Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পেট্রোবাংলার বিরুদ্ধে আরও ৩ হাজার কোটি টাকার দাবিনামা জারি


২৫ এপ্রিল ২০১৯ ২৩:২৪

ঢাকা: আন্তর্জাতিক তেল কোম্পানি (আইওসি) থেকে উৎপাদিত গ্যাস কিনে গ্রাহকের কাছে গ্যাস সরবরাহের বিপরীতে ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক আদায় করার পরও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) রাজস্ব প্রদান করছে না পেট্রোবাংলা। এ কারণে বিপুল পরিমাণ বকেয়া থাকার পরও প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার প্রাথমিক দাবিনামা জারি করেছে এনবিআর। ফলে পেট্রোবাংলার কাছে পড়ে থাকা বকেয়া রাজস্ব আদায় নিয়ে বিপাকে পড়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

বিজ্ঞাপন

এদিকে গত বুধবার (২৪ এপ্রিল) জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নিয়ন্ত্রণাধীন বৃহৎ করদাতা ইউনিট (এলটিইউ) আরও প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা নতুন করে পাওয়ার জন্য প্রাথমিক দাবিনামা জারি করেছে।

বুধবার পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা) কর্তৃক ২০১৭ সালের ১ মার্চ থেকে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে গ্যাসের বর্ধিত মূল্যের ওপরে অপরিশোধিত মূসক ও সম্পূরক শুল্কবাবদ ১ হাজার ৮২৫ কোটি ৯১ লাখ ৮০ হাজার ৫৪৭ টাকা ১১ পয়সা বকেয়া রয়েছে। আর এই অর্থ আদায়ে মূল্য সংযোজন কর আইন-১৯৯১ এর ধারা ৫৫ অনুযায়ী প্রাথমিক দাবিনামা জারি করা হয়েছে। একই সঙ্গে পেট্রোবাংলার নিটক থেকে কেন দাবি করা অর্থ আদায় করা হবে না সেটা ১৫ দিনের মধ্যে লিখিতভাবে জানানোর জন্য বলা হয়েছে।

অপরদিকে পেট্রোবাংলার অধিনস্থ বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ড কোম্পানি লিমিটেড কর্তৃক ২০১৭ সালের ১ মার্চ থেকে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে গ্যাসের বর্ধিত মূল্যের ওপর অপরিশোধিত মূসক ও সম্পূরক শুল্কবাবদ ৭৫৩ কোটি ৩০ লাখ ৬০ হাজার ৮৬২ টাকা ৫১ পয়সা, সিলেট গ্যাস ফিল্ড কোম্পানি লিমিটেড কর্তৃক অপরিশোধিত মূসক ও সম্পূরক শুল্কের পরিমাণ ১০৯ কোটি ১ লাখ ৭৫ হাজার ১৪ টাকা ৭৫ পয়সা, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লিমিটেড (বাপেক্স) কর্তৃক ২০১৭ সালের ১ মার্চ থেকে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে গ্যাসের বর্ধিত মূল্যের ওপর অপরিশোধিত মূসক ও সম্পূরক শুল্কবাবদ ১২ কোটি ৮৫ লাখ ৩৫ হাজার ২৬৪ টাকা ৯০ পয়সার প্রাথমিক দাবিনামা জারি করেছে।

একইভাবে দাবি করা অর্থের বিষয়ে কোনো বক্তব্য থাকলে সেটা আগামী ১৫ দিনের মধ্যে এনবিআরে লিখিত আকারে পাঠানোর জন্য নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানকে বলা হয়েছে। তা না হলে আইন অনুয়ায়ী চূড়ান্ত দাবিনামা জারি করা হবে বলেও বলা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

যেহেতু প্রতিষ্ঠানগুলো পেট্রোবাংলার অধিনস্থ তাই বকেয়া রাজস্ব পেট্রোবাংলাকেই পরিশোধ করতে হবে। আর পেট্রোবাংলা উক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে বকেয়া আদায় করে এনবিআরে জমা দেবে। ফলে গতকাল জারি করা প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা পেট্রোবাংলাকে পরিশোধ করতে হবে।

শুধু তাই নয়, পেট্রোবাংলার আওতাধীন চারটি গ্যাস বিতরণকারী কোম্পানির কাছ থেকে ২০০৯ সালের জুলাই থেকে ২০১৭ সালের ১৪ মার্চ পর্যন্ত বকেয়া রাজস্বের পরিমাণ ছিলো (সুদ ছাড়া) ১৩ হাজার ৩৬ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। আর ২০১৪ সালের এপ্রিল থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত দুই হাজার ৬৬২ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত এক হাজার ৪২৫ কোটি টাকা। ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত দুই হাজার ৫৮৭ কোটি ৭১ লাখ টাকা। সবমিলে ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্কবাবদ পেট্রোবাংলার কাছে এনবিআরের বকেয়া আছে ১৯ হাজার ৭১১ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে ২০১৭ সালের ১৪ জানুয়ারি ১৩ হাজার ২৭৮ কোটি টাকা বুক অ্যাডজাস্টমেন্টের মাধ্যমে বকেয়া রাজস্ব পরিশোধে রাজি হয় পেট্রোবাংলা। কিন্তু বর্তমান সময় পর্যন্ত বুক অ্যাডজাস্টমেন্টের টাকাও পরিশোধ করেনি প্রতিষ্ঠানটি।

এ বিষয়ে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান মো. রুহুল আমিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

পেট্রোবাংলার বকেয়া রাজস্বের বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়া সারাবাংলাকে বলেন, ‘পেট্রোবাংলা একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান। তারা গ্রাহক বা তার অধীনস্থ প্রতিষ্ঠানের নিকট হতে ভ্যাট আদায় করে সরকারি কোষাগারে জমা দেবে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি সেটা করছে না। সম্প্রতি বকেয়া রাজস্ব পরিশোধের বিষয়ে পেট্রোবাংলার সঙ্গে একটি আলোচনাও হয়েছে। কিন্তু ফলপ্রসূ কিছুই হয়নি। বলা যায় এনবিআর থেকে পাওনা পরিশোধে বারবার তলব করা হলেও অর্থ পরিশোধে কোনো মাথাব্যথা নেই সংস্থাটির। ফলে সংস্থাটির বিরুদ্ধে সামনে ব্যবস্থা নেওয়া ছাড়া কিছুই করার থাকবে না।

সারাবাংলা/এসজে/এমআই

দাবিনামা পেট্রোবাংলা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর