আরোহীর নিরাপত্তায় রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠানকে পুলিশের ৬ সুপারিশ
২৮ এপ্রিল ২০১৯ ২০:৫১
ঢাকা: আরোহীর নিরাপত্তায় মোটরসাইকেলে রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠানগুলোকে (উবার, পাঠাও, সহজ, ও ভাই ইত্যাদি) ছয়টি সুপারিশ করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগ। এর মধ্যে চালক নিয়োগের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বনের সুপারিশ যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে রাইড চলাকালে হেলমেট ব্যবহার, ট্রাফিক আইন মেনে চলা, মোটরসাইকেলের ফিটনেস পরীক্ষার মতো সুপারিশও।
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফাহমিদা হক লাবণ্য কাভার্ড ভ্যান চাপায় মারা যাওয়ার ঘটনাসহ বেশ কয়েকটি ঘটনার আলোকে এ সুপারিশ করা হয়েছে বলে জানান তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) বিপ্লব কুমার সরকার। রোববার (২৮ এপ্রিল) দুপুরে রাজধানীর শ্যামলীতে নিজ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ছয় দফা সম্বলিত সুপারিশ তুলে ধরেন।
ডিসি বলেন, ড্রাইভিং লাইসেন্স, ট্যাক্স টোকেন, রেজিস্ট্রেশন নম্বর ও ইনস্যুরেন্সের কাগজ ঠিক থাকলেই একজন মোটরসাইকেলচালকের অ্যাকাউন্ট ওপেন করা হয়। এক্ষেত্রে চালকের ড্রাইভিং স্কিল, শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা, দৃষ্টিশক্তি পরীক্ষা, তিনি আরোহী বহনে সক্ষম কি না— এসব তথ্যও যাচাই করা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। পাশাপাশি একজন বাইকচালক ঢাকা শহরে ট্রাফিক নিয়ম মেনে বাইক চালাতে সক্ষম কি না, সেটিও যাচাই করে দেখা জরুরি।
তিনি বলেন, অনেক সময় ফিলিং স্টেশনগুলোতে রাইড শেয়ারিং অ্যাপভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিনিধি উপস্থিত থাকেন। তারা ফিলিং স্টেশনে জ্বালানি নিতে আসা বাইকারদেরকে ড্রাইভিং লাইসেন্স, ট্যাক্স টোকেন, রেজিস্ট্রেশন নম্বর ও ইনস্যুরেন্স থাকলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অ্যাকাউন্ট ওপেন করে দেন। অন্যান্য দক্ষতা ও সক্ষমতা যাচাই ছাড়াই তার পেছনে যাত্রীকে তুলে দেওয়া প্রকারান্তরে রাইড ব্যবহারকারীকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়ার সামিল। এসব সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনে অ্যাপে রেজিস্ট্রেশন বন্ধ রেখে প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা যাচাইয়ের পর নির্ভরযোগ্য ব্যক্তিকে রেজিস্ট্রেশন দেওয়ার নিয়ম চালু করতে হবে।
পুলিশের এই উপকমিশনার বলেন, অ্যাপ পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়মিত বিরতিতে যথাযথ কর্তৃপক্ষের উপস্থিতিতে চালকদের শারীরিক ও মানসিক দক্ষতা পরীক্ষা করতে হবে। পাশাপাশি চালক নেশাগ্রস্ত কি না, চালকের ড্রাইভিং স্কিল ও মোটরবাইকের ফিটনেস আছে কি না— এসব বিষয়ও পরীক্ষার ব্যবস্থা রাখতে হবে। তাছাড়া বর্তমানে অনেক নারী এ ধরনের সেবা ব্যবহার করছেন। নারীদের প্রতি পূর্ণ সম্মান প্রদর্শনে উদাসীন ব্যক্তিরা যেন এ পেশায় না আসতে পারে, সেটাও নিশ্চিত করতে হবে।
বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, রাইড ব্যবহারকারীর উচিত অ্যাপে মোটরবাইকের যে নম্বর দেখানো হচ্ছে তা মিলিয়ে দেখা। চালকের ছবিও মিলিয়ে দেখতে হবে। চালকের সঙ্গে কথা বলে বোঝার চেষ্টা করতে হবে, তিনি বাইক চালানোর মতো অবস্থায় আছেন কি না। পাশাপাশি বাইকের ফিটনেস ভালো না থাকলে বা হেলমেট না থাকলে রাইডটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠবে, এ বিষয়গুলোও মাথায় রাখতে হবে।
রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠানগুলোতে মোটরসাইকেলের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে উল্লেখ করে তেজগাঁও বিভাগের এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, নির্ধারিত গন্তব্য ও নির্ধারিত ভাড়ার কারণে রাইডাররা সর্বনিম্ন জ্বালানি খরচে গন্তব্য পৌঁছার জন্য নিয়মিত ওভারটেকিং করে এবং ট্রাফিক সিগন্যাল লঙ্ঘন করে যত দ্রুতসম্ভব গন্তব্যে পৌঁছে পরবর্তী আরোহী ধরতে চায়। এ ক্ষেত্রে রাইডারদের ট্রাফিক আইন মেনে চলার বাধ্যবাধকতা তৈরি করতে হবে। পাশাপাশি আরোহীর অসন্তুষ্টি বা মতামতের ভিত্তিতে রাইডারের রেজিস্ট্রেশন বাতিলের ব্যবস্থাও রাখতে হবে।
ডিসি বিপ্লব কুমার আরও বলেন, কোনো চালকের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে তা গুরুত্ব দিয়ে খতিয়ে দেখতে হবে এবং অ্যাপ পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকেও এর দায় নিতে হবে।
সারাবাংলা/ইউজে/টিআর