Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

রমজানের আগমুহূর্তে পাইকারিতে কমছে দাম, বাড়ছে খুচরায়


৬ মে ২০১৯ ০৮:৪৩

চট্টগ্রাম ব্যুরো: রমজান শুরুর মুহূর্তে এসে চট্টগ্রামের পাইকারি বাজারে ছোলা, তেল, চিনিসহ অত্যাবশ্যকীয় ভোগ্যপণ্যের দাম কমতে শুরু করেছে। পাইকারি বিক্রেতারা বলছেন, রমজানের আগমুহূর্তে হঠাৎ ভোগ্যপণ্যের চাহিদা অস্বাভাবিকভাবে কমে গেছে। দাম বেড়ে যাবার আশঙ্কায় ক্রেতারা আগেই রমজানের জন্য প্রয়োজনীয় এসব ভোগ্যপণ্য পর্যাপ্ত পরিমাণে কিনে ফেলায় এখন চাহিদা কমে গেছে। এর প্রভাব পড়েছে পাইকারি বাজারে দামের ক্ষেত্রে।

বিজ্ঞাপন

তবে, বিভিন্ন ভোক্তা সংগঠনসহ বাজার পর্যবেক্ষণের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন- পাইকারি বাজারে দাম কমে যাবার প্রভাব পড়েনি খুচরা বাজারে। বরং পাইকারি বাজারে যত দাম কমছে, খুচরা বাজারে তত বাড়ছে।

পাইকারি ব্যবসায়ীদের তথ্য অনুযায়ী, রমজানে বাংলাদেশে তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ মেট্রিক টন ভোজ্যতেল, প্রায় ৩ লাখ মেট্রিক টন চিনি এবং ৭০ থেকে ৮০ হাজার মেট্রিকটন ছোলার চাহিদা আছে। এই চাহিদার সিংহভাগই ক্রেতারা এরইমধ্যে বাজার থেকে তুলে নিয়েছেন বলে দাবি ব্যবসায়ীদের।

রোববার (৫ মে) চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজার ঘুরে জানা গেছে, গত সপ্তাহের চেয়ে চলতি সপ্তাহে ভোজ্যতেল মণপ্রতি ১০ টাকা থেকে ৩০ টাকা, চিনি প্রতিকেজি অন্তত ২০ টাকা কমেছে। কমেছে ছোলার দামও। তবে, গত সপ্তাহের চেয়ে বেড়েছে পেঁয়াজ ও রসুনের দাম।

খাতুনগঞ্জে মিয়ানমার থেকে আমদানি করা ভালো মানের ছোলা বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ৬৮ টাকায়। গত সপ্তাহে এর দর ছিল ৭০ টাকা। অস্ট্রেলিয়া থেকে আমদানি করা সাধারণ মানের ছোলা বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ৬৫ টাকায়, গত সপ্তাহে যার দাম ছিল ৬৭ টাকা। এর আগের সপ্তাহে মিয়ানমারের ছোলা ৬৯ টাকা এবং অস্ট্রেলিয়ার ছোলা ৭৩ টাকা দামে বিক্রি হয়েছিল।

ছোলা আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান খাতুনগঞ্জের মেসার্স সালমা ট্রেডিংয়ের মালিক মোহাম্মদ নাজমুল হক সারাবাংলাকে বলেন, ‘গত সপ্তাহে ছোলার বাজারে সবচেয়ে বেশি ক্রেতা ছিল। চট্টগ্রাম থেকে ছোলা গেছে দেশের বিভিন্ন জেলায়। চাহিদার এত চাপ ছিল যে দামও বেড়ে গিয়েছিল। এই সপ্তাহের শুরুতে অর্থাৎ রমজানের দুইদিন আগে তো বাজার প্রায় ক্রেতাশূন্য। সেজন্য বাজারও পড়ে গেছে। পুরো রমজানে আর ছোলার দাম বাড়ার কোনো সুযোগ নেই। কারণ পর্যাপ্ত পরিমাণে ছোলা মজুদ আছে।’

বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রাম নগরীর কাজির দেউড়ি বাজারের খুচরা দোকানে প্রতি কেজি মিয়ানমারের ছোলা ৭৩ থেকে ৮০ টাকা এবং অস্ট্রেলিয়ার ছোলা ৭৫ থেকে ৮২ টাকার মধ্যে বিক্রি হতে দেখা গেছে। পাইকারি বাজারের চেয়ে খুচরা বাজারে দাম ৫ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত বেশি।

রমজানের আরেকটি অত্যাবশ্যকীয় পণ্য চিনি। গত সপ্তাহে হঠাৎ করে চট্টগ্রামে চিনির পাইকারি বাজার অস্থির হয়ে উঠেছিল। গত সপ্তাহে মণপ্রতি চিনি বিক্রি হয়েছে ১৮২০ টাকায়। প্রতিমণে ২০ টাকা কমে এই সপ্তাহে পাইকারি বাজারে চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৮০০ টাকায়। পাইকারি বাজারে প্রতিকেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকায়।

খাতুনগঞ্জের চিনি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মেসার্স আলতাফ এন্ড ব্রাদার্সের মালিক আবদুল গফফার সারাবাংলাকে বলেন, ‘দুই কারণে চিনির দাম কমে গেছে। শবে বরাতের আগে-পরে চিনির প্রচুর চাহিদা ছিল। সেসময় যা বিক্রি হওয়ার চিনি তা বিক্রি হয়ে গেছে। এখন চিনির চাহিদা আর নেই। এরপর মিল মালিকরা সম্প্রতি অস্থিরতা শুরুর পর বাজারে প্রচুর চিনি সরবরাহ করেছে। এতে চিনির সংকট বাজারে নেই।’

চট্টগ্রামের খুচরা দোকানগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চিনি প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ৫৩ টাকা থেকে ৫৮ টাকায়। খুচরা বিক্রেতারা জানিয়েছেন, গত সপ্তাহের চেয়ে এই সপ্তাহে চিনির দাম বেড়েছে অন্তত তিন টাকা।

বিভিন্ন প্রকারের ভোজ্যতেলের দামও খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে মণপ্রতি ২০ টাকা থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। গত সপ্তাহে সয়াবিন তেল বিক্রি হয়েছিল ২৮৩০ টাকা, এই সপ্তাহে ২০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ২৮১০ টাকা। গত সপ্তাহে পাম অয়েল বিক্রি হয়েছিল ১৯৫০ টাকায়, এ সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ১৯০০ টাকায়। সুপার সয়াবিন গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছিল ২১৩০ টাকায়, এই সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ২১১০ টাকায়।

ভোজ্যতেলের পাইকারি বিক্রেতা খাতুনগঞ্জের আর এন এন্টারপ্রাইজের মালিক আলমগীর পারভেজ বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিদিন ভোজ্যতেলের বুকিং রেট কমছে। এর প্রভাব পড়েছে আমদানিতে। আমদানি রেট কমে যাওয়ায় পাইকারি বাজারেও দাম কমেছে।

খুচরা বাজারে প্যাকেট ও বোতলজাত সয়াবিন তেলের মধ্যে পুষ্টি ব্র্যান্ডের তেল বিক্রি হচ্ছে প্রতি লিটার ১০০ টাকা ও ৫ লিটার ৪৮০ টাকায়।

স্থিতিশীল পাইকারি বাজারের মধ্যেও দাম বাড়ছে পেঁয়াজ এবং রসুনের। গত সপ্তাহে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে কেজিপ্রতি ১৭ টাকায়, এই সপ্তাহের প্রথমদিনেই দাম বেড়েছে এক টাকা। ভালো মানের রসুনের দাম বেড়েছে প্রতি কেজি কমপক্ষে ১০ টাকা। গত সপ্তাহের কেজিপ্রতি ৯০ টাকা দামের রসুন এই সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়। দাম বেড়েছে আদারও। গত সপ্তাহে কেজিপ্রতি ৮৫ টাকায় বিক্রি হলেও এই সপ্তাহের প্রথমদিনেই আদা বিক্রি হয়েছে কেজিপ্রতি ৯০ টাকায়।

আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মেসার্স অছিউদ্দিন সওদাগরের মালিক রহুল আমিন চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘বাজারে ভালো মানের রসুন, আদা এবং পেঁয়াজের কিছুটা ঘাটতি আছে। এজন্য দাম কিছুটা বেড়েছে। তবে যদি গত সপ্তাহের আগের সপ্তাহের হিসাব করেন, তাহলে দাম কিন্তু কম।’

এদিকে, খুচরা বাজারেও বাড়তির দিকে পেঁয়াজের দাম। ভারতীয় পেঁয়াজ ২৫ থেকে ৩০ টাকা এবং দেশী পেঁয়াজ ৩০ থেক ৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খুচরা বাজারে প্রতিকেজি আদা বিক্রি হচ্ছে ১০০-১১০ টাকায়। চীনা রসুন খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১১৫ টাকায়।

জেলা প্রশাসনের গঠিত বাজার মনিটরিং কমিটির সদস্য এবং কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) চট্টগ্রামের সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন সারাবাংলাকে বলেন, ‘পাইকারি বাজারে দাম কমছে বা স্থিতিশীল আছে, এটা ঠিক। কিন্তু খুচরা বাজারে তো এর প্রভাব নেই। খুচরা বাজারে বরং দামবৃদ্ধি অব্যাহত আছে। এটা আমরা বাজার পর্যবেক্ষণে দেখেছি। এজন্য মনিটরিংটা জোরদার করা উচিৎ।’

সারাবাংলা/আরডি/জেএএম

চট্টগ্রাম ভোগ্যপণ্য রমজান

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর