অর্থনীতিতে যাকাতের অবদান নিশ্চিতে দরকার প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো
৪ মে ২০১৯ ১৪:৩০
ঢাকা: দেশে ৩০ হাজার কোটি টাকা যাকাত আদায়ের সম্ভাবনা থাকলেও সরকারিভাবে আদায় হচ্ছে মাত্র কয়েক কোটি টাকা। ব্যক্তির নিজস্ব উদ্যোগে দেয়া যাকাত বড় অবদান রাখছে না। এজন্য যাকাত আদায় ও বণ্টনে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো থাকা দরকার বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
শনিবার (৪ মে) সকালে রাজধানীর ফার্মগেটের কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে (কেআইবি) ৭ম যাকাত ফেয়ারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন। সেন্টার ফর যাকাত ম্যানেজমেন্ট (সিজেডএম) এ ফেয়ারের আয়োজন করে। মেলায় যাকাত সংক্রান্ত পরামর্শ ডেস্ক, বিভিন্ন ইসলামিক বই ও যাকাত ভিত্তিক বিভিন্ন কার্যক্রম তুলে ধরার জন্যে কয়েকটি স্টল রয়েছে। দিনব্যাপী এই মেলা শেষ হবে সন্ধ্যা ৬ টায়।
মেলা উপলক্ষ্যে ‘আয় বৈষম্য কমাতে যাকাত ও কর’ শীর্ষক এক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন পরিকল্পনা মন্ত্রী এ এম মান্নান। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলামের সভাপতিত্বে এতে আরও বক্তব্য রাখেন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিচারপতি আব্দুর রউফ, সাবেক এনবিআর চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আব্দুল মজিদ, ইসলামি ব্যাংক কনসালটেটিভ ফোরাম এর ভাইস চেয়ারম্যান এ কে এম নুরুল ফজল বুলবুল প্রমুখ।
পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, যাকাতের মাধ্যমে দারিদ্রতা দূর হতে পারে। দেশের বিশাল একটি অংশ যাকাত বিষয়ে সচেতন নয়। দারিদ্র্য এর একটি অন্যতম কারণ। যাকাতের মধ্যেও দারিদ্র্য দূরের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত আছে।
তিনি বলেন, ২০০৮ সালে আমরা যখন ক্ষমতায় এসেছিলাম তখন দারিদ্র্যের হার ছিল ৪৪ শতাংশ। আমরা তা ২০ থেকে ২১ শতাংশে নামিয়ে আনতে পেরেছি। একই সঙ্গে দেশে কোটিপতির সংখ্যা বাড়ছে, আয় বাড়ছে; এটি একদিকে ভালো। আবার কোটিপতি বা আয় বাড়ার কারণে দেশে আয় বৈষম্য বাড়ছে।
তিনি আরও বলেন, সরকারের সকল প্রকল্পে দারিদ্র্যরা কতটুকু উপকৃত হবে তা মাথায় রাখা হয়। কর মেলা করে আমরা উপকৃত হয়েছি। যাকাত ফেয়ারের মাধ্যমে দেশ উপকৃত হতে পারে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, দেশে আয় বৈষম্য ধীরে ধীরে বাড়ছে। গিনি কো ইফিসিয়েন্ট সূচক দিয়ে আয় বৈষম্য পরিমাপ করা হয়, এই সূচকের হিসেবে বাংলাদেশে বৈষম্যের মাত্রা ০.৪৮। দশমিক পাঁচ হলে অতিমাত্রার বৈষম্য রয়েছে বলে ধরে নেয়া হয়। আমরা সেই অবস্থানেই আছি।
তিনি বলেন, দারিদ্রতা ও আয় বৈষম্য কমাতে যাকাত খুবই গুরুত্বপূর্ণ। করের ক্ষেত্রে যেমন অনেকে কর ফাঁকি দেয়, তেমনি অনেকে যাকাত ফাঁকি দেয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ব্যক্তি উদ্যোগে যাকাত দেয়া হয়, কিন্তু তা টেকসই না। যাকাতকে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর রুপ দিয়ে বেশি সংখ্যক মানুষকে সাহায্য করা যেতে পারে।
বক্তারা আরও বলেন, ৩০ হাজার কোটি টাকার যাকাত আদায়ের সম্ভাবনা আছে। অথচ যাকাত বোর্ড আদায় করে মাত্র কয়েক কোটি টাকা। যাকাত আইন করা যেতে পারে। এনবিআরের মাধ্যমে যাকাত আদায় করা যায় কিনা ভেবে দেখা যেতে পারে। একই সঙ্গে যাকাত প্রদানকারীকে কর রেয়াত সুবিধা দেয়া যেতে পারে বলেও মনে করেন বক্তারা।
সারাবাংলা/ইএইচটি/জেএএম