অশ্লীলতা কেলেঙ্কারির পরেও ২০০ কোটি দর্শক ইউটিউবে
৫ মে ২০১৯ ২০:১১
গত কয়েক বছরে যৌন অসদাচরণের অভিযোগসহ একাধিক বিতর্কের জন্ম দিয়েছে ভিডিও-শেয়ারিং জায়ান্ট ইউটিউব। অভিযোগ ওঠেছে প্ল্যাটফর্মটির ভিডিওগুলোতে আপত্তিকর ‘কনটেন্ট’ থাকায় কমেছে এর প্যারেন্ট-কোম্পানির শেয়ারের দর। কিন্তু সকল অভিযোগ নিয়েও প্রতি মাসে গড়ে ২০০ কোটি ব্যবহারকারীর মাইলফলক অতিক্রম করেছে ইউটিউব। ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য ডেইলি মেইলের এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য ওঠে এসেছে।
প্রতিবেদন অনুসারে, সম্প্রতি নিউইয়র্কে এক অনুষ্ঠানে গুগলের প্রধান নির্বাহী সুন্দর পিচাই বিজ্ঞাপনদাতাদের কাছে জানান, ইউটিউবের ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেড়েছে। ‘ক্ষতিকর কনটেন্ট’ থাকা সত্ত্বেও গড়ে প্রতি মাসের ইউটিউব ব্যবহারকারীর সংখ্যা ২০০ কোটি ছাড়িয়েছে।
তিনি জানান, তিনি জানান, গত প্রান্তিকে ইউটিউব ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল ১৮০ কোটি। সে তুলনায় এবারের প্রান্তিকে এর ব্যবহারকারীর সংখ্যা ২০ কোটি বৃদ্ধি পেয়ে পেয়েছে।
উল্লেখ্য, গুগল ও ইউটিউবের প্যারেন্ট-কোম্পানি অ্যালফাবেটের শেয়ারের দর পতন ও রাজস্বের হার কমে যাওয়ার পরিসংখ্যান প্রকাশের পর পরই ব্যবহারকারী বৃদ্ধির এই খবর প্রকাশ পায়।
অ্যালফাবেটের প্রধান আর্থিক নির্বাহী জানান, অ্যালফাবেটের শেয়ারের দর পতনের পেছনে ইউটিউবের ব্যবহারকারী হ্রাস পাওয়া আংশিকভাবে দায়ী। গত বছরে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান কিছু ইউটিউবের কিছু ভিডিওর বিষয়বস্তু আপত্তিকর থাকায় তাদের বিজ্ঞাপন প্রচার বন্ধ করেছিল।
অ্যালফাবেট ইউটিউবের সমালোচনা করলেও ভিন্ন সুর শোনা যায় পিচাইয়ের বক্তব্যে। তিনি বলেন, এখন ইউটিউব শুধুমাত্র বিনোদনের একটি উৎস নয়। এটি সাধারণ উপার্জনের ক্ষেত্রে একটি শিক্ষাকেন্দ্রও।
তিনি আরও বলেন, ব্যবহারকারীরা ইউটিউবে এখন শুধুমাত্র বিনোদিত হতে আসে না বরং বিভিন্ন তথ্য পেতে ইউটিউব একটি বড় মাধ্যম হিসেবে কাজ করছে।
অভিযোগ
কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে চলমান ইউটিউবের নীতিমালা নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। অভিযোগ ওঠেছে, ‘ক্ষতিকর বা আপত্তিকর কনটেন্ট’ সম্বলিত ভিডিও প্রকাশ রোধে উল্লেখযোগ্য কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না প্ল্যাটফর্মটি।
বিজ্ঞাপনদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোও ধারাবাহিকভাবে ইউটিউবকে তাদের ভিডিও প্রদর্শন নীতিমালা আরও কঠোর করার জন্য চাপ অব্যাহত রেখেছে। স্বাভাবিকভাবেই ‘ব্র্যান্ড ইমেজ’ রক্ষার স্বার্থে বিজ্ঞাপনদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো কোনভাবেই কোন আপত্তিকর ভিডিও বা কনটেন্টে তাদের সম্পৃক্ততা দেখতে চায় না ।
এসব ছাড়াও গুগল ও ইউটিউবের বিরুদ্ধে বেশ কিছু বড়সড় অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগগুলোর মধ্যে, যৌন অসদাচরণ, ভিডিওতে আপত্তিকর কনটেন্ট, ব্যবহারকারীদের তথ্য বিশ্লেষণ ও পাচার, সামরিক বাহিনীর সঙ্গে সম্পৃক্ততা উল্লেখযোগ্য।
ইউটিউবের মালিকানা-প্রতিষ্ঠান গুগলের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও সাবেক প্রধান নির্বাহী এরিক স্মিটের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানী ও সেই তথ্য আনুষ্ঠানিকভাবে গোপন করার মতো অপচেষ্টার অভিযোগ রয়েছে। তাছাড়া প্রতিষ্ঠানটির এক গবেষণা কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও সহকর্মীকে যৌন হয়রানি করার অভিযোগ উঠেছিল, যার কারণে পরবর্তীতে তাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। এসব ঘটনা প্রকাশ্যে আসলে দর পতন ঘটে অ্যালফাবেটের শেয়ারে।
এছাড়া, নেসলে এবং ফোর্টনাইট এর মতো বড় প্রতিষ্ঠানগুলোও বিকৃত ও অশালীন ভিডিও প্রদর্শনের দায়ে ইউটিউব থেকে তাদের বিজ্ঞাপন প্রত্যাহার করে নিয়েছিল।
প্রশ্নাতীতভাবেই ইউটিউব অনলাইন দুনিয়ায় অন্যতম একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে। সাইটটির ব্যবহারকারী ক্রমাগত বাড়লেও ভিডিও প্রদর্শন বা শেয়ারের ক্ষেত্রে তাদের সহনশীল ও বিতর্কিত নীতি নানারকম প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। দ্বিধাদ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে ব্যবহারকারীদের মনে। ভবিষ্যতে এসব বিতর্ক অবসানের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটি কি ভূমিকা রাখবে, এটিই এখন মূল বিষয়।
সারাবাংলা/ওএম/আরএ