খালেদার সাজা হলে হরতাল-অবরোধ!
২৮ জানুয়ারি ২০১৮ ০৮:১১
স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
ঢাকা: জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট সংক্রান্ত দুর্নীতি মালায় খালেদা জিয়ার সাজা হলে হরতাল-অবরোধের মতো কঠোর কর্মসূচি দেবে বিএনপি। দলটির নীতিনির্ধারকরা মনে করেন, রাজনীতি থেকে দূরে রাখতেই বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এবং তার পরিবারের বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগে মামলা দিয়ে সাজার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সুতরাং প্রতিক্রিয়াও কঠোর হওয়া উচিত।
শনিবার রাতে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়। বৈঠক চলাকালে আড়াই মিনিটের সংক্ষিপ্ত ব্রিফিংয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম জানান’ বিচারের নামে সরকারি ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমে দেশবাসীকে স্বোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে।
কিন্তু এই ‘গণতান্ত্রিক আন্দোলন’ এর ধরন সম্পর্কে কিছু বলেননি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
রাত পৌনে ১২ টায় বৈঠক শেষ হওয়ার পর স্থায়ী কমিটির দুইজন সদস্যের সঙ্গে কথা বলে ‘গণতান্ত্রিক আন্দোলন’র ধরন সম্পর্কে আভাস পাওয়া যায়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই দুই নেতা জানান, স্থায়ী কমিটির বৈঠকে খালেদা জিয়া যে বিষয়টি বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন সেটি হলো- তার অবর্তমানে দলের ঐক্য বা অখণ্ডতা ধরে রাখা। অর্থাৎ তার সাজা হয়ে গেলে দলে যেন ভাঙন না ধরে। নেতারা যেন নিজেদের মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ্বে জড়িয়ে না পড়েন। শীর্ষ নেতারা পরস্পরের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে দলীয় কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেন। বিএনপির চেয়ারপারসন নিজে থেকে কোনো কর্মসূচির কথা বলেননি।
বৈঠকে স্থায়ী কমিটির দুইজন সদস্য খালেদা জিয়ার কাছে জানতে চান রায় বিপক্ষে গেলে কী ধরনের কর্মসূচি দেওয়া যেতে পারে? এ প্রশ্নের জবাব সরাসরি না দিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, কঠোর কর্মসূচি মানে তো হরতাল অবরোধ । কিন্তু এ ধরনের কর্মসূচি দিলে তো সবাইকে জেলে পুরে দেবে। তখন দল চলবে কীভাবে?
জবাবে স্থায়ী কমিটির দুইজন প্রবীণ সদস্য বলেন, আপনি কারাগারে থাকবেন আর আমরা বাসায় আরাম করব, তা কী করে হয়? তাছাড়া কড়া প্রতিক্রিয়া নাই দেখালে সরকার প্রচার করার সুযোগ পাবে, ‘মামলার রায় সঠিক হয়েছে বিধায়, কোনো শক্ত প্রতিক্রিয়া দেখায়নি বিএনপি। সুতরাং অস্তিত্ব রক্ষার জন্য হলেও কঠোর কর্মসূচি দিতে হবে বিএনপি।
এই কঠোর কর্মসূচি কী? তা জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য সারাবাংলাকে বলেন, এখন পর্যন্ত হরতাল- অবরোধই গণতান্ত্রিক কর্মসূচির মধ্যে সব চেয়ে কঠোর কর্মসূচি হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। সরকার আমাদেরকে হয়তো সেদিকে যেতেই বাধ্য করছে।
দলীয়সূত্রে জানা গেছে, রায় ঘোষণার দিনই কর্মসূচি ঘোষণা করবে বিএনপি। আর সে কর্মসূচি যদি হরতাল- অবরোধ হয়, তাহলে সেটি পালন করবে ১১ ফেব্রুয়ারি রোববার থেকে । তবে এবারের কর্মসূচি কোনো অবস্থাতেই ২০১৫ সালের মতো অনির্দিষ্ট কালের জন্য হবে না।
বরং প্রথম দফায় ৪৮ ঘণ্টার হরতাল বা একদিনের অবরোধ কর্মসূচি দেবে বিএনপি। পরে জনগণের পালস বুঝে এই কর্মসূচি বাড়াতে পারে তারা।
স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আরেকটি সম্ভাবনা নিয়েও আলোচনা হয় বলে জানা গেছে। কোনও কারণে যদি খালেদা জিয়া বেকসুর খালাস পান, তাহলে পুরোপুরি নির্বাচনী প্রস্তুতিতে নেমে যাবে বিএনপি। জেলায় জেলায় গণসংযোগের আবরণে নির্বাচনী প্রচার- প্রচারণায় নেমে পড়বে তারা।
এ ক্ষেত্রে প্রধান প্রধান জেলাগুলো সফর করবেন খালেদা জিয়া। ভেতরে ভেতরে চলতে থাকবে প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ।
তবে স্থায়ী কমিটির বেশিরভাগ সদস্য মনে করেন, মামলার রায় তাদের পক্ষে যাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। কারণ, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দুর্বল করার জন্যই এই মামলা। রায়ও হবে একই উদ্দেশ্য সামনে রেখে।
সারাবাংলা/এজেড