‘এত বড় বোমা বিস্ফোরণ আগে দেখিনি’
২৯ এপ্রিল ২০১৯ ২৩:৪১
ঢাকা: রাজধানীর মোহাম্মদপুর বসিলা মেট্রো হাউজিং এলাকার একেবারে শেষ মাথায় খালের ওপর টিনশেড একটি ঝুপরি বাড়িতে জঙ্গি আস্তানায় যে বোমা বিস্ফোরণ ঘটেছে, তা এর আগে দেখেননি বলে জানিয়েছেন র্যাব-২-এর সিপিসি কমান্ডার পুলিশ সুপার মহিউদ্দিন ফারুকী।
সোমবার (২৯ এপ্রিল) বিকেলে সারাবাংলাকে তিনি বলেন, এই জঙ্গি আস্তানায় একটি আইইডি (ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস) বোমা বিস্ফরিত হয়েছে। এর ফলে দুই জঙ্গির শরীর ছিন্ন ভিন্ন হয়ে গেছে। দু’জনের তিনটি পা আলাদাভাবে পাওয়া গেছে। একটি মাথা অক্ষত, আরেকটির একাংশ পাওয়া গেছে। এছাড়া শরীরের অন্যান্য অংশ টুকরো টুকরো হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, এর আগে অনেক জঙ্গি অভিযানে সরাসরি অংশ নিয়েছি। সেখানেও বোমা বিস্ফোরিত হয়েছিল। অনেক জঙ্গি মারা গেছে। তবু এভাবে শরীর টুকরো টুকরো হয়েছে, তা আগে কখনো দেখিনি। এত বিকট শব্দও শুনিনি। টিনের চাল উড়ে গিয়ে আরেক বাড়িতে পড়ার মতো অবস্থা দেখিনি।
ঘটনাস্থলে কাজ করা সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিটের ১২ সদস্যের নেতৃত্বে থাকা অতিরিক্ত উপকমিশনার তৌহিদুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, আমরা তিনটি পা পেয়েছি। এর মধ্যে একটি খালের পানিতে, একটি মসজিদের মেঝেতে, আরেকটি রুমের বাইরে পেয়েছি। মরদেহের অসংখ্য ছোট ছোট টুকরো কুড়িয়ে সংগ্রহ করতে হয়েছে।
জানতে চাইলে তিনিও বলেন, অনেক বড় একটি বিস্ফোরণ এটি। কারণ এত সহজে এতসব জিনিসপত্র চূর্ণবিচূর্ণ হতো না।
বিকেল ৪টায় বসিলার ওই জঙ্গি আস্তানায় অভিযান শেষ করে ব্রিফ করেন র্যাব-২-এর কমান্ডিং অফিসার (সিও) লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ। তিনি বলেন, ১৩ ঘণ্টার অনেক বড় একটি অভিযান শেষ করা হয়েছে। দুই জঙ্গির ছিন্ন-বিছিন্ন মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। চারটি অবিস্ফোরিত আইইডি বোমা জব্দ করা হয়েছে। এছাড়া চারটি পিস্তল, তিনটি ম্যাগজিন, ছয়টি গুলির খোসা, রামদা, চাপাতি, তার, লোহা, তালাসহ বেশকিছু সরঞ্জাম জব্দ করা হয়েছে।
অভিযান সমাপ্ত ঘোষণার পর সাংবাদিকদের ঘটনাস্থলে প্রবেশের অনুমতি দেয় র্যাব। ঘটনাস্থল ঘুরে দেখা যায়, বোমা বিস্ফোরণের ফলে কক্ষে থাকা ফ্যান মুচড়ে গেছে, ঘরে থাকা আসবাবপত্র ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে। মসজিদ ও আরেকটি কক্ষের মাঝখানে থাকা অর্ধেক দেয়াল দুমড়ে মুচড়ে পড়েছে। কেয়ারটেকার সোহাগ দম্পতির রুমের চালের টিন পর্যন্ত ঝাঁঝরা ও টুকরো টুকরো হয়ে আশেপাশে ছিটকে পড়েছে। এমনকি পাশের বাসার গরুর খামারে গিয়ে পড়েছে। কক্ষে থাকা টেলিভিশন, ফ্রিজসহ অন্যান্য আসবাবপত্রও ধ্বংস হয়ে গেছে। তোষক ও কিছু পোশাক আগুনে পুড়ে গেছে। সিআইডির টিম টুকরো টুকরো হয়ে যাওয়া মরদেহের অংশগুলো সংগ্রহ করলেও তখনও বেশকিছু টুকরো পড়েই ছিল।
স্থানীয়রা কী বলছেন
কাটাসুর এলাকার বাসিন্দা মোজাম্মেল মিয়াজি সারাবাংলাকে বলেন, রাত ৩টার দিকে জানতে পারি, ওয়াহাব মিয়ার টিনশেড বাড়িতে জঙ্গি আছে। তাই নিরাপত্তার জন্য আশপাশের বাসিন্দাদের সরিয়ে নেয় র্যাব। এরপর রাত সাড়ে ৩টার দিকে বিকট শব্দে বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পাই। সকাল সাড়ে ৮টার দিকে গোলাগুলির শব্দ শুনতে পাই। এসময় আরও একটি বিস্ফোরণের শব্দ হয়।
মেট্রো হাউজিংয়ের ৪ নম্বর রোডের বাসিন্দা বৃদ্ধ ইউনুস ব্যাপারী বলেন, রোববার দিবাগত রাত ১০টা থেকেই এই এলাকায় অনেক পুলিশ দেখতে পাই। তবে কেন এত বেশি পুলিশ এলাকায় এসেছিল, তা বলতে পারেন না তিনি।
মেট্রো হাউজিংয়ের বায়তুর নুর জামে মসজিদের পাশের বাসার ভাড়াটিয়া উম্মে কুলসুম শেফালী বলেন, ভোর থেকেই র্যাব আমাদের বাইরে বের হতে নিষেধ করে। এজন্য আমরা বের হইনি। পরে একজনের মাধ্যমে জানতে পারি, খালের ওপর একটা বাড়িতে নাকি জঙ্গিরা গুলি করেছ, বোমা ফাটিয়েছে। তারা নাকি মারাও গেছে। এরকম ঘটনা এর আগে শুনিনি, আর দেখিওনি। তাই একটা ভয় কাজ করছে।
জঙ্গি আস্তানা দেখতে আসা সাধারণ মানুষের ভিড় দেখা যায় আশপাশের এলাকায়। জানতে চাইলে আবু তালেব বলেন, কেমনে কী হলো, তা বুঝতে পারছি না। এখানে জঙ্গি এসে আস্তানা গড়েছে, তা কেউ বুঝতে পারি নাই। তবে এখন থেকে অপরিচিত কাউকে দেখলে বাসা ভাড়া দেওয়া হবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।
আরও পড়ুন-
দুই জঙ্গির পরিচয় নিশ্চিত করেছে র্যাব
বসিলার জঙ্গি আস্তানার আগুন নিয়ন্ত্রণে
এরা অবশ্যই জঙ্গি, নিহত অন্তত ২: র্যাব ডিজি
‘গোলাগুলি আর বোমের শব্দে রাতভর আতঙ্কে ছিলাম’
জঙ্গি আস্তানা সন্দেহ: ঘটনাস্থলে কমান্ডো টিম, আটক ৩
বসিলার জঙ্গি আস্তানায় একজনের ছিন্নভিন্ন দেহ, সুইপিং চলছে
থানার সীমানা জটিলতায় তথ্য ঘাটতি, র্যাব বলছে জঙ্গিরা আগেই ছিল
বসিলার বাড়িটিতে বোম ডিসপোজাল ইউনিটের অভিযান, ওড়ানো হচ্ছে ড্রোন
সারাবাংলা/ইউজে/টিআর