‘জঙ্গি-সন্ত্রাসের সামান্য আলামত পেলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানান’
২৯ এপ্রিল ২০১৯ ২৩:০১
সংসদ ভবন থেকে: দেশের কোথাও জঙ্গি-সন্ত্রাসবাদের সামান্য আলামত পেলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানাতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, এ ধরনের সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের ঘটনা মেনে নেওয়া যায় না। সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। এর বিরুদ্ধে দেশের সব মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। দেশের কোথাও এতটুকু জঙ্গি-সন্ত্রাসবাদের আলামত দেখলেও সঙ্গে সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে খবর দিন। আমরা এ ধরনের সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের বাংলাদেশে আর দেখতে চাই না। বাংলাদেশকে আমরা উন্নত ও শান্তির দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।’
আরও পড়ুন- ফ্লোর পেয়েই খালেদার মুক্তি চাইলেন এমপি হারুন
সোমবার (২৯ এপ্রিল) রাতে সংসদ অধিবেশনে তিনি এসব কথা বলেন। জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন।
অধিবেশনে নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের মসজিদ, শ্রীলংকার গির্জা ও হোটেলে সন্ত্রাসী হামলা, ফেনীর সোনাগাজীতে মাদরাসাছাত্রী নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ এবং এসব সন্ত্রাসী ও যৌন নিপীড়নের ঘটনার বিরুদ্ধে বাংলাদেশসহ বিশ্বের সব সংসদ, সরকার ও নাগরিকদের প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে আনীত সাধারণ প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রস্তাবটি সমর্থন করে প্রধানমন্ত্রী শ্রীলংকায় বোমা হামলার তীব্র নিন্দা জানান। তিনি বলেন, শান্তিপূর্ণ দেশ নিউজিল্যান্ডেও নামাজ পড়া অবস্থায় ৫৩ জন মুসল্লিকে হত্যা করে একজন খুনি ক্যামেরা মাথায় নিয়ে। সে একজন উগ্রবাদী খ্রিষ্টান ছিল। ওই হামলা থেকে আমাদের জাতীয় ক্রিকেট টিমের সদস্যরা অল্পের জন্য বেঁচে যান।
তিনি বলেন, জঙ্গিবাদ শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বব্যাপী সমস্যা। শ্রীলংকায় বোমা হামলায় নিষ্পাপ শিশু জায়ান চৌধুরী নিহত হয়। প্রায় ৪২ জন বিদেশি মারা যান ওই ভয়াবহ হামলায়। আত্মঘাতী সন্ত্রাসীরা এই হামলা করেছে। এ ধরনের জঘন্য ঘটনার আমরা নিন্দা জানাই। বাংলাদেশের প্রতিটি জনগণকে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সজাগ ও সতর্ক থাকতে আহ্বান জানাব। হলি আর্টিজানে হামলার পর আমরা কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছি। গোয়েন্দা সংস্থা সঠিক সময়ে সংবাদ দিতে পারছে বলেই অনেক জীবন রক্ষা পাচ্ছে।
দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোথাও কোনো অস্বাভাবিক ঘটনা দেখলে সঙ্গে সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা ও গোয়েন্দা বাহিনীকে জানাবেন, যেন আমরা পদক্ষেপ নিতে পারি। আর জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেব। জঙ্গিবাদ দমনে যা যা করার দরকার, তা করা হবে।
সংসদ নেতা বলেন, যারা এ ধরনের হামলা করে, তাদের কোনো ধর্ম নেই। আল্লাহ-রাসূল মানলে তারা হত্যা করত না। ইসলাম ধর্ম পবিত্র ও শান্তির ধর্ম। কে মুসলমান, কে মুসলমান না, তা বিচার করার দায়িত্ব কারও নেই। কোরআনে এটা বলা নেই— কে মুসলমান, কে মুসলমান নয়, তা বিচার মানুষ করবে। এই বিচার করবেন আল্লাহ। যে এ ধরনের বিচার করতে যায়, সে তো আল্লাহকেই মানে না। তাই শান্তির ধর্মকে কলুষিত করা— এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ তার পরিবারের সদস্যদের হত্যা ও ২১ আগস্টের ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যার পর বিচার চাওয়ার অধিকার পর্যন্ত কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। স্বজন হারিয়েও বুকে পাথর চেপে সংগ্রাম করেছি। আবার খুনীদের পুরস্কৃত করা হয়েছিল। যে দেশে খুনীদের পুরস্কৃত করা হয়, সে দেশে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ বৃদ্ধি পাবে— এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আমরা প্রতিহিংসা চরিতার্থ করিনি। ইনডেমনিটি আইন বাতিল করে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের ব্যবস্থা করেছি। আর এ ধরনের ঘটনা বাংলাদেশে ঘটুক, তা চাই না।
নুসরাত হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হবে
ফেনীর সোনাগাজীর মাদরাসা শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে যৌন হয়রানি ও গায়ে পেট্রোল দিয়ে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়া হবে বলে সংসদে জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, যারাই এ ধরনের ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জড়িতরা কে কোন দলের, তা দেখা হবে না। যৌন নিপীড়ন যারা করবেন, তাদেরও রেহাই নেই। অনেকেই কঠোর আইনের কথা বলেছেন। আইন রয়েছে। কিন্তু প্রয়োজনে আরও কঠোর আইনের ব্যবস্থা করতে হলে আমরা করব। অপরাধীদের যেন সর্বোচ্চ শাস্তি হয়, সেই ব্যবস্থাই আমরা করব।
শেখ হাসিনা বলেন, নুসরাতকে ওই মাদরাসার অধ্যক্ষ যৌন নির্যাতন করে। মামলা প্রত্যাহারে প্রচণ্ড চাপ দেওয়া হয়। সাহসী মেয়ে নুসরাত তাতে রাজি হয়নি। এ কারণে তাকে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনার পর সেই মেয়েটাকে চরিত্রহীন বানানোর চেষ্টা করা হয়। অধ্যক্ষের সঙ্গে আমাদের দলের কয়েকজন জড়িত ছিল। সঙ্গে সঙ্গে নির্দেশ দেই, তাদের গ্রেফতার করা হয়। কারণ অপরাধ অপরাধীই, সে যে দলেরই হোক।
নুসরাত হত্যায় তার শিক্ষকের জড়িত থাকার উল্লেখ করে তিনি বলেন, শিক্ষক পিতার সমতুল্য। কিন্তু শিক্ষক যদি রক্ষক না হয়ে ভক্ষক হয়, তবে বলার কী থাকে!
বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় থাকার সময়ের অগ্নিসন্ত্রাসের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় এসে নির্মমভাবে মানুষ হত্যা করেছে, মা-বোনদের সম্ভ্রম কেড়ে নিয়েছে। বিএনপি-জামায়াত যদি অগ্নিসন্ত্রাস করে শত শত মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা না করত, তবে ওই অধ্যক্ষের মাথায় হয়তো নুসরাতকে ওইভাবে পুড়িয়ে হত্যার চিন্তা আসত না। তাই এসব সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ ও অগ্নিসন্ত্রাসের বিরুদ্ধে দলমত নির্বিশেষ সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
সারাবাংলা/এএইচএইচ/টিআর
জঙ্গি জঙ্গি-সন্ত্রাসবাদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদ অধিবেশন