Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘বিচ্ছিন্ন ঘটনা’র প্রভাব পড়েনি, ফলাফলে ধারাবাহিক ভিকারুননিসা


৬ মে ২০১৯ ১৭:১৪

ঢাকা: নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী অরিত্রী অধিকারীর আত্মহত্যার ঘটনায় বেশ কিছুদিন বন্ধ ছিল ভিকারুননিসার নূন স্কুলের শিক্ষা কার্যক্রম। মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষার মাত্র মাস দুয়েক আগে শিক্ষা কার্যক্রম এভাবে ব্যাহত হওয়ায় স্কুলের সবার মধ্যেই উদ্বেগ ছিল— কেমন হবে এবারের ফল। তবে সোমবার (৬ মে) দুপুর নাগাদ স্কুলটিতে শিক্ষার্থীদের উল্লাস আর উচ্ছ্বাস স্পষ্ট জানিয়ে দিলো— সব শঙ্কা আর উদ্বেগের কালো মেঘ সরিয়ে দিয়ে প্রতিবছরের মতোই ভালো ফলের বন্যায় ভেসেছে ভিকারুননিসা নূন স্কুল।

বিজ্ঞাপন

সোমবার দুপুরে ভিকারুননিসা নূন স্কুলে গিয়ে দেখা যায়, প্রচণ্ড গরম আর রোদ উপেক্ষা করেই শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা স্কুলে আসছেন। সবার চেহারাতেই তখন উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠা। তবে সেই উৎকণ্ঠা কাটতে সময় লাগেনি, ফল প্রকাশের পর ভিকারুননিসা ক্যাম্পাস যেন হয়ে ওঠে উৎসবের মঞ্চ।

ফল প্রকাশের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ভিকারুননিসা নূন স্কুলের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ফেরদৌসি বেগম। তিনি জানান, এ বছর তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল ১ হাজার ৮২৬ জন শিক্ষার্থী, এর মধ্যে পাস করেছে ১ হাজার ৮২৩ জন। অর্থাৎ মাত্র তিন জন শিক্ষার্থী পাস করতে পারেনি এ পরীক্ষায়।

ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আরও জানান, বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ১ হাজার ৪৪৪ জন, বাণিজ্য বিভাগ থেকে ৩০ জন ও মানবিক থেকে ৮ জন— সব মিলিয়ে স্কুলটির ১ হাজার ৪৮২ জন শিক্ষার্থীই পেয়েছে জিপিএ-৫, যা মোট শিক্ষার্থীর প্রায় ৭৯ শতাংশ।

ফল নিয়ে সন্তোষ জানান স্কুলটির শিক্ষকরা। যে তিন জন ফেল করেছে, তাদের বিষয়টিকে ব্যর্থতা বলতে রাজি নন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ।  একজন শিক্ষার্থী তার শারীরিক বা পারিবারিক সমস্যার কারণে পরীক্ষায় খারাপ করতেই পারে; এটি স্কুলের সামগ্রিক পড়ালেখার মানে কোনো প্রভাব ফেলবে না— এমনটিই মত ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের।

ভালো ফলের রহস্য

কথা হয় ভিকারুননিসা নূন স্কুলের কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে। জানতে চাই তাদের ভালো ফলের কারণ। রাকমা, ফারজানা ও ঐশী জানায়, তাদের ফলাফলের সব কৃতিত্ব শিক্ষকদের। তারা শ্রেণিকক্ষে এমনভাবে পড়ান যে পড়া নিয়ে মানসিক চাপ অনুভব করতে হয় না।

শিক্ষকরা বন্ধুর মতো, কখনো গাইডের মতো পাশে থাকেন বলে জানায় আলিশা, মালিহা আর রুবাইয়াত। যেকোনো সমস্যা নিয়ে যেকোনো সময় শিক্ষকদের কাছে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে তাদের। তাদের বিশ্বাস, এটাই তাদের ভালো ফলের কারণ।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞান বিভাগ থেকে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পাওয়া সাদিয়া জানায়, এবার প্রশ্ন কিছুটা কঠিন হয়েছিল। তবে সেসহ তার বন্ধুদের পরীক্ষা ভালো হয়েছে। কারণ তাদের শিক্ষকরা অনেক সহযোগিতা করেছেন পড়া বুঝতে। এটাই মূলত ভালো ফলের কারণ।

অভিভাবক মিতু পারভিন সারাবাংলাকে বলেন, তার মেয়ের ফলাফলের জন্য সম্পূর্ণভাবে তিনি ভিকারুননিসা নূন স্কলের শিক্ষকদের কাছে কৃতজ্ঞ। তাদের যথাযথ নির্দেশনার কারণেই এখানকার শিক্ষার্থীরা ভালো ফল করে।

আরেক অভিভাবক মাহমুদা সুলতানা বলেন, এখানকার শিক্ষকরা নিজের সন্তানের মতো করে শিক্ষার্থীদের পড়ান। যে কারণে তাদের ফল হয় ঈর্ষণীয়।

প্রসঙ্গ অরিত্রী অধিকারী

গত বছরের ৩ ডিসেম্বর স্কুলটির শিক্ষার্থী অরিত্রী অধিকারীর মৃত্যুর ঘটনায় সংবাদ শিরোনামে পরিণত হয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি। এ ঘটনায় ৪ ডিসেম্বর তার বাবা আত্মহত্যার প্ররোচনার দায়ে স্কুলটির অধ্যক্ষসহ তিন শিক্ষককে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। বিষয়টি নিয়ে আন্দোলনেও নামে শিক্ষার্থীদের একটি অংশ। কয়েকদিন বন্ধ থাকে শিক্ষা কার্যক্রম।

তবে এর কোনো প্রভাব স্কুলটির এসএসসি পরীক্ষার ফলে পড়েনি বলে জানিয়েছেন ভিকারুননিসা নূন স্কুলের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষসহ অন্য শিক্ষকরা। একমত পোষণ করেছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরাও।

এ বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ফেরদৌসি বেগম বলেন, ওই ঘটনা শিক্ষার্থীদের ওপর কোনো প্রভাব ফেলেনি। কারণ শ্রেণিকক্ষে পাঠদানে কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি। স্কুলটির শিক্ষার্থীরাও নিজেদের শিক্ষাজীবন নিয়ে যথেষ্ট সচেতন। তাই তারাও পড়ালেখার সঙ্গে আপস করেনি।

অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের কাছেও প্রশ্ন ছিল, অরিত্রি অধিকারীর আত্মহত্যার ঘটনা ও তা নিয়ে গড়ে ওঠা আন্দোলন শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় কোনো প্রভাব ফেলেছিল কি না।

জবাবে অভিভাবকরা জানিয়েছেন, বিষয়টি নিয়ে যথেষ্ট উদ্বিগ্ন ছিলেন তারা। তবে স্বস্তির বিষয় এটা ছিল যে এর প্রভাব পাঠদানের ওপর পড়তে দেননি শিক্ষকরা। ফলে পড়ালেখায় কোনো ক্ষতি হয়নি। বিষয়টিকে কেবল একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবেই দেখছেন তারা।

একই কথা জানায় শিক্ষার্থীরাও। অরিত্রির মৃত্যু নিঃসন্দেহে তাদের জন্য কষ্টের ছিল, আতঙ্কেরও ছিল। কিন্তু শিক্ষকরা তাদের মানসিকভাবে ভেঙে পড়তে দেননি। তারা যথা নিয়মে পড়িয়েছেন, সমস্যা হলে পাশে থেকেছেন। ফলে শিক্ষার্থীরাও মন দিয়ে স্কুলের সুনাম রক্ষায় পড়ালেখা করেছে। যার ফল আজ হাতেনাতে পেয়েছে।

এর আগে সোমবার সকালে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে ২০১৯ সালের এসএসসি পরীক্ষার ফল ঘোষণা করেন। এরপর বেলা ১২টা থেকে ওয়েবসাইট ও স্কুলগুলোতে টানিয়ে দেওয়া হয় পরীক্ষার ফল।

রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল, শেরেবাংলা বালক উচ্চ বিদ্যালয়, রাজউক উত্তরা মডেল স্কুল, মতিঝিল সকবারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন স্কুল ঘুরে শিক্ষার্থীদের উল্লাসের দৃশ্য দেখা গেছে।

আগারগাঁওয়ের শেরেবাংলা বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের ২১১ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে ২০১ জন। এদের মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪০ জন। স্কুলটির পাসের হার ৯৫ দশমিক ২৬ শতাংশ। গতবছর ২০১৮ সালে মোট পরীক্ষার্থী ছিল ২৬০ জন, পাস করেছিল ২৫৬ জন, জিপিএ-৫ পেয়েছিল ৭০ জন। এবছর পাসের হার কমলেও তাতে সন্তুষ্ট স্কুলটির শিক্ষকরা।

অন্যদিকে রাজধানীর আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে মোট পরীক্ষার্থী ছিল ১ হাজার ৯০৫ জন। মোট পাস করেছে এক হাজার ৮৯৪ জন। পাশের হার ৯৯ দশমিক ৪২ শতাংশ। মোট জিপিএ ৫ পেয়েছে এক হাজার ২৪৮ জন।

এছাড়া মতিঝিল সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ে মোট পরীক্ষার্থী ছিল ৪০২ জন। পাস করেছে ৪০০ জন। গড় পাসের হার ৯৯ দশমিক ৫০। বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৭৭ জন, আর ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে ৬০ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে।

সারাবাংলা/জেজে/আরএফ/এসএমএন/টিআর

অরিত্রী অধিকারী অরিত্রী আত্মহত্যা এসএসসি ২০১৯ এসএসসি পরীক্ষার ফল ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর