Wednesday 11 Jun 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘যদি সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাস করো, তবে কেন মানুষ মারো’


২৭ এপ্রিল ২০১৯ ০৬:০৬
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

চট্টগ্রাম ব্যুরো: আড়াই বছর বয়সী শিশু। গলায় ‘আই ওয়ান্ট পিস’ লেখা প্ল্যাকার্ড নিয়ে দাঁড়িয়েছে রাস্তায়। স্কুলপড়ুয়া কিশোরী দাঁড়িয়েছেন ‘সহিংসতা নয়, সম্প্রীতি চাই’ লেখা ফেস্টুন নিয়ে। আরেকজনের গলায় ঝোলানো ফেস্টুন নজর কাড়ছে সবার। সেখানে লেখা, ‘যদি সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাস করো, তবে কেন মানুষ মারো ?’

শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) বিকেলে তারা সবাই জড়ো হয়েছিলেন নগরীর জামালখানে এ জি চার্চ স্কুলের সামনে। ইস্টার সানডেতে শ্রীলংকায় নারকীয় বোমা হামলার ঘটনায় সমব্যথী চট্টগ্রামের খ্রিস্টধর্মে বিশ্বাসী নাগরিকরা এক হয়েছিলেন সেখানে।

‘মৌন মানববন্ধন’ নামে ব্যতিক্রমী এই মানববন্ধনে যোগ দেন শিশু-কিশোর, বৃদ্ধ থেকে বিভিন্ন বয়সী নারীপুরুষ। মানববন্ধনে ছিল না কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য। গিটার বাজিয়ে সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে প্রার্থনা করেছেন বিশ্বশান্তির। বিশ্বজুড়ে হানাহানি, সংঘাত, রক্তপাত, হত্যা বন্ধের আহ্বান জানাতে গিয়ে এবং শ্রীলংকায় হতাহত নাগরিকদের কথা স্মরণ করে এসময় আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন অনেকে।

বিজ্ঞাপন

‘বিশ্বনেতাদের উদাসীনতার সুযোগ নিচ্ছে অপশক্তিগুলো’, ‘ক্ষমা ক্ষমার জন্ম দেয়’, ‘আমি শিশু, আমাকে বাঁচতে দাও’- এ ধরনের বিভিন্ন বক্তব্য লেখা ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে হাজির হওয়া খ্রিস্টবিশ্বাসীরা শুধু নিজধর্ম নয়, সারাবিশ্বের মানুষের জন্য শান্তি কামনা করেছেন। চট্টগ্রাম নগরীর জামালখান ক্যাথলিক চার্চ, পাথরঘাটা ক্যাথলিক চার্চ, সিয়োন ব্যাপটিস্ট চার্চ এবং ঐশীপ্রেম ব্যাপটিস্ট চার্চ থেকে খ্রিস্টবিশ্বাসীরা এসে মানববন্ধনে যোগ দেন।

এসময় অন্যান্যের মধ্যে খ্রিস্টান মিশনারি পরিচালিত চট্টগ্রামের এ জি চার্চ স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা মিসেস জে অধিকারী, মেমন গ্রামার স্কুলের শিক্ষক বার্নোবা গোমেজ, প্রকাশ মল্লিক, মৃণাল বাড়ৈ, এ জি চার্চের ফাদার আলফ্রেড অধিকারী ছিলেন।

বার্নোবা গোমেজ সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা এখানে প্রতিবাদ জানাতে আসিনি। আমরা শ্রীলংকায় যে মর্মান্তিক হামলা হয়েছে, সেখানে যারা প্রাণ হারিয়েছেন, যারা আহত হয়ে হাসপাতালে আছেন, তাদের এবং তাদের পরিবারের জন্য সহমর্মিতা ও সমবেদনা জানাতে এসেছি। আমরা একটি শান্তিময় বিশ্ব প্রার্থনা করছি।’

প্রসঙ্গত, গত রোববার (২১ এপ্রিল) ইস্টার সানডেতে শ্রীলংকার বিভিন্ন জায়গায় চার গির্জা, তিন হোটেল ও এক বাড়িতে বোমা হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা। হামলায় অন্তত ২৫৩ জন মানুষ প্রাণ হারান। আহত হন প্রায় পাঁচ শতাধিক। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৫৮ জনকে গ্রেফতার করেছে শ্রীলংকা পুলিশ।

হামলার দু’দিন পর মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) নিজস্ব বার্তা সংস্থা আমাক’এ প্রকাশিত এক বিবৃতিতে দায় স্বীকার করে জঙ্গি গোষ্ঠী আইএস। তবে তাদের দাবির পক্ষে বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেনি তারা।

হামলার পরপরই স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, এই হামলার বিষয়ে আগ থেকেই শ্রীলংকাকে সতর্ক করেছিল ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা। শ্রীলংকার পুলিশ প্রধান এ বিষয়ে দেশের শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তাদের অবহিত করেছিলেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী, প্রেসিডেন্ট বা প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের এ তথ্য জানানো হয়নি। এমনকি নেওয়া হয়নি কোনো নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।

এদিকে, রয়টার্স জানিয়েছে, হামলা প্রতিরোধে ব্যর্থ হওয়ায় বুধবার (২৪ এপ্রিল) প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও পুলিশ প্রধানকে পদত্যাগের নির্দেশ দেন সিরিসেনা।

শ্রীলংকা জানায়, হামলায় অংশ নেয় মোট ৯ জন বোমারু। তাদের মধ্যে একজন নারীও ছিলেন। মোট আট জনের নাম পরিচয় শনাক্ত করতে পেরেছে পুলিশ। এর মধ্যে স্থানীয় চরমপন্থি দল ন্যাশনাল তৌহিদ জামাতের (এনটিজে) নেতা ও স্থানীয় এক বিত্তশালী পরিবারের তিন সদস্য রয়েছেন। এই হামলার পরিকল্পনায় ৬০ জন জড়িত ছিল বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

সারাবাংলা/আরডি/এসবি

চট্টগ্রাম শ্রীলংকায় বোমা হামলা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর