‘তোমাদের আলো এসে যেন লাগে আমাদের চোখে’
২৯ এপ্রিল ২০১৯ ১৭:৩৯
ঢাকা: শিক্ষাজীবনের প্রায় একবছর পার করে ফেলেছেন লামিয়া তাসনিন। আর কদিন বাদেই শুরু হবে তার সম্মান প্রথম বর্ষের পরীক্ষা। একটু দেরিতে হলেও পরীক্ষা শুরুর আগে কলেজ কর্তৃপক্ষ আনুষ্ঠানিকভাবে সোমবার (২৯ এপ্রিল) তাদের বরণ করে নেয়। এতেই দারুণ খুশি লালমাটিয়া মহিলা কলেজের ইংরেজি বিভাগের এ শিক্ষার্থী।
সোমবার (২৯ এপ্রিল) কলেজ ক্যাম্পাসে সারাবাংলার এ প্রতিবেদককে লামিয়া বলেন, ‘আমাদের কলেজ এমনিতেই অনেক বেশি উৎসবমুখর। কিন্তু কী এক কারণে আমাদের নবীনবরণ বছরের শুরুতে দেওয়া হয়নি।’ তবে পরীক্ষা শুরুর আগে তাদের জন্য আয়োজিত নবীনবরণ অনুষ্ঠান এক ধরনের প্রশান্তি হিসেবে কাজ করবে বলে মনে করেন তিনি।
লালমাটিয়া মহিলা কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে সোমবার ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের সম্মান ও স্নাতক পর্যায়ের নবীন শিক্ষার্থীদের বরণ করে নেওয়া হয়। কলেজটির অধ্যক্ষ ড. রফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছিলেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. হারুন অর রশীদ এবং নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. অহিদুজ্জামান।
বরণ অনুষ্ঠানের শুরুতেই শিক্ষার্থী ও অতিথিদের উদ্দেশ্যে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন অধ্যক্ষ রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘শিক্ষায় যেমন আমরা প্রতিবছরই সেরাদের কাতারে থাকছি, সংস্কৃতিতেও আমরা সেই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে চাই। এ কলেজটি একটি পরিবারের মতো, যেখানে সব শিক্ষার্থীই আমাদের সন্তান। আমরা এমনভাবে তাদেরকে গড়ে তুলব যেন তারা জীবনে কোথাও না আটকায়। বেঁচে থাকার সাফল্য আজীবনের জন্য তাদের সঙ্গী হয়।’
অধ্যক্ষের বক্তৃতার পর লালমাটিয়া মহিলা কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম ও অতীত ইতিহাস-নির্ভর একটি প্রামাণ্যচিত্র দেখানো হয়। এরপর শর্মী ও তার দল ভরতনাট্যম নৃত্য দেখান দর্শকদের।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় হারুন অর রশীদ বলেন, ‘এত নারী শিক্ষার্থীর মাঝে এসে আমার মেয়ের কথা খুব মনে পড়ছে। আমি তাকে বলি, যে সংসারে একটি কন্যা সন্তান আছে, সে সংসারে কেউ যেন মাতৃহারা না হয়।’
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বলেন, ‘তোমাদের পিছিয়ে থাকলে চলবে না। শিক্ষা অর্জন করতে হবে। সেই শিক্ষা প্রয়োগ করার জন্য সচেষ্ট থাকতে হবে। এ পৃথিবী অনেক বড়, এক জীবনে অনেক কিছু করার আছে। তোমরা সময় নষ্ট করবে না। তোমরা মনোযোগ দিয়ে পড়বে এবং পৃথিবীকে আরও বেশি বাসযোগ্য করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজে নেমে পড়বে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এ অধ্যাপক আরও বলেন, ‘আমরা অনেক কষ্ট করে এ দেশ অর্জন করেছি। এখন এ দেশকে সুখি ও সমৃদ্ধ করে গড়ে তোলার জন্য তোমাদের প্রয়োজন। তোমাদের হাতের পরশে একটি সংসার যেমন ধীরে ধীরে সজীব হয়ে ওঠে, তেমনি করে এদেশকেও তোমরা সজীব করে তোলো। তোমাদের যেমন দেশ প্রয়োজন, দেশেরও ঠিক তোমাদেরকে প্রয়োজন।’
স্বাধীন বাংলাদেশ গড়তে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদানের ইতিহাস উল্লেখ করে এ সময় শিক্ষার্থীদের সবসময় কৃতজ্ঞ থাকার পরামর্শ দেন হারুন অর রশীদ।
নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য ড. অহিদুজ্জামান বলেন, ‘জ্ঞান এমন এক সম্পত্তি যার ভাগ কেউ নিতে পারে না। জ্ঞান দেওয়া যায়, কিন্তু দিলে কমে না। এ কলেজের প্রতিটি শিক্ষার্থীকে আমি বলব, তোমরা মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করো। বর্তমান বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নিজেকে এমন উচ্চতায় নিয়ে যাও যেন দূর থেকেও তোমাদের আলো এসে লাগে আমাদের চোখে।’
উল্লেখ্য, ১৯৬৬ সালে ১২ বিঘা জমির ওপর মাত্র ২৫ জন শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল লালমাটিয়া মহিলা মহাবিদ্যালয়। এখন এখানে পড়ছে প্রায় ছয় হাজার শিক্ষার্থী। শিক্ষক রয়েছে ১৫৩ জন। উচ্চমাধ্যমিক ছাড়াও ১৭টি বিষয়ে সম্মানসহ ১৫টি বিষয়ে স্নাতকোত্তর শিক্ষা দেওয়া হয় এ কলেজে।
শিক্ষা সেবায় অবদান রাখার জন্য ১৯৯১ সালে ঢাকা মহানগরের মধ্যে শ্রেষ্ঠ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিল। আর ২০১৫ সালে সারাদেশের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ভুক্ত কলেজগুলোর মধ্যে দশম হয়। ২০১৮ সালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি প্রথম স্থান অর্জন করে।
সারাবাংলা/টিএস/একে/জেডএফ