দুর্নীতি প্রশ্নে জিরো টলারেন্স, সিডিএতে যাত্রা শুরু দোভাষের
২৯ এপ্রিল ২০১৯ ২১:২৫
চট্টগ্রাম ব্যুরো: দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের বার্তা দিয়ে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) চেয়ারম্যান হিসেবে যাত্রা শুরু করেছেন নগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি জহিরুল আলম দোভাষ। রাজনৈতিক বিবেচনায় তাকে সিডিএর চেয়ারম্যান হিসেবে আগামী দুই বছর মেয়াদে নিয়োগ দিয়েছে সরকার। একই বিবেচনায় প্রথম নিয়োগ পাওয়া নগর আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদক মো. আবদুচ ছালামের স্থলাভিষিক্ত হলেন দোভাষ।
সোমবার (২৯ এপ্রিল) সকালে জহিরুল আলম দোভাষ সিডিএ চেয়ারম্যান হিসেবে তার দায়িত্ব বুঝে নেন। গত সপ্তাহে গণভবনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে দোয়া নিয়ে চট্টগ্রামে ফেরেন বর্ষীয়ান এই রাজনীতিক।
দায়িত্ব গ্রহণের পর সিডিএর সভাকক্ষে তাৎক্ষণিক এক সুধী সমাবেশে বক্তব্য রাখেন দোভাষ। তিনি বলেন, জনগণ সিডিএকে জনবান্ধব সংস্থা হিসেবে দেখতে চায়। জনগণের এই আশা বাস্তবায়ন করাই আমাদের সমন্বিত দায়িত্ব। সিডিএর সমস্ত কাজ স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার আওতায় আসতে হবে। চলমান উন্নয়ন প্রকল্পগুলো অবশ্যই স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার আলোকে বাস্তবায়িত হবে। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণা অনুযায়ী দুর্নীতির ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স শতভাগ মেনে চলবো।
চট্টগ্রাম নগরীকে জলাবদ্ধতামুক্ত করাকেই অগ্রাধিকার দিচ্ছেন জানিয়ে নগরবাসীর কাছে সময়ও চেয়েছেন তিনি।
দোষাভ বলেন, ‘আমরা জানি এ নগরীর প্রধান সমস্যা ও দুঃখ-দুর্দশা হচ্ছে জলাবদ্ধতা। চট্টগ্রাম শহরকে জলাবদ্ধতামুক্ত করতে প্রধানমন্ত্রী ৫ হাজার কোটি টাকার মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়নের নির্দেশ দিয়েছেন। যার কার্যক্রম সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘সদ্য বিদায়ী চেয়ারম্যান জনাব আবদুচ ছালাম সাহেবের বক্তব্যে আমরা জানতে পারি নগরী এ বছরে জলাবদ্ধতা মুক্ত হবে না এবং এর সুফল পেতে হলে আর তিন-চার বছর সময় লাগবে। তবে আমি দৃঢ়ভাবে প্রতিজ্ঞা করছি এ প্রকল্প যথাশীঘ্রই সম্ভব বাস্তবায়ন করে চট্টগ্রাম নগরবাসীকে জলাবদ্ধতার অভিশাপ থেকে মুক্ত করবো।’
সাধ ও সাধ্যের একটা সীমা আছে উল্লেখ করে জহিরুল আলম দোভাষ বলেন, ‘প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় সময়ের ব্যাপারটাও বিবেচনায় আনতে হবে।’
সিডিএ সচিব তাহেরা ফেরদৌসের সভাপতিত্বে সমাবেশে নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, সিডিএর বোর্ড সদস্য মো. গিয়াস উদ্দিন, প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস, নগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নঈম উদ্দিন চৌধুরী, সুনীল সরকার, ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল ও আলতাফ হোসেন চৌধুরী বাচ্চু, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য নোমান আল মাহমুদ শফিক আদনান, হাসান মাহমুদ শমসের, শফিকুল ইসলাম ফারুক, ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী, চন্দন ধর ও মশিউর রহমান চৌধুরীসহ অনেকে বক্তব্য রাখেন।
এরপর নতুন চেয়ারম্যান সিডিএর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে মত বিনিময় সভায় মিলিত হন।
গত ১৭ এপ্রিল রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে জহিরুল আলম দোভাষকে পরবর্তী দুই বছরের জন্য সিডিএ চেয়ারম্যান নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। চট্টগ্রামের রাজনীতিতে প্রয়াত মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত দোভাষ চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর হিসেবে টানা চারবার নির্বাচিত হয়েছিলেন।
২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালের ২৩ এপ্রিল সিডিএ চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছিলেন ব্যবসায়ী আবদুচ ছালাম। টানা ১০ বছর দায়িত্ব পালনের পর গত ২২ এপ্রিল তিনি বিদায় নেন।
পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত আধুনিকায়ন, আউটার রিং রোড, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, জলাবদ্ধতা নিরসনসহ সিডিএর বেশ কয়েকটি মেগাপ্রকল্পের কাজ চলমান আছে, যার সবই এসেছে ছালামের হাত ধরে। ১০ বছরের কর্মকাণ্ডে বিভিন্ন বড় বড় প্রকল্প এনে যেমন প্রশংসিত হয়েছেন ছালাম, তেমনি বিশেষজ্ঞ মতামত ছাড়া অপরিকল্পিতভাবে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের অভিযোগে সমালোচিতও হয়েছেন।
সারাবাংলা/আরডি/এমআই