শ্রেণিকক্ষে যৌন হয়রানির অভিযোগে ইউএসটিসি শিক্ষকের বিরুদ্ধে তদন্ত
২৮ এপ্রিল ২০১৯ ২৩:৫২
চট্টগ্রাম ব্যুরো: শ্রেণিকক্ষে শিক্ষকের কাছ থেকে ক্রমাগত যৌন নিপীড়নের শিকার হওয়ার অভিযোগ করেছেন ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি চট্টগ্রামের (ইউএসটিসি) ইংরেজি বিভাগের বিভিন্ন বর্ষের শিক্ষার্থীরা। শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের কাছে তারা এ বিষয়ে অভিযোগ করেন। তারা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে বিভিন্ন সময় অভিযোগ করেও বিচার না পেয়ে উপমন্ত্রীর দ্বারস্থ হয়েছেন।
এদিকে, উপমন্ত্রীর নির্দেশে ইউএসটিসি’র ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক মাসুদ মাহমুদের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের এই অভিযোগ তদন্তে নেমেছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)। তবে অভিযুক্ত অধ্যাপক মাসুদ মাহমুদের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ শিক্ষক রাজনীতির শিকার হয়েছেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাকে বের করে দিতে একদল শিক্ষক কয়েকজন শিক্ষার্থীকে ব্যবহার করে এই নোংরা খেলায় মেতেছেন।
ইউএসটিসি ইংরেজি বিভাগের স্নাতকোত্তর শ্রেণির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ছাত্রী সারাবাংলাকে বলেন, ‘লিটারেচার পড়াতে গিয়ে স্বাভাবিকভাবে রোমান্টিসিজমের প্রসঙ্গ আসে। তখন তিনি বিষয়টাকে ব্যক্তিগত পর্যায়ে নিয়ে যান। বিবাহিত ছাত্রী যারা আছেন, তাদের স্বামী-স্ত্রীর একান্ত ব্যক্তিগত সম্পর্কের বিষয়গুলো বর্ণনা করতে বলেন। এতে ছাত্রীরা লজ্জা পান।’
২৪তম ব্যাচের স্নাতক শ্রেণির এক ছাত্রী সারাবাংলাকে বলেন, ‘শারীরিক সম্পর্ক, ধর্ষণ, ইন্টারকোর্স এগুলো যেন উনার কাছে উপভোগ্য বিষয়। সেগুলো তিনি ছাত্রীদের কাছে সরসভাবে বর্ণনা করেন। একইভাবে ছাত্রীদের কাছ থেকেও উত্তর প্রত্যাশা করেন।’
অভিযোগকারীদের মধ্যে ১৭ জন ছাত্রীর পাশাপাশি ৫ জন ছাত্রও আছেন। স্মারকলিপিতে ১৪টি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ তুলে ধরা হয়েছে মাসুদ মাহমুদের বিরুদ্ধে।
বিভাগের দশম ব্যাচের মাস্টার্সের এক ছাত্র সারাবাংলাকে বলেন, ‘স্যার এমনভাবে কথা বলেন, আমরাও লজ্জা পাই। তিনি বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের যৌক্তিকতা নিয়ে কথা বলেন। তিনি শারীরিক সম্পর্কের পার্টনার পরিবর্তনের কথা বলেন। অথচ আমাদের সমাজ বাস্তবতায় এসব বিষয়ে সহজে প্রকাশযোগ্য নয়। আমরা বিভিন্ন সময় স্যারের কথার প্রতিবাদ করেছি। কিন্তু ফেল করিয়ে দেওয়ার ভয়ে কেউই এসব বিষয়ে মুখ খোলেন না।’
শিক্ষার্থীরা জানান, ১৬ এপ্রিল থেকে ২৩ এপ্রিল পর্যন্ত সময়ের মধ্যে মাসুদ মাহমুদের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ-সম্বলিত স্মারকলিপি তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, বোর্ড অব ট্রাস্টিজ ও জেলা প্রশাসকের কাছে দিয়েছিলেন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সেটি আমলে না নেওয়ায় ২৫ এপ্রিল তারা চট্টগ্রামে উপমন্ত্রী নওফেলের সঙ্গে দেখা করে স্মারকলিপি দেন। উপমন্ত্রী বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সিএমপি কমিশনারকে লিখিত নির্দেশনা দেন। ওই নির্দেশনা নিয়ে শিক্ষার্থীরা রোববার (২৮ এপ্রিল) সিএমপি কমিশনারের সঙ্গে দেখা করেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিএমপি কমিশনার মো. মাহাবুবর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টি তদন্তের জন্য আমাদের উত্তর জোনের উপকমিশনার বিজয় কুমার বসাককে দায়িত্ব দিয়েছি। তিনি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেবেন।’
ইউএসটিসি উপাচার্য ড. নূরুল আবসার সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি অভিযোগ পেয়েছি। তবে প্রশাসনিকভাবে এখনো কোনো ব্যবস্থা নিতে পারিনি। কারণ তারা শুধু আমাদের নয়, পুলিশ কমিশনার, জেলা প্রশাসক এমনকি মন্ত্রণালয়েও অভিযোগ দিয়েছে। অন্যরা কী ব্যবস্থা নেয়, আমরা সেটা দেখার অপেক্ষায় আছি।’
অভিযুক্ত শিক্ষকের বক্তব্য
অভিযুক্ত শিক্ষক মাসুদ মাহমুদ সারাবাংলাকে জানান, তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪০ বছর শিক্ষকতা করেছেন। অবসর গ্রহণের পর পাঁচ মাস আগে তিনি যোগ দিয়েছেন ইউএসটিসি’র ইংরেজি বিভাগের উপদেষ্টা হিসেবে। তার আগে ইউএসটিসিতে কখনো কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিল না। সবাই ছিল কলেজ শিক্ষক। যোগ দেওয়ার পর তিনি ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার মান উন্নত করার জন্য কয়েকজনকে চাকরিচ্যুত করেন এবং নতুন কয়েকজনকে নিয়োগ দেন। চাকরিচ্যুত শিক্ষকরা পরে আরও কয়েকজন শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীকে সঙ্গে নিয়ে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ এনেছেন।
ওই শিক্ষক সারাবাংলাকে বলেন, ‘ইংরেজি সাহিত্যের মধ্যে কয়েকটি কবিতা আছে যেগুলো পড়াতে গেলে স্বাভাবিকভাবেই সেক্সুয়ালিটি, ফার্টিলিটি, শারীরিক সম্পর্কের বিষয়গুলো আসে। কিন্তু তার মানে এই নয় যে কাউকে উত্ত্যক্ত করা হয়েছে। আমি পিএইচডি করেছি। বিভিন্ন দেশ থেকে আমার লেখা বই প্রকাশিত হয়েছে। আমি সারাদিন ক্লাস, ডিপার্টমেন্ট ও লেখালেখি নিয়ে থাকি। এ ধরনের নোংরা অভিযোগের মুখোমুখি হবো, সেটা কখনো ভাবিনি।’
সারাবাংলা/আরডি/এসবি
ইউএসটিসি ইউনিভার্সিটি অব সাইন্স এন্ড টেকনোলজি চট্টগ্রাম\ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় যৌন নিপীড়ন