শেখ হাসিনা হত্যাচেষ্টা: অ্যাটর্নির বক্তব্য পেলেই আপিল শুনানি
২৭ এপ্রিল ২০১৯ ১২:১৪
ঢাকা: গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ১০ আসামির ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিতকরণ) ও আপিল শুনানি প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। এখন শুধু আইনি পয়েন্টে অ্যাটর্নি জেনারেলের বক্তব্য শুনেই এ মামলাটি রায়ের জন্য দিন ঠিক করবেন হাইকোর্ট।
চলতি বছরের শুরুতে বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি মো. রিয়াজ উদ্দিন খানের হাইকোর্টে বেঞ্চে এ মামলার আপিল শুনানি শুরু হয়। এরপর গত মাসের শেষের দিকে আসামিপক্ষ এবং রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের মধ্য দিয়ে এ মামলার শুনানি প্রায় সম্পন্ন হয়। এখন আইনি পয়েন্টে অ্যাটর্নি জেনারেলের বক্তব্যের মাধ্যমে মামলাটি রায়ের দিকে যাবে।
এ মামলার সবশেষ বিষয়ে জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট আদালতের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জাহিদ সরোয়ার কাজল সারাবাংলাকে বলেন, ‘গত ১৭ জানুয়ারি থেকে এ মামলার আপিল শুনানি শুরু হয়েছে। প্রথমেই আমরা রাষ্ট্রপক্ষ থেকে এ মামলার পেপারবুক পড়ে শেষ করেছি। এরপর মামলার ফ্যাক্টের ওপর যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেছি। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে আমাদের বক্তব্য শেষে আসামিপক্ষে আইনজীবী এস এম শাজাহান, মো. আহসান ও আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইমদাদুল হক তাদের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন। এ মামলায় এখন মাননীয় অ্যাটর্নি জেনারেল আইনি পয়েন্টে তার বক্তব্য উপস্থাপন করবেন। এরপরই মামলাটি রায়ের জন্য দিন ঠিক করবেন আদালত।’
এর আগে একবার এ মামলাটি যুক্তিতর্ক পর্যন্ত পৌঁছেছিল। পরে হাইকোর্টের বেঞ্চ পরিবর্তন হলে মামলাটি ফের প্রথম থেকে শুরু হয়।
গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টার মামলায় ২০১৭ সালের ২০ আগস্ট ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-২-এর বিচারক মমতাজ বেগম ১০ জঙ্গির মৃত্যুদণ্ডের রায় দেন। এছাড়া চার আসামিকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এ মামলার রায়সহ সব নথি ওই বছরের ২৪ আগস্ট হাইকোর্টে পাঠানো হয়।
এরপর প্রধান বিচারপতির কাছে নথি উপস্থাপন করা হলে তিনি জরুরিভিত্তিতে পেপারবুক তৈরির নির্দেশ দেন। প্রধান বিচারপতির নির্দেশে পেপারবুক তৈরি করা হয়। এরপর মামলাটি শুনানির জন্য বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেনের বেঞ্চ নির্ধারণ করে দেন।
এ মামলায় নিম্ন আদালতের রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন, ওয়াসিম আকতার, রাশেদ ড্রাইভার ওরফে আবুল কালাম, ইউসুফ ওরফে আবু মুসা হারুন, শেখ ফরিদ ওরফে মাওলানা শওকত ওসমান, হাফেজ জাহাঙ্গীর আলম বদর, মাওলানা আবু বক্কর, হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া, মুফতি শফিকুর রহমান, মুফতি আবদুল হাই ও মাওলানা আবদুর রউফ ওরফে আবু ওমর।
এছাড়া মেহেদি হাসান ওরফে আবদুল ওয়াদুদকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আনিসুল ওরফে আনিস, মো. মহিবুল্লাহ ওরফে মফিজুর রহমান এবং সরোয়ার হোসেন মিয়াকে ১৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও এক বছরের দণ্ড দেওয়া হয়েছে।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, ২০০০ সালের ২০ জুলাই গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমাবেশস্থলের পাশে তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে ৭৬ কেজি ওজনের বোমা পুঁতে রাখা হয়। শেখ লুৎফর রহমান মহাবিদ্যালয়ের উত্তর পাশের একটি চায়ের দোকানের পেছনে এ বোমা বিস্ফোরণের মাধ্যমে শেখ হাসিনাকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়েছিল বলে তদন্তে প্রকাশ পায়। এ ঘটনায় তৎকালীন কোটালীপাড়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) নূর হোসেন মামলা দায়ের করেন।
পরে ২০০১ সালের ৮ এপ্রিল ১৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। পরবর্তীকালে ২০০৯ সালের ২৯ জুন আরও নয়জনকে আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। এরপর ২০১০ সালে মামলাটি নিষ্পত্তির জন্য ঢাকা-২ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালে পাঠানো হয়। সেখানে এ মামলার বিচার সম্পন্ন হয়।
সারাবাংলা/এজেডকে/এমআই