কাজে আসছে না কোটি টাকার সিগন্যাল বাতি
৫ মে ২০১৯ ০৮:৩০
ঢাকা: রাজধানীতে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে স্থাপিত স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল বাতি অব্যবহৃত হয়ে পড়ে আছে। সেগুলো কোনো কাজেই লাগছে না। অথচ এই বাতিগুলোর বিদ্যুৎ খরচ, মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজে প্রতিমাসে প্রায় কোটি টাকা খরচ হচ্ছে। এই অর্থ ব্যয় করা হয় সিটি করপোরেশন থেকে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, সিটি করপোরেশন ও ট্রাফিক বিভাগের মধ্যে সমন্বয়হীনতা ও প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতির কারণে ট্রাফিক সিগন্যাল বাতিতে সফলতা আসছে না। রয়েছে প্রকল্প বাস্তবায়নকারীদের মধ্যেও আন্তরিকতার অভাব। যে কারণে মুখ থুবড়ে পড়েছে প্রকল্পটি।
রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক ঘুরে দেখা গেছে, কাজে না লাগলেও সড়কের মোড়গুলোয় কোথাও কোথাও সিগন্যাল বাতি জ্বলতে দেখা যায়। তবে বাতি জ্বললেও ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা পুলিশের হাতের মাধ্যমেই চলছে। দু’য়েকটি মোড়ে বাতির রঙ পরিবর্তনের সঙ্গে মিল রেখে ট্রাফিক পুলিশকে হাতের ইশারায় ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করতে দেখা গেছে। তবে এ সংখ্যা খুব বেশি নয়।
জানা যায়, ২০০৯ সালের ২২ নভেম্বর বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ‘ঢাকা আরবান ট্রান্সপোর্ট প্রকল্প’ এর আওতায় ৭০টি স্থানে ট্রাফিক সিগন্যাল বাতি স্থাপন করা হয়। এতে খরচ হয় ২৫ কোটি টাকা। এরপর ২০১৬ সালে তা ৭০টি থেকে বাড়িয়ে ১০০টি করা হয়। বর্তমানে ডিএনসিসিতে ৬০টি আর ডিএসসিসিতে ৪০টি সিগন্যাল বাতি রয়েছে। এরপরও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় কোনো উন্নতি হয়নি। বরং সড়কে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে লোকবল বাড়াতে হয়েছে। আগে যেখানে ৭০টি সিগন্যাল বাতির জন্য প্রতিমাসে ব্যয় হতো ৮০ লাখ টাকা সেখানে এখন ১০০টি সিগন্যাল বাতির জন্য খরচ করতে হচ্ছে প্রায় এক কোটির টাকা।
তবে এসব প্রকল্প কাজ না করলেও ২০১৮ সালের শুরুতে নতুন করে আরও একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। নতুন এই প্রকল্পে আগের মতো যন্ত্রনির্ভর না হয়ে যন্ত্রের নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা ট্রাফিক পুলিশের হাতে রাখার কথা বলা হয়। সড়কে গাড়ির চাপ বুঝে রিমোটের সাহায্যে ট্রাফিক নিজেই পরিবর্তন করতে পারবে সিগন্যালের ব্যাপ্তি। বলা হয়, নতুন এই পদ্ধতিতে সড়কে শৃঙ্খলা ফিরবে।
সিটি করপোরেশন থেকে ওই সময় বলা হয়েছিল, আগের সমন্বয়হীনতা কাটিয়ে শিগগিরই কার্যকর হবে রিমোট কন্ট্রোল অটোমেটিক বৈদ্যুতিক সিগন্যাল বাতি। শুরুতে পরীক্ষামূলকভাবে বাংলামোটরে চালুর পর পর্যায়ক্রমে রাজধানীর ৬২টি ইন্টারসেকশন আসবে এর আওতায়। ৩৫ কোটি টাকার ওই প্রকল্পের আওতায় পুরাতন বাতি মেরামতের পাশাপাশি ২ কোটি টাকায় কেনা হয় নতুন করে ১৩৪টি রিমোট কন্ট্রোল যন্ত্র। তবে এসবও কোনো কাজে আসেনি।
ওই প্রকল্প হাতে নেওয়ার পর একমাত্র গুলশান-২ গোলচত্বরেই সিগন্যাল মেনেই যান চলাচল শুরু হয়। সেখানে লাল বাতি জ্বলতেই থেমে যায় গাড়ি। নির্দিষ্ট কাউন্ট-ডাউন শেষে হলুদ, এরপর জ্বলে ওঠে সবুজ সংকেত। ঠিক তখনই ঘুরতে শুরু করে চাকা। নগরীর বাকি সড়কগুলোতে ট্রাফিক পুলিশের হাতের ইশারাই মেনেই চলাচল চলে যানবাহন। অথচ সিগন্যাল বাতি মেনেই গাড়ি চলার কথা রাজধানীতে।
যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ বুয়েটের অধ্যাপক শামসুল হক সারাবাংলাকে বলেন, ‘ভবিষ্যতে সিগন্যালের ব্যাপারে এককভাবে দায়ী থাকবে পুলিশ। সিটি করপোরেশন থেকে সম্পূর্ণ ট্রাফিক সিগন্যালকে আলাদা করে পুলিশের হাতে ছেড়ে দেওয়া উচিত। প্রয়োজনে তাদের লোকবল দিতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘রাজধানীতে যানজটের সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে নিয়ম না মানার অভ্যাস। সিগন্যালের যন্ত্র তো যন্ত্রের মতোই কাজ করবে। সেক্ষেত্রে সিগন্যাল বাতি প্রতিস্থাপন করতে স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রও লাগাতে হবে। যেন কেউ সিগন্যাল অমান্য করলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে মামলাও করা যায়।’
জানতে চাইলে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মীর রেজাউল আলম বলেন, ‘বিশ্বে ট্রাফিক পুলিশই এই কাজ করে। তবে শতভাগ সুফল পেতে ধীরে ধীরে পুরো দায়িত্ব পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া দরকার। সড়কের আয়তনের তুলনায় ঢাকায় গাড়ির সংখ্যা অনেক বেশি। উন্নয়নমূলক কাজের জন্য কোনোটাই সঠিকভাবে পালন করা যাচ্ছে না।’ ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে কী করা যায়, তা নিয়ে নতুন করে ভাবা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
সারাবাংলা/ইউজে/এমও