেছন। এছাড়া র্যাংগস ভবন ভেঙে ফেলা হয়েছে, বিজিএমইএ ভবনও ভেঙে ফেলা হবে।
স্থপতি মোবাশ্বের চৌধুরী বলেন, আমাদের সব প্রতিষ্ঠানকে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করতে হবে। প্রতিটি সংস্থাকেই নিজস্ব আইন অনুযায়ী দখলদারদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে হবে। সবকিছু প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের অপেক্ষায় থাকলে হবে না।
স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, সম্প্রতি আদালত বেশকিছু ভালো নির্দেশনা দিয়েছেন। বিশেষ নদীর দুই পাশে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ অভিযান জোরালো হচ্ছে। একইসঙ্গে উচ্ছেদ অভিযানের মাধ্যমে নদীর দুই পাশ দখলমুক্ত হচ্ছে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, আমাদের সিস্টেম পরিবর্তন করতে হবে। সব কাজের জন্য প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার লাগবে না। প্রতিটি সরকারি সংস্থাকে নিজস্ব দায়িত্ব পালন করতে হবে।
নিজেরা করি’র নির্বাহী পরিচালক খুশি কবির বলেন, রাজউক নদী কমিশন প্রতিটি সরকারি সংস্থাকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে। রাজউক তাদের নিজেদের দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করলে ঢাকার চারপাশের জলাশয় ভরাট হতো না।
গবেষণা প্রতিবেদনে জলাশয় সংরক্ষণের জন্য বেশকিছু সুপারিশ করা হযেছে। এর মধ্যে রয়েছে— নদী ও খালসহ যেকোনো জলাশয় সামনে রেখে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা; ছোট বা বড় নদীর স্বাভাবিক প্রবাহে বিঘ্ন হয়, এমন কার্যক্রম গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকা; ভূমি ব্যবসায়ীদের অবৈধ কার্যকলাপ রোধে প্রচলিত অইনের সঠিক প্রয়োগ ও শাস্তির ব্যবস্থা নিশ্চিত করা এবং জলাশয় সংরক্ষণ ও নজরদারির সঙ্গে জড়িত প্রতিটি সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানকে জলাশয় সম্পর্কিত বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ বাধ্যতামূলক করা।
সারাবাংলা/জিএস/টিআর