১৫ সেবা নিয়ে আসছে নতুন অ্যাপ ‘রেলসেবা’
২৭ এপ্রিল ২০১৯ ১১:৩৯
ঢাকা: প্রথমবারের মতো অ্যাপের মাধ্যমে রেলের টিকিটকাটাসহ ১৫ ধরণের সেবা দিতে অ্যাপ চালু করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। এ লক্ষ্যে আগামীকাল রোববার (২৮ এপ্রিল) উদ্বোধন করা হবে ‘রেলসেবা’ (Rail Sheba) নামের অ্যাপটি।
ইতোমধ্যে প্লে-স্টোরেও ছাড়া হয়েছে অ্যাপটি। তবে উদ্বোধনের পরই শুরু হবে এর কার্যক্রম। রেলের অনলাইন টিকিটি ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সিস্টেমস লিমিটেড বাংলাদেশ (সিএনএসবিডি) বাস্তবায়ন করেছে অ্যাপটি।
রেলওয়ে অ্যাপস বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান রেল ও মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব প্রণব কুমার ঘোষ সারাবাংলাকে জানান, প্রথমদিকে কমপক্ষে দশটি সেবা দিয়ে অ্যাপটি চালু করা হবে। এরমধ্যে প্রধান সেবাই হবে ট্রেনের টিকিটকাটা।
তিনি আরও জানান, আন্তঃনগর রেলে প্রতিদিন ৭০ হাজার যাত্রী যাতায়াত করে। এই ৭০ হাজার যাত্রীর অর্ধেক এখন অ্যাপের মাধ্যমে টিকিট কেটে যাতায়াত করতে পারবেন। অর্থাৎ মূল টিকিটের ৫০ ভাগ এই অ্যাপের মাধ্যমেই দেওয়া হবে।
রেলের নতুন এই অ্যাপটি সারাবাংলা.নেট বিশেষ ব্যবস্থায় চালিয়ে দেখেছে। সেখানে দেখা গেছে রেজিস্ট্রেশন করে এই অ্যাপে প্রবেশ করতে হবে।
যারা ইতোপূর্বে মোবাইল নাম্বার দিয়ে ট্রেনের টিকিট কেটেছেন অথবা অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করেছেন তাদের আগের পাসওয়ার্ড দিয়েই অ্যাপে ঢুকতে হবে। তারপর প্রথম স্ক্রিনে নয়টি তথ্য দেখা যাবে। প্রথমেই টিকেট ক্রয়, এরপরে তথ্য অনুসন্ধান, হিস্ট্রি, ফুড অর্ডার, ট্রেনট্রেকিং, রেলের কোচ ভিউ, কমেন্ট রেটিং ও কন্ট্রাক্ট অপশন রয়েছে।
এ বিষয়ে রেলের অ্যাপ বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান সিএনএসবিডি সূত্র জানায়, এর মাধ্যমে অতীতের যেকোনো সময়েরর চেয়ে সহজেই একজন যাত্রী তার মোবাইল ফোন থেকে টিকিট কাটতে পারবেন।
সিএনএসবিডি চুক্তিভিত্তিক বাংলাদেশ রেলের প্রযুক্তিগত সুবিধা দেয়। এর মাধ্যমে টিকেটিং ব্যবস্থাপনাও করে তারা। তবে বিভিন্ন সময় তাদের সেবার মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এমনকি রেলের নিজস্ব লোকবলকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার কথা চুক্তিতে থাকলেও সেটা তারা করেনি। তাদের সার্ভার বিকল হয়ে যাওয়া এবং অতিরিক্ত যাত্রীর চাপ নিতে না পারারও অভিযোগ এসেছে বহুবার।
এ বিষয়ে রেল মন্ত্রণালয় জানায়, ২০০৭ সালে সিএনএসবিডির সঙ্গে যে চুক্তি হয় সেখানে রেলের নিজস্ব লোকবলকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার কথা ছিল। সেটা তারা করেনি। এছাড়া ২০১২ সালে যখন এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি শেষ হয় তখন এ নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে বাংলাদেশ রেলওয়ে। এরপর তিনমাস তিনমাস করে প্রায় ছ’মাস মেয়াদ বাড়িয়ে নেয় সিএনএসবিডি। মামলা ওঠানোর জন্য যখন রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ চাপ দেয়। তখন তারা নতুন করে আরও দুবছরের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়।
এরপর তারা ২০১৪ সাল পর্যন্ত মেয়াদ পায়। ওই বছর নতুন করে চুক্তি নবায়ন করা হয়। ২০১৪ সালের ওই চুক্তি ত্রুটিপূর্ণ ছিল এবং বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্মকর্তারা ওই চুক্তির সঙ্গে জড়িত ছিলেন তারা বিশদ বিষয়ে না জেনে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন এমনটা জানিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে এর একটি সূত্র।
আগামী সেপ্টেম্বরে সিএনএসবিডি সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ শেষ হচ্ছে। তখন নতুন করে দরপত্র আহ্বান করা হবে এবং তখন যারা প্রযুক্তিগত সুবিধা ঠিকমতো দিতে পারবে এবং নানা যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়ায় যারা দক্ষতা সম্পন্ন প্রমাণিত হবে তাদের নিয়োগ দেওয়া হবে।
তবে সিএনএসবিডি প্রায় আড়াই বছরের আরও এক্সটেনশন চাইলেও সাড়া দেয়নি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। এরপর থেকে এটা সম্ভব নয় বলে এরই মধ্যে সিএনএসবিডিকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
রেলভবন সূত্র জানায়, অনলাইনে ঈদের সময় একসঙ্গে প্রায় দেড় লাখ হিট পড়ে। তবে সিএনএসবিডির যে সক্ষমতা তাতে মাত্র ২০ হাজার লোড নিতে পারে।
মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব প্রণব কুমার ঘোষ জানান, ৫০ ভাগ টিকিট অ্যাপের মাধ্যমে দিয়ে প্রথমদিকে পরীক্ষা করা হচ্ছে তবে রেলওয়েও ইচ্ছা আছে শতভাগ অ্যাপের মাধ্যমে ছেড়ে দেওয়ার।
রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন এখনই ১০০ ভাগ টিকিট অনলাইন এবং অ্যাপে দেওয়ার জন্য বলেছিলেন। তবে সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে এখনই শতভাগ নয় ৫০ ভাগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
সারাবাংলা/এসএ/এমআই