ভূমিক্ষয়: মুক্ত হচ্ছে কার্বন, ত্বরান্বিত হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তন
২ মে ২০১৯ ০৭:৪৩
ভূমিক্ষয় হওয়া থামাতে না পারলে, জলবায়ু পরিবর্তন থামানো সম্ভব হবে না। কেননা, বায়ুমণ্ডলের তুলনায় মাটিতে তিন গুণ বেশি কার্বন জমা হয়ে আছে। আর অরণ্যবিনাশ ও ত্রুটিপূর্ণ চাষের কারণে তা ধীরে ধীরে মুক্ত হয়ে বায়ুমণ্ডলে মিশছে। ফলে ত্বরান্বিত হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তন। মানুষের জন্য প্রকৃতির বিভিন্ন সুবিধা নিয়ে গবেষণাকারী সংস্থা ইন্টারগভার্নমেন্টাল সায়েন্স-পলিসি প্ল্যাটফর্ম অন বায়োডাইভার্সিটি অ্যান্ড ইকোসিস্টেম সার্ভিস (আইপিবিইএস) তাদের এক অপ্রকাশিত প্রতিবেদনে একথা জানিয়েছে। খবর বিবিসির।
চলতি সপ্তাহে বিশ্বের সরকারদের কাছে এ বিষয়টির গুরুত্ব তুলে ধরতে একটি বৈঠক করবে আইপিবিইএস। আগামী ৬ মে আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের প্রতিবেদনটি প্রকাশ করবে সংস্থাটি।
সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে পৃথিবীর জনসংখ্যা। বাড়ছে তাদের চাহিদা। আর সে চাহিদার জোগান দিতে বাড়ছে অরণ্যবিনাশ ও চাষের হার। অতিরিক্ত সেচ, অপরিকল্পিত ব্যবহার, অতিরিক্ত কীটনাশকসহ নানা কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মাটি। সেখান থেকে মুক্ত হচ্ছে জমে থাকা কার্বন।
ভূমিক্ষয় জলবায়ুকে দুইভাবে প্রভাবিত করছে— প্রথমত, বায়ুমণ্ডল থেকে কার্বন গ্রহণ করে গাছপালার বৃদ্ধি ব্যাহত হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, মাটির গভীরে জমে থাকা কার্বন বায়ুমণ্ডলে মুক্ত হয়ে যাচ্ছে।
প্রতি বছর হারিয়ে যাচ্ছে ৭৫০০ কোটি টন উর্বর মাটি
আইপিবিইএস’র চেয়ারম্যান অধ্যাপক স্যার বব ওয়াটসন বলেন, বর্তমানে পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় অনুর্বর মাটির শিকার হচ্ছেন প্রায় ৩২০ কোটি মানুষ। এ সংখ্যা পুরো পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক। এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই যে, পৃথিবীজুড়ে মাটি অনুর্বর হচ্ছে। আমরা মাটিতে থাকা জৈব কার্বন হারাচ্ছি। এতে হ্রাস পাচ্ছে আমাদের কৃষি উৎপাদন ক্ষমতা। ত্বরান্বিত হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তন। আমাদের অবশ্যই অনুর্বর মাটিগুলোকে পুনরায় আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে হবে।
তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন দেশের সরকাররা জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিচ্ছেন। কিন্তু জৈববৈচিত্র বা ভূমিক্ষয়ের দিকে তেমন নজর দেওয়া হয়নি। যদিও মানুষের সুস্থ জীবনের জন্য তিনটি বিষয়ই সমান গুরুত্বপূর্ণ।
যুক্তরাষ্ট্রের ক্র্যানফিল্ড ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক মাটি বিশেষজ্ঞ জেন রিকসন বলেন, পৃথিবীর উপরিভাগে মাটির পাতলা আবরণটিই বেশিরভাগ স্থলজ প্রাণীর বেঁচে থাকা ও বিলুপ্ত হওয়ার মধ্যকার ব্যবধান নিশ্চিত করে রেখেছে।
তিনি বলেন, ভূপৃষ্ঠের উপরিভাগের মাত্র ৩ শতাংশ স্থলজ উৎপাদনের জন্য উপযুক্ত। আর প্রতি বছর সেখান থেকে হারিয়ে যাচ্ছে ৭৫০০ কোটি টন উর্বর মাটি। যেখানে পুরো পৃথিবীর ভূপৃষ্ঠে এক সেন্টিমিটার গভীর মাটি তৈরি হতে সময় লাগে ৩০০ বছর।
উল্লেখ্য, ভূমিক্ষয়ের নির্দিষ্ট পরিমাণ নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। তব সবচেয়ে বেশি ভূমিক্ষয়ের ঘটনা ঘটেছে দক্ষিণ আমেরিকা, সাব-সাহারা, ভারত ও চীনে। কেননা এই অঞ্চলগুলোতে বনাঞ্চল ধ্বংসের হার সবচেয়ে বেশি।
সারাবাংলা/আরএ/টিএস