সারাদেশে বাড়তি সতর্কতা, বিশেষ খুতবার নির্দেশ মন্ত্রণালয়ের
২৬ এপ্রিল ২০১৯ ১১:১১
ঢাকা: শ্রীলংকায় সিরিজ বোমা হামলার পর বাংলাদেশে যে কোনো অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি এড়াতে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বিশেষ করে ধর্মীয় উপাসনালয়, বিমানবন্দর, রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা বা কেপিআইসহ কূটনৈতিক এলাকায় বাড়তি সতর্কতা নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি দেশের যেসব স্থানে বিদেশিদের সমাগম বেশি সেখানেও নেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ সতর্কতা।
বুধবার (২৪ এপ্রিল) পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজি) ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সারাদেশের পুলিশ সুপারদের সঙ্গে কথা বলেন। পুলিশ সদর দফতরের এক উর্দ্ধতন কর্মকর্তা সারাবাংলাকে জানান, সেসময় সবকিছু বিবেচনায় সারাদেশের পুলিশ সুপারদের সতর্ক থাকতে বলেন তিনি। শুধু তাই নয়, যে কোনো ধরণের সহায়তা প্রয়োজন মনে করলে তা চাইতে বলেন তিনি। দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে উগ্রবাদীদের রুখে দিতে বলেন আইজিপি। প্রয়োজনে যে কোনো সংকট মোকাবিলায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহায়তা নেওয়ার কথাও বলেছেন আইজিপি।
অন্যদিকে, শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) দেশের সব মসজিদে জুম্মার নামাযের খুতবায় সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ইমামদের বয়ান করতে নির্দেশ দিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। এ সংক্রান্ত একটি চিঠি সকল ইমামদের কাছে বৃহস্পতিবারই (২৫ এপ্রিল) পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। সেইসঙ্গে নিরাপত্তার জন্য নিজ নিজ এলাকার জনগনকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
এসব বিষয়ে শুক্রবার সারাবাংলার সঙ্গে কথা হয় পুলিশের কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে। তারাও জানান সতর্ক থাকার কথা।
পুলিশের কূটনৈতিক বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) হায়াতুল ইসলাম খান সারাবাংলাকে বলেন, ‘কূটনৈতিক এলাকাকে সব সময় গুরুত্ব দিয়ে নিরাপত্তা দেওয়া হয়। শ্রীলংকায় হামলার পরপরই পুলিশ সদর দফতরের নির্দেশে নিরাপত্তা আরও জোরদার করা হয়েছে। সবাই সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। একটু বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তবে কূটনীতিকদের চলাফেরায় তেমন কোনো বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়নি।’
বিমানবন্দরগুলোর সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়ে জানতে চাইলে এপিবিএন’র ডিআইজি লুৎফর রহমান মণ্ডল জানান, দেশের প্রতেকটি বিমানবন্দরের নিরাপত্তা আগের চেয়ে বাড়ানো হয়েছে। পুলিশ তাদের নিরাপত্তার কাজটি করছে। নিরাপত্তা বিধানই তাদের কাজ। যেহেতু বিশ্বের কোনো দেশই সন্ত্রাসীদের কাছ থেকে নিরাপদ না, তাই দেশের বিমানবন্দরগুলোতেও সর্বোচ্চ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে এমন কিছু করা হয়নি যেটি রেড অ্যালার্টের পর্যায়ে পড়ে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ সদর দফতরের সহকারী উপ মহাপরিদর্শক (মিডিয়া) সোহেল রানা বলেন, ‘শ্রীলংকায় হামলার দিন থেকেই সারাদেশের মাঠ পর্যায়ের কমান্ডিং অফিসারদের বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে বলা হয়েছে। প্রয়োজন অনুসারে তল্লাশি চৌকি বসিয়ে তল্লাশি করতে বলা হয়েছে। সন্দেহজনক কাউকে মনে হলে তল্লাশির আওতায় আনতে বলা হয়েছে। এমনকি প্রয়োজনে জিজ্ঞাসাবাদ করতে বলা হয়েছে। তবে কেউ যেন হয়রানি মনে না করেন সে দিকটি বিবেচনায় নিতে বলা হয়েছে।’
বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাজশাহী থেকে ঢাকা বিরতিহীন ট্রেন বনলতা এক্সপ্রেসের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বলেন, ‘শ্রীলংকার মতো বাংলাদেশেও এই ঘটনা ঘটানোর অনেক চেষ্টা চলছে। তবে আমাদের গোয়েন্দা সংস্থা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা যথেষ্ট সর্তকতা অবলম্বন করে যাচ্ছে। আমি দেশবাসীকে আহ্বান জানাব, এই ধরনের সন্ত্রাস জঙ্গিবাদের সাথে যারা সম্পৃক্ত থাকবে, কে কোথায় এই ধরনের সন্ত্রাসী-জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ডের সাথে লিপ্ত সেটা শুধু আমাদের গোয়েন্দা সংস্থা না, দেশবাসীকেও সতর্ক থাকতে হবে, খুঁজে বের করতে হবে এবং সঙ্গে সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাকে জানাতে হবে।’
সারাবাংলা/ইউজে/এসএমএন