যেনতেন রায় জনগণ মানবে না : ফখরুল
২৭ জানুয়ারি ২০১৮ ১৪:১৭
স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
ঢাকা : জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে যেনতেন রায় হলে জনগণ তা মেনে নেবে না বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
জাতীয় প্রেস ক্লাবে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দল ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আয়োজিত প্রতিবাদ সভায় শনিবার দুপুরে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।
জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদির ভূইয়া জুয়েল ও সাংগঠনিক সম্পাদক ইয়াছিন আলীর মুক্তির দাবিতে এ প্রতিবাদ সভা আয়োজন করা হয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতির একটা মিথ্যা মামলা দিয়ে রায়ের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি। আমাদের বিজ্ঞ আইনজীবীরা প্রত্যেকটি অভিযোগ খণ্ডন করেছেন। প্রমাণিত হয়েছে, এই মামলা কোনো মামলাই না। সম্পূর্ণ মিথ্যার ওপর মামলা দাঁড় করানো হয়েছে।’
‘সুতরাং এত সোজা নয়। বেগম খালেদা জিয়াকে আপনারা যেনতেন প্রকরণে একটা রায় দেওয়ার ব্যবস্থা করবেন, দেশের মানুষ সেটা মেনে নেবে না। সঠিক বিচার হতে হবে, ন্যায় বিচার হতে হবে। কিন্তু কার কাছে বিচার চাইব? বিচারের বাণী তো এখন নীরবে নিভৃতে কাঁদে। কেউ কোথাও ন্যায় বিচার পায় না’— বলেন ফখরুল।
তিনি বলেন, ‘যে ট্রাস্টে খালেদা জিয়ার কোনো সম্পৃক্ততাই নাই, যে ট্রাস্ট গঠনে খালেদা জিয়ার কোনো মন্তব্যই নাই, কোনো ডকুমেন্টে তার স্বাক্ষর নাই, তার কোনো নির্দেশনা নাই। একটা জাল নথি হাজির করে সেখানে বলা হয়েছে- তার নির্দেশে এই টাকাগুলো অ্যাকাউন্টে নেওয়া হয়েছে।’
‘আমাদের আইনজীবীরা প্রমাণ করে দিয়েছেন, এই নথিটি সম্পূর্ণভাবে জালিয়াতি করে, ঘষা-মাজা করে, কোনো সিগনেচার ছাড়াই রাষ্ট্রপতির প্যাডে তৈরি করা হয়েছে।’
ফখরুল বলেন, ‘অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে, তাড়াহুড়ো করে এই মামলা শেষ করার চেষ্টা হয়েছে। এমনকি শেষ দিন আইনজীবীরা চাচ্ছিলেন আরো কথা বলবেন। কিন্তু তাদের কথা বলার কোনো সুযোগ না দিয়ে, সিনিয়র আইনজীবীদের গিলোটিন করে মামলার রায় দেওয়ার তারিখ ঠিক করা হয়েছে।’
‘কেন এই তাড়াহুড়া? কেন এই জোর করে, আইনের স্বাভাবিক গতিকে বন্ধ করে দিয়ে অতি দ্রুততার সঙ্গে রায় দেওয়ার চেষ্টা। একটাই কারণ, বিএনপিকে, খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখতে হবে’— বলেন তিনি।
রায় পূর্বে নির্ধারণ করে রাখা হয়েছে অভিযোগ করে ফখরুল বলেন, ‘‘আওয়ামী লীগের মন্ত্রীরা হুমকি দিচ্ছেন, ‘রায়ের পরে কোনো বিশৃঙ্খলা করলে কঠোর হাতে দমন করা হবে।’ কেন আপনাদের মাথায় আসল এটা? আমরা তো দেখছি, এই মামলায় কিছু নেই, কোনো সত্যতা নেই। প্রসিকিউশন ফেল করেছে। কোনো কিছু প্রমাণ করতে পারেনি। সেখানে আপনারা হঠাৎ করে এটা ভাবছেন কেন? ভাবছেন এই কারণেই, আপনারা রায় পুর্বে নির্ধারণ করে রেখেছেন।”
‘সরকারের মন্ত্রিরা বলেছেন, ৮ দিনের মধ্যে রায় হবে, ১৫ দিনের মধ্যে রায় হবে। এরশাদ বললেন, ১৫ দিনের মধ্যে হয়ে যাবে, রাঙ্গা বললেন ৮ দিনের মধ্যে হয়ে যাবে। ঠিকই হয়ে গেল! তাহলে এই প্রহসন কেন? বিচারের নামে এই প্রহসন তো প্রয়োজন নেই’— বলেন তিনি।
খালেদা জিয়া উড়ে এসে জুড়ে বসেননি মন্তব্য করে ফখরুল বলেন, ‘ তিনি ৯ বছর গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছেন, জেলে গেছেন, কারাবারণ করেছেন, লড়াই করেছেন। জনগণের ভোটে তিনবার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন, দুইবার বিরোধী দলের নেত্রী হয়েছেন। তাকে আপনারা যেভাবে অসম্মান করছেন, তার সঙ্গে যে আচরণ করছেন— এটা পৃথিবীর ইতিহাসে নজিরবিহীন ঘটনা।’
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘তারা দেশ ধ্বংস করেছে, রাষ্ট্র ধ্বংস করেছে, আমাদের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বকে বিপন্ন করেছে, আমাদের সব অর্জনগুলোকে বিপন্ন করেছে। এখন এরা আমাদের নেত্রী, এ দেশের ১৬ কোটি মানুষের আশা-ভরসার স্থল, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের একমাত্র প্রতীক—যার দিকে সমগ্র বাংলাদেশ তাকিয়ে আছে, তাকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখতে চায়।’
সংগঠনের সভাপতি এস এম জিলানীর সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ ) বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশার, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবু প্রমুখ।
সারাবাংলা /এজেড/একে