Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

প্রেস ক্লাবে মাহফুজউল্লাহকে সহকর্মী-স্বজনের শেষ শ্রদ্ধা


২৮ এপ্রিল ২০১৯ ২১:৫৮

ঢাকা: জাতীয় প্রেস ক্লাবে সহকর্মী ও স্বজনসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের শেষ শ্রদ্ধায় সিক্ত হলেন বিশিষ্ট সাংবাদিক ও লেখক মাহফুজউল্লাহ। এসময় তারা বলেন, তার প্রয়াণে জাতি সাংবাদিকতা জগতের এক উজ্জ্বল নক্ষত্রকে হারিয়েছে। তার অভাব পূরণ হওয়ার নয়।

রোববার (২৮ এপ্রিল) বাদ আসর জাতীয় প্রেস ক্লাবে সাংবাদিক মাহফুজউল্লাহ’র জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এসময় সাংবাদিক, রাজনীতিবিদসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।

বিজ্ঞাপন

জানাজা শুরুর আগে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দেশে যে কয়জন প্রথিতযশা সাংবাদিক আমরা পেয়েছি, মাহফুজউল্লাহ তাদের মধ্যে অন্যতম। অসাধারণ একটি বন্ধুত্বপূর্ণ মানুষ তিনি। সাংবাদিকতাকে শুধু পেশা নয়, নেশা হিসেবে নিয়েছিলেন তিনি।

বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, মাহফুজউল্লাহ একাধারে সাংবাদিকতা করেছেন, লিখেছেন প্রায় ৫০টির মতো বই। সবগুলো বই গবেষণাধর্মী। তিনি ছাত্রজীবনে রাজনীতি করেছেন সামাজিক পরিবর্তনের জন্য। সারাজীবন তিনি নীতি-নৈতিকতার মধ্য দিয়ে গিয়েছেন। তার শেষ দিকে, বিশেষ করে বর্তমান সময়ে যখন গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় সংকট চলছে, যখন নীতি নৈতিকতা বিবর্জিত হচ্ছে, তখন নীতিকে আঁকড়ে ধরে রাখা অনন্য মানুষ ছিলেন তিনি। তিনি হঠাৎ এত তাড়াতাড়ি চলে যাবেন, আমরা কেউ ভাবতেও পারিনি।

মির্জা ফখরুল বলেন, বয়সে আমার ছোট হলেও মাহফুজউল্লাহ আমার অত্যন্ত ভালো বন্ধু ছিলেন। তিনি ছিলেন আমার পরামর্শক ও অনুপ্রেরণা। তাকে এভাবে আমাদের আগেই হঠাৎ করে চলে যেতে হবে, তার জানাজা পড়তে হবে, তা ভাবতেও পারছি না। দলের পক্ষ থেকে তার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করছি।

বিজ্ঞাপন

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) আ স ম আবদুর রব বলেন, মাহফুজউল্লাহ অত্যন্ত স্পষ্টবাদী ছিলেন। যে মুহূর্তে বাংলাদেশে স্পষ্টবাদী সাংবাদিকের বড় প্রয়োজন, ঠিক সেই মুহূর্তে তার মতো একজন সাংবাদিকতার উজ্জ্বল নক্ষত্র আমাদের মধ্য থেকে বিদায় নিলেন। এটা অত্যন্ত হৃদয় বিদারক।

জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, একে একে সাংবাদিকতার নক্ষত্ররা বিদায় নিচ্ছেন। সাংবাদিক মাহফুজউল্লাহও এ দেশের সাংবাদিকতার এক উজ্জ্বল নক্ষত্র ছিলেন। তিনি অন্তত ৫০টি বই লিখেছেন। ছাত্রজীবন থেকে স্বাধীকার আন্দোলন করে আসছেন। তিনি সাংবাদিকতার ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা করতেন।

প্রেস ক্লাবের আরেক সাবেক সভাপতি শফিকুর রহমান বলেন, মাহফুজউল্লাহর বিদায়ের মাধ্যমে আমি একজন বন্ধুকে হারালাম। তিনি ছাত্র ইউনিয়ন করতেন, আমি ছাত্রলীগ করতাম। আমাদের মধ্যে অনেক বিষয় নিয়ে বিতর্ক হতো। কিন্তু তা নিয়ে কখনো বিবাদ হতো না।

প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ও সাংবাদিক নেতা ইকবাল সোহবান চৌধুরী বলেন, মাহফুজউল্লাহ নীতি-আদর্শ ও রাজনৈতিক বিশ্বাসে আমাদের চেয়ে আলাদা হলেও স্পষ্ট আর্দশ-নীতি ও সাংবাদিকতার প্রতি একনিষ্ঠতার প্রমাণ রেখে গেছেন। তিনি সাহসী সাংবাদিকতার চর্চা করেছেন। এটা যেন আমরা ধরে রাখতে পারি, তার প্রয়াণে এটুকুই চাওয়া।

প্রেস ক্লাবের সভাপতি সাইফুল আলম বলেন, তিনি সময়ের অগ্রগামী একজন গবেষক, লেখক, সাহিত্যিক ও সাংবাদিক ছিলেন। এককথায় তিনি অত্যন্ত ভালো একজন মানুষ ছিলেন। দলমতের ঊর্ধ্বে একজন মানুষ ছিলেন। তাকে হারিয়ে এ মুহূর্তে বলার কোনো ভাষা নেই।

বিএফইউজে সহসভাপতি এবং সারাবাংলা ডটনেট, দৈনিক সারাবাংলা ও জিটিভি’র এডিটর ইন চিফ সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা, মানবজমিনের সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, সাবেক বিএফইউজে সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল, সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সাবেক উপাচার্য ড. এমাজউদ্দিন আহমেদ, ঢাবি আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্ট্রি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, নজরুল ইসলাম খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, আব্দুল্লাহ আল নোমান, মো. শাহজাহান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) নেতা ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী ও সাংবাদিকরা মাহফুজউল্লাহ’র জানাজায় অংশ নেন।

গত ২৭ এপ্রিল রাতে ব্যাংককের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন সাংবাদিক মাহফুজউল্লাহ। শনিবার রাতেই তার মরদেহ দেশে নিয়ে আসা হয়। এদিন দিবাগত রাত ১২টা ৪৫ মিনিটে থাই এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে তার মরদেহ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছায়।

মাহফুজউল্লাহ দীর্ঘদিন ধরে কিডনি ও উচ্চ রক্তচাপজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন। গত ২ এপ্রিল অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রেখে চিকিৎসা দেওয়া হয় তাকে। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ১০ এপ্রিল তাকে ব্যাংকক নিয়ে যাওয়া হয়।

সারাবাংলা/এসএইচ/টিআর

প্রেস ক্লাবে শেষ শ্রদ্ধা মাহফুজউল্লাহ সাংবাদিক মাহফুজউল্লাহ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর