Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আয় বৈষম্য ও তথ্য ঘাটতি এসডিজির বড় চ্যালেঞ্জ


২৭ এপ্রিল ২০১৯ ১৩:১৮

ঢাকা: জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বাস্তবায়নের চার বছর পার হলেও অগ্রগতি মূল্যায়নে এখনো বড় প্রতিবন্ধকতা হিসেবে কাজ করছে তথ্যের ঘাটতি। প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে অধিকাংশ লক্ষ্য ও সূচকেই বাংলাদেশের অগ্রগতি হতাশাজনক। এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্মের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

শনিবার (২৭ এপ্রিল) এসডিজি বাস্তবায়ন শুরুর চারবছর উদযাপন উপলক্ষে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলনকেন্দ্রে প্লাটফর্মের দিনব্যাপী নাগরিক সম্মেলনে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।

বিজ্ঞাপন

প্রতিবেদনে বলা হয়, এসডিজির মোট ১৭ অভীষ্ঠের মধ্যে প্রধান ছয়টি অভীষ্ঠ বাস্তবায়নে ৬৮ লক্ষ্য ও ৯৫ সূচক বেধে দেওয়া হলেও বেশ কিছু লক্ষ্য ও সূচকের অগ্রগতির তথ্য বাংলাদেশে নেই। আবার বেশ কিছু লক্ষ্য ও সূচক বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পৃক্তও নয়। শিক্ষা, শোভন কর্ম, অসমতা, জলবায়ু, শান্তি ও ন্যায়বিচার এবং উন্নয়ন অংশিদারিত্ব সংক্রান্ত ছয় অভীষ্টের মাত্র ৩৮ লক্ষ্য ও ৫০ সূচকের অগ্রগতির সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া গেছে।

এতে আরও বলা হয়েছে, এসডিজির বড় ছয় অভীষ্টের ৫০ সূচকের মাত্র ছয়টি সঠিক পথে রয়েছে। নির্ধারিত সময় ২০৩০ সালের মধ্যে এসব লক্ষ্য পূরণ হবে। এছাড়া ১৮টি সূচকের অবস্থা ভালো নয়। এ সব সূচকের লক্ষ্য পূরণ করতে হলে বাড়তি গুরুত্ব দিতে হবে। অবশিষ্ট ২৬ সূচকের অবস্থা একেবারেই ভালো নয়। ২০৩০ সালের মধ্যে এ সব লক্ষ্য পূরণ সম্ভব হবে না।

প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, নিম্নমাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার হার ১৯৯৮ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৩০ শতাংশ বেড়েছে। সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) বাস্তবায়নকালের তুলনায় এসডিজি সময়কালে শিক্ষার হার বেড়েছে। তবে শিক্ষা সমাপ্তি, প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষায় অন্তর্ভুক্তি, স্বাক্ষতার হার বৃদ্ধি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিদ্যুত, প্রযুক্তি ও স্যানিটেশন নিশ্চিত করার মতো সূচকে উন্নতি করতে হবে।

বিজ্ঞাপন

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ২০১৭ সালে মাথাপিছু জাতীয় আয় বৃদ্ধির হার ৫ দশমিক ৫৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। ২০০৭ সালে এর হার ছিল ২ দশমিক ৯৬ শতাংশ। এ সময়ে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৪ দশমিক ৪৩ শতাংশ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশে। তবে প্রবৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বৈষম্যও বাড়ছে। ১৯৯১ সালে দেশের দরিদ্রতম ৪০ শতাংশ মানুষের কাছে ১৭ দশমিক ৪১ শতাংশ সম্পদ থাকলেও বর্তমানে ১৩ দশমিক ০১ শতাংশে নেমে এসেছে।

বৈষম্যের চারটি সূচকের মধ্যে তিনটির লক্ষ্য পূরণ সম্ভব হবে না বলে প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে। একটি লক্ষ্যে বাড়তি গুরুত্ব দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত লক্ষ্য অর্জনে আট সূচকের একটিও কক্ষপথ্যে নেই বলে প্রতিবেদেন উঠে এসেছে। শান্তি ও ন্যায়বিচার অর্জনে ১০টি সূচকের মধ্যে খুব খারাপ সাতটি সূচকে। বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া হলে এ লক্ষ্যের তিনটি সূচকের পরিস্থিতি ভালো হতে পারে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

অনুষ্ঠানে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘উন্নয়ন, আধুনিকায়ন ও দারিদ্র দূরীকরণের লক্ষ্যে সরকার কাজ করছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অভাব, স্যানিটেশনের অভাব ও পানির অভাবসহ অনেক কিছুর অভাবের মূলে রয়েছে দারিদ্র্য। অনেকেই বলছেন, বৈষম্য মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। আমরাও সেটা স্বীকার করছি। সবার আগে দারিদ্র দূর করতে হবে। তারপর দূর করতে হবে বৈষম্য।’ এছাড়া এসডিজি বাস্তবায়নে তথ্য ঘাটতির পাশাপাশি অর্থায়নেও সমস্যা রয়েছে বলে দাবি করেন মন্ত্রী। লক্ষ্য পূরণে ২০৩০ সালের মধ্যে ৯২ হাজার ৮০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করতে হবে বলে জানান তিনি।

জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি মিয়া সেপ্পো বলেন, ‘এসডিজি অর্জনে তথ্যের ঘাটতি দূর করার উদ্যোগ নিতে হবে। উন্নয়নের সুবিধা সবার কাছে পৌঁছে দিতে স্থানীয়করণের দিকে গুরুত্ব দিতে হবে। তা ছাড়া এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক সমাজকে আরও বেশি সম্পৃক্ত করার উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

নাগরিক প্লাটফর্মের আহ্বায়ক ও বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে এসডিজি বাস্তবায়ন অগ্রগতি প্রতিবেদন তুলে ধরেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন।

সারাবাংলা/জেজে/এমআই

আয় বৈষম্য এসডিজি তথ্য ঘাটতি

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর