ফণীর ছোবলে ঝুঁকিতে বাংলাদেশ
৩ মে ২০১৯ ২০:০৬
ঢাকা: কোনও ধরণের ব্যাখ্যা ছাড়াই ফণীর ছোবলে বাংলাদেশ ঝুঁকিতে রয়েছে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়া অধিদফতরের পরিচালক সামছুদ্দিন আহমেদ। এছাড়া উপকূলীয় এলাকাগুলোতে চার থেকে পাঁচ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হতে পারে এমন আশঙ্কার কথাও জানান তিনি।এক্ষেত্রে উপকূলীয় অঞ্চলের অধিবাসীদের আশ্রয় কেন্দ্রে সরিয়ে নিতে সরকারি পদক্ষেপ কার্যকরের অনুরোধ জানান জ্যেষ্ঠ এই আবহাওয়াবিদ।
শুক্রবার (৩ মে) আবহাওয়া অধিদফতরে দিনের সবশেষ সংবাদ ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান সামছুদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ফণী যখন বাংলাদেশ অতিক্রম করবে সেসময় ঝড়ো হাওয়া থাকবে। বাতাসের গতিবেগ থাকতে পারে ১৪০ থেকে ১৫০ কিলোমিটার। তেমনটা হলে, অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের রূপেই বাংলাদেশে আঘাত করবে ফণী। কিন্তু এটি আরও ক্ষীণ হয়ে সর্বনিম্ন ৮০ থেকে ৯০ কিলোমিটার গতিবেগ নিয়েও বাংলাদেশে ঢুকতে পারে।
আরও পড়ুন: গতি কমেছে, মধ্যরাতে খুলনা-সাতক্ষীরায় আঘাত হানতে পারে ফণী
আবহাওয়া অধিদফতর ব্যাখা অনুযায়ী, ঘন্টায় ৬২ কিলোমিটার বাতাস হলেই তাকে ঘূর্ণিঝড় বলা হয়ে থাকে সে হিসেবে ফণীকে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় বলছে তারা।
আরও পড়ুন– উপকূলীয় ৯ জেলায় ৭ নম্বর বিপদ সংকেত
ফণীকে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন বলা হচ্ছে সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে সামছুদ্দিন আহমেদ বলেন, ঘূর্ণিঝড়কে চারটি মাত্রায় ফেলা হয়। ঘন্টায় বাতাসের গতিবেগ ৬২ থেকে ৮৮ কিলোমিটার হলে তাকে ঘূর্ণিঝড়। এটি যদি ঘন্টায় ৮৯ থেকে ১১৭ হলে প্রবল ঘূর্ণিঝড়, ঘন্টায় ১১৮ থেকে ২১৯ হলে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় আর ঘন্টায় ২২০ কিলোমিটার বা তারও বেশি হলে তাকে সুপার সাইক্লোন বলা হয়ে থাকে। ফণী যেহেতু ১৪০ থেকে ১৫০ এর মধ্যে থাকতে পারে তাই তাকে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় বলা হচ্ছে-বলেন সামছুদ্দিন আহমেদ।
ব্রিফিংয়ে পরিচালক শামছুদ্দিন আহমেদ
তিনি বলেন, ফণীর কারণে বাংলাদেশ ঝুঁকিতে এবং কোনও ব্যাখ্যা ছাড়াই ঝুঁকিতে রয়েছে। ফণীর প্রভাবে আজ ( ৩ মে) রাতে ঝড়ো হাওয়া এবং উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে জলোচ্ছ্বাস হবে। একইসঙ্গে আগামীকাল ( ৪ মে) দেশের আবহাওয়া থাকবে দুযোগপূর্র্ণ। এর পরের দিন অর্থ্যাৎ ৫ মে থেকে যা কিছুটা উন্নতি হতে শুরু করবে।
বিকাল সাড়ে তিনটারি ব্রিফিংয়ে পরিচালক সামছুদ্দিন আহমেদ বলেন, ফণী এরি মধ্যে উড়িষ্যা উপকূল অতিক্রম করেছে। এসময় বাতাসের গতিবেগ ছিল ১৮০ থেকে ২০০ কিলোমিটার। যা একটি অত্যন্ত শক্তিশালী ঘুর্নিঝড় হিসেবে অতিক্রম করেছে। এরপর পশ্চিমবঙ্গ দিয়ে বাংলাদেশের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। অগ্রসর হতে হতে খুলনা উপকূল স্পর্শ করে বাংলাদেশ অতিক্রম করতে থাকবে। এইসময়ে ঝড়ো হাওয়া হবে, জলোচ্ছ্বাস হতে পারে। এ কারনে আশেপাশের উপকূলীয় নয় জেলায় ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অফিস। তিনি জানান, উপকূলীয় জেলা ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোতে ৭ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।
আরও পড়ুন- ঘূর্ণিঝড় ফণী: আবহাওয়া দফতরের সবশেষ আপডেট
এছাড়া চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরকে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ৬ নম্বর সংকেতের আওতায় থাকবে।
তিনি বলেন, অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি, অতীতে এ ধরণের সামুদ্রিক ঝড়ের কারণে অনেক ক্ষয়ক্ষতি, প্রাণহানি ও শস্যের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তাই উপকূলীয় এলাকাগুলোতে যারা ঝুঁকির মধ্যে আছেন, তাদের দ্রুত আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া উচিত। তাদের নিজেদের জান-মালের স্বার্থেই।
আরও পড়ুন- ঘুর্ণিঝড় ফণির প্রভাব: বাগেরহাটে বেড়িবাঁধ ভেঙে ৪ গ্রাম প্লাবিত
মধ্যরাতে ফণী বাংলাদেশে পৌঁছাবে এর আগে বলা হলেও এখন কেন ছয়টা বলা হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঢাকাতে দুপুরে যে বৃষ্টি হচ্ছে তা ঘুর্ণিঝড় ফণীর মেঘ থেকেই হয়েছে। ক্ষেত্র কিন্তু প্রস্তুত হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের অতিক্রমে কখনও ছয়ঘন্টাও লাগতে পারে আবার কখনও ১০ ঘন্টাও লাগতে পারে। আমরা কিন্তু ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবের মধ্যেই রয়েছি মন্তব্য করে তিনি বলেন, ছয়টার দিকে যদি কোনও ঝড়ো হাওয়া হয় তাহলে তাকেই ধরে নিতে হবে যে ধীরে ধীরে র্ঘূণিঝড়ের বলয়ের মধ্যে পরে গিয়েছি অথবা ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানা শুরু করেছে কিংবা ঘুণিঝড় এসে গেছে।
পরিচালক বলেন, আমরা সাত নম্বার বিপদ সংকেত দিয়েছি। কোনও হুঁশিয়ারি সংকেত বা লঘুচাপের কথা বলা হয়নি। একে একটি শক্তিশালী ঘূণিঝড় হিসেবেই ধরতে হবে এবং সে ভাবে আমারা প্রস্তুতি নিয়েছি।
সারাবাংলা/জেএ/জেডএফ