নুসরাতকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন, জবানবন্দিতে স্বীকার অধ্যক্ষের
২৮ এপ্রিল ২০১৯ ২২:৫৬
ফেনী: কারাগারে থেকেই নুসরাত জাহান রাফিকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন বলে স্বীকার করেছেন সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল (ডিগ্রি) মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা। আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে তিনি বলেছেন, নুসরাতকে হত্যা করে সেই ঘটনাকে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়ার নির্দেশ তিনি দিয়েছিলেন সহযোগীদের।
রোববার (২৮ এপ্রিল) রাত পৌনে ৯টায় ফেনীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জাকির হোসাইনের আদালতে সিরাজের জবানবন্দি রেকর্ড শেষ হয়। এর আগে, দুপুর সাড়ে ৩টার দিকে কড়া নিরাত্তার মধ্য দিয়ে তাকে আদালতে হাজির করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
জবানবন্দি রেকর্ড শেষে পিবিআইয়ের চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিশেষ পুলিশ সুপার মো. ইকবাল জানান, সিরাজ উদ দৌলা নুসরাত হত্যাকাণ্ডের নির্দেশদাতা। নূর উদ্দিন ও শামীমকে তিনি বলেছিলেন নুসরাতকে হত্যা করে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দিতে। সেই অনুযায়ী তারা নুসরাতের শরীরে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে হত্যা করে এবং সে ঘটনাকে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে।
জেলা কারাগারে বন্দি সিরাজ উদ দৌলা কিভাবে নূর উদ্দিন ও শামীমের সঙ্গে এই পরিকল্পনা করেছিলেন— জানতে চাইলে পুলিশ সুপার মো. ইকবাল বলেন, মামলার স্বার্থে এই বিষয়টি এখন গোপন রাখা হচ্ছে।
নুসরাত জাহান রাফিকে যৌন হয়রানির মামলায় ২৭ মার্চ সিরাজ উদ দৌলাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ৮ এপ্রিল নুসরাতের ভাই মাহমুদুল হাসান নোমানের দায়ের করা মামলার ১ নম্বর আসামি করা হয় সিরাজ উদ দৌলাকে। ১০ এপ্রিল সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শরাফ উদ্দিনের আদালত তাকে ৭ দিনের রিমান্ড দেন।
সোনাগাজীর ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার আলিম পরীক্ষার্থী ছিলেন নুসরাত জাহান রাফি। গত ৬ এপ্রিল পরীক্ষা দিতে গেলে তাকে কৌশলে মাদরাসার ছাদে ডেকে নিয়ে যান অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার অনুসারী শামীম, জাবেদ, জোবায়ের, পপি ও মনি। তারা নুসরাতের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। শরীরের প্রায় ৮০ শতাংশ দগ্ধ নুসরাতকে সংকটাপন্ন অবস্থায় ওই দিনই ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে ভর্তি করা হয়। চার দিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে ১০ এপ্রিল রাত সাড়ে ৯টার দিকে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন নুসরাত।
এর আগে, নুসরাতকে নিজ কক্ষে ডেকে নিয়ে যৌন হয়রানির অভিযোগে গত ২৭ মার্চ অধ্যক্ষ সিরাজকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এ ঘটনায় নুসরাতের মা বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে। অধ্যক্ষ সিরাজ কারাগারে থেকেই সহযোগীদের মাধ্যমে মামলা তুলে নিতে চাপ ও হুমকি দেন নুসরাতের পরিবারকে। নুসরাতের পরিবার মামলা তুলে নিতে রাজি না হলে নুসরাতকে গায়ে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করেন সিরাজ।
গত ১০ এপ্রিল থেকে মামলাটির দায়িত্ব পায় পিবিআই। এ পর্যন্ত ২১ জন আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে, আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে ৯ জন।
আরও পড়ুন: নুসরাত হত্যায় ১৬ জন জড়িত, মে মাসেই চার্জশিট: পিবিআই
সারাবাংলা/এটি/টিআর