খালে বাঁধ দিয়ে ‘হালদার পথে’ তেল আটকানোর চেষ্টা
২৯ এপ্রিল ২০১৯ ২২:২৩
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলায় সেতু ভেঙে খালে পড়া ওয়াগন থেকে জ্বালানি তেল ছড়িয়ে পড়ছে প্রায় দুই কিলোমিটার পর্যন্ত এলাকায়। তেল যাতে হালদা নদী পর্যন্ত পৌঁছাতে না পারে সেজন্য বিভিন্ন স্পটে বাঁধ দিয়ে আটকানোর চেষ্টা করছে উপজেলা প্রশাসন।
সোমবার (২৯ এপ্রিল) বিকেল তিনটার দিকে চট্টগ্রামের সিজিপিওয়াই ইয়াড থেকে হাটহাজারীর একশ মেগাওয়াট পিকিং প্ল্যান্টে ফার্নেস অয়েল নিয়ে যাবার পথে উপজেলার পূর্ব মধ্যম দেওয়ান নগর এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।
এসময় তিনটি ওয়াগন লাইনচ্যুত হয়ে রেলসেতু ভেঙে একটি খালে পড়ে যায়। সেই ওয়াগন থেকে স্থানীয় মরাছড়া খালে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে ফার্নেস অয়েল।
এদিকে তেল ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে খালের পানি থেকে তেল অপসারণের জন্য একযোগে মাঠে নেমেছে চট্টগ্রাম বন্দর, পরিবেশ অধিদফতর এবং উপজেলা প্রশাসন।
দুর্ঘটনার পরই তেল ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে মাঠে নামে হাটহাজারী উপজেলা প্রশাসন। মরাছড়া খালের সঙ্গে সংযোগ আছে দেশের মিঠাপানির মাছের একমাত্র প্রাকৃতিক প্রজননক্ষেত্র হালদা নদীর। প্রতিবছর চৈত্র-বৈশাখে হালদায় ডিম ছাড়ে মা মাছ। ডিম ছাড়ার এই মৌসুমে হালদা নদীতে তেল ছড়িয়ে পড়লে বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে হবে বলে আশঙ্কা উপজেলা প্রশাসনের।
হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুহুল আমীন সারাবাংলাকে বলেন, ‘তেল যাতে হালদা পর্যন্ত যেতে না পারে, সেটাকেই আমরা অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ শুরু করেছি। দুপুর পর্যন্ত দুই কিলোমিটার এলাকায় তেল গেছে। আমরা ১০টি বাঁধ দিয়েছি। ইনশল্লাহ বৃষ্টি না হলে তেল আর ছড়াতে পারবে না। হালদা সবশেষ বাঁধ থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে আছে। কাল (মঙ্গলবার) থেকে তেল তুলে ফেলার চেষ্টা করবো। তবে বৃষ্টি হলে বিপদে পড়তে হবে।’
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (পরিকল্পনা ও প্রশাসন) মো. জাফর আলম সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, তেল ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে হালদা নদীতে বন্দরের দুটি বে-ক্লিনার মোতায়েন আছে। এর সঙ্গে সনাতন পদ্ধতিতে তেল অপসারণের জন্য ছয়টি সাম্পানে করে আলাদা টিমও বে-ক্লিনারের সঙ্গে পাঠানো হয়েছে।
এছাড়া অয়েল রিকভারি বুম এবং টাগবোট কাণ্ডারি-১০ কর্ণফুলী নদীর শাহ আমানত সেতু এলাকায় রাখা হয়েছে। রাত ১০টা থেকে কাজ শুরুর পরিকল্পনা তাদের আছে বলে জানিয়েছেন বন্দরের এই কর্মকর্তা।
পরিবেশ অধিদফতর, চট্টগ্রাম জেলার উপপরিচালক ফেরদৌস আনোয়ার সারাবাংলাকে বলেন, ‘খালে পড়া ওয়াগনটিতে প্রায় ২৪ হাজার লিটার ফার্নেস অয়েল ছিল বলে আমরা জানতে পেরেছি। মেকানিক্যালি এবং ম্যানুয়ালি- দুই পদ্ধতিতেই এই তেল অপসারণের চেষ্টা আমরা করে যাচ্ছি। সীতাকুণ্ডে শিপইয়ার্ড থেকে সাকার মেশিন কেনা হচ্ছে। সেটি পানি থেকে তেল অপসারণ করতে পারে। বন্দরের টিমও আসছে। উপজেলা প্রশাসনও কাজ করছে। বৃষ্টি না হলে তেল কোনোভাবেই ছড়িয়ে পড়তে পারবে না।’
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা মো. নাসির উদ্দিন সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, খালে পড়া ওয়াগনটি তুলতে চট্টগ্রাম থেকে একটি রিলিফ ট্রেন রাত ৮টার দিকে ঘটনাস্থলের কাছাকাছি পৌঁছেছে। লাকসাম থেকে আরও একটি রিলিফ ট্রেন রাতের মধ্যে ঘটনাস্থলে পৌঁছাবে। যে দুটি ওয়াগন কাত হয়ে আছে সেগুলোতে ২৪ হাজার লিটার করে ফার্নেস অয়েল আছে। দুর্ঘটনার ঝুঁকি এড়াতে আলাদা ওয়াগনে তেলগুলো নিয়ে বিদ্যুৎকেন্দ্রে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
নাসির উদ্দিন বলেন, ‘আমার কাছে পর্যাপ্ত ওয়াগন আছে। সেগুলো আনার জন্য তো আগে রেললাইন মেরামত করতে হবে। আমরা বাইপাস রেললাইনের সঙ্গে মূল লাইনের সংযোগ করে দিচ্ছি। সেই লাইন দিয়ে ওয়াগন আসবে। তারপর দুর্ঘটনায় পড়া ওয়াগন থেকে তেল নিয়ে বিদ্যুৎকেন্দ্রে পাঠানো হবে।’
দুর্ঘটনার পর থেকে চট্টগ্রাম থেকে নাজিরহাটগামী ট্রেন চলাচল বন্ধ আছে। বাইপাস লাইন চালু হলে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হবে বলে জানিয়েছেন নাসির উদ্দিন।
মঙ্গলবার সকাল ৮টা নাগাদ ট্রেন চালানোর অনুমতি দিতে পারবেন বলেও জানিয়েছেন রেলওয়ের এই কর্মকর্তা।
এদিকে অগ্নিকাণ্ডের আশঙ্কায় ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিসের দুটি গাড়ি মোতায়েন করা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না হওয়া পর্যন্ত সেগুলো ঘটনাস্থলে থাকবে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক জসিম উদ্দিন।
সারাবাংলা/আরডি/এমআই