১৮ বছর ধরে ঝুলছে বৃদ্ধার মামলা, হাইকোর্টে নথি তলব
৩০ এপ্রিল ২০১৯ ১৬:১৬
ঢাকা: বৃদ্ধা রাবেয়া খাতুনের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও গুলি উদ্ধারের মামলাটি বিচারিক আদালতে ঝুলছে গত ১৮ বছর ধরে। এ মামলার কার্যক্রম ৩ মাসের জন্য স্থগিত করে নথি তলব করেছেন হাইকোর্ট।
সুপ্রিমকোর্টের এক আইনজীবীর করা আবেদনের শুনানি নিয়ে মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি মো.রিয়াজ উদ্দিন খানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
‘অশীতিপর রাবেয়া-আদালতের বারান্দায় আর কত ঘুরবেন তিনি ‘ শিরোনামে গত ২৫ এপ্রিল একটি দৈনিকে প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদন যুক্ত করে হাইকোর্টে আবেদন করেন আইনজীবী মো.আশরাফুল আলম নোবেল। এই আবেদনের শুনানি নিয়ে আদালত আজ এ আদেশ দেন। এ সময় আদালতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জাহিদ সরওয়ার কাজল।
পরে জাহিদ সরওয়ার কাজল সাংবাদিকদের জানান, মামলার নথি তলব করে বিচার বিলম্বের ব্যাখ্যা দুই সপ্তাহের মধ্যে জানতে চেয়েছেন আদালত। পরবর্তী আদেশের জন্য আগামী ১২ মে দিন রেখেছেন হাইকোর্ট।
পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে রাবেয়া খাতুনের বরাতে বলা হয়,‘১৮ বছর ধরে আদালতে হাজিরা দিয়েছি। মামলা শেষ হয় না। কবে শেষ হবে, তাও জানি না। পুলিশরে শরবত, মোরাব্বা বানাই খাওয়াছি। তারপরেও মামলায় আমারে আসামি বানাইছে। আমি আর বাঁচতে চাই না। মরতে চাই। অনেকদিন ধরে এই মামলায় হাজিরা দেই। আদালত আমাকে মামলা থেকে খালাসও দেয় না, শাস্তিও দেয় না।
অবৈধ অস্ত্র ও গুলি নিজ হেফাজতে রাখার অপরাধে তেজগাঁও থানার এসআই আবদুর রাজ্জাক বাদী হয়ে অশীতিপর রাবেয়া খাতুনসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করেন ২০০২ সালে। এরপর গ্রেফতার হন রাবেয়া। ছয় মাস কারাগারে থেকে জামিনও পান। পরে রাবেয়া ও আসামি জুলহাস ও মাসুদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। ২০০৩ সালের ২৪ মার্চ শুরু হয় এ মামলার বিচার।
তেজগাঁও থানা এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় রাবেয়া খাতুনকে। গ্রেফতারের সময় তার কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল ও ছয় রাউন্ড গুলি উদ্ধারের দাবি করে পুলিশ। সেই মামলা থেকে মুক্তি পেতে ঢাকার আদালতের বারান্দায় ১৮ বছর ধরে ঘুরছেন রাবেয়া।
গত ২৪ এপ্রিলও তিনি ঢাকা মহানগর ১ নম্বর অতিরিক্ত জজ আদালতের দোতলায় লাঠিতে ভর দিয়ে হাজির হন।
মানিকগঞ্জ জেলার দৌলতপুরের সমীরপুর গ্রামে জন্ম রাবেয়ার। টাঙ্গাইলের বাসিন্দা কৃষক স্বামী শাহজাহান সিরাজ কলেরায় মারা গেছেন অনেক বছর আগে। বর্তমানে রাবেয়া মিরপুর কাজীপাড়ায় তার ছোট মেয়ের বাসায় থাকেন। সেখান থেকে প্রতি তারিখে এসে আদালতে হাজিরা দেন।
২০০২ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আবদুল আজিজ তদন্ত শেষে ১২ জনকে সাক্ষী করে রাবেয়াসহ দুই আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। অপর এক আসামি মাসুদের বিরুদ্ধে সঠিক নাম-ঠিকানা খুঁজে না পাওয়ায় অব্যাহতির সুপারিশ করেন। আদালতের নথিতে জুলহাস বর্তমানে পলাতক। মামলাটিতে এ পর্যন্ত ১২ সাক্ষীর মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষ ৬ জনকে আদালতে উপস্থাপন করেছেন।
সারাবাংলা/ এজেডকে/জেডএফ