‘জঙ্গিরা যেন গণমাধ্যমকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে না পারে’
৬ মে ২০১৯ ১৮:৫৭
ঢাকা: ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেছেন,জঙ্গিরা গণমাধ্যমকে হাতিয়ার হিসেবে যেন ব্যবহার করতে না পারে। গণমাধ্যমে প্রচারণার কারণে তারা যেন হিরো হয়ে না যায়। জাতীয় স্বার্থে দেশের গণমাধ্যমগুলোকে সতর্ক থেকে এ বিষয়ে সংবাদ প্রচার করতে হবে।
সোমবার (৬ মে) সকালে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘রিপোর্টিং অন টেরোরিজম’ শীর্ষক কর্মশালার উদ্বোধনের সময় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, জঙ্গি সমস্যা একটি বৈশ্বিক সমস্যা। এদেশেও জঙ্গি হুমকি রয়েছে। সমস্যাটি আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি তবে নিশ্চিহ্ন করতে পারিনি। এটাকে নিশ্চিহ্ন করতে হলে সবার সচেতনতা দরকার। সাংবাদিকদের অনেক বেশি দরকার। লাইভ টেলিকাস্টের ব্যাপারে আরও বেশি সচেতন হওয়া দরকার। সেজন্য মিডিয়া হাউজগুলোর প্রধানদের সাথেও আমরা বসার চেষ্টা করা হবে।
কমিশনার বলেন, পশ্চিমা শক্তিগুলোর সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক টানাপোড়েনের কারণেই আজকের এই জঙ্গিবাদের ভয়াবহতা সৃষ্টি হয়েছে। সবশেষ নিউজিল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কায় জঙ্গি ঘটনা আমাদেরকে ভাবিয়ে তুলেছে। এটি বাংলাদেশের জন্য শুধু নয়, বিশ্ববাসীর ও মানবতার জন্যও অশনি সংকেত। এ বিষয়ে আমাদের বিশেষ দায়িত্ববোধ সৃষ্টি হওয়ার দরকার। এক্ষেত্রে আমাদের কর্মপদ্ধতি কি হবে সে ব্যাপারে জাতীয় স্বার্থেই ঐক্যমতে আসা অত্যন্ত প্রয়োজন।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, বিশ্বের কোনো দেশ কিন্তু আধুনিক প্রযুক্তি দিয়েও টেরোরিজমকে রুখতে পারেনি। আমরা তা পেরেছি। মোটাদাগে যদি বলা যায়, আমরা সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জনমত সৃষ্টি করতে পেরেছি।
মিডিয়া অনেক কিছু পারে উল্লেখ করে তিনি বলেন , আপনারা একই বিষয়কে যেমন নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করতে পারেন তেমনি ইতিবাচকভাবেও উপস্থাপন করা সম্ভব। জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর জন্য যা করা দরকার তাই করা উচিত।
কর্মশালায় যোগ দেওয়া বিভিন্ন গণমাধ্যমের অপরাধ বিষয়ক সাংবাদিকদের উদ্দেশে আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, বাংলাদেশে হলি আর্টিজানের পরে এখন পর্যন্ত কোনো জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটেনি। কোনো কিছু ঘটলেই আমরা ইন্টিলিজেন্সের মাধ্যমে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করেছি। যার ফলে আমরা সফল হয়েছি। অনেক বিষয় আছে যা আইন করে সমাধান সম্ভব হয় না। নিজের বিবেক-বুদ্ধির দরকার হয়। কি প্রকাশ করব আর কি করব না তাতে নিজেদের সেল্ফ সেন্সরশীপের দরকার রয়েছে।
হলি আর্টিজানের পর জঙ্গিরা ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়েছে। আমাদের অনেক মিডিয়া সেই বিভৎস ছবি প্রকাশ করেছে, গণমাধ্যমে দেখিয়েছে। জঙ্গিরা যে প্রচার চেয়েছিল তা মিডিয়ার মাধ্যমে সফল হয়েছে। অথচ শ্রীলঙ্কার মিডিয়া জঙ্গিদের ফাঁদে পা দেয়নি। জঙ্গিদের উদ্দেশ্য সফল হতে দেয়নি।
আমাদের মিডিয়াগুলো কার আগে কে ব্রেকিং দেবে তা নিয়ে হুড়োহুড়ি করে অভিযোগ করে তিনি বলেন, এ বিষয়টি তিনি আমরা মিডিয়া প্রধানদের নিয়ে বসব। এ ব্যাপারে আলোচনা করে একটা দায়িত্বশীল আচরণের জায়গায় পৌছাবো। কাউন্টার টেরোরিজম যখন অপারেশন করে তখন রিপোর্টাররা লাইভ প্রচার করতে চায়। এসব দেখে এক শ্রেণীর মানুষ আছে যারা এটাকে সাপোর্ট করে। নেগেটিভ ধারণা তৈরি হয়। বিশ্বে একটা অস্থিরতা তৈরি করে।
বলেন, জঙ্গিবাদের ক্ষেত্রে বিভৎসতা, সহিংসতার ছবি প্রকাশ করে জঙ্গিদের উদ্দেশ্যকে প্রচার না করতে সাংবাদিকদের প্রতি অনুরোধ করছি। জঙ্গিরা কিভাবে মানুষকে খুন করে এই খবর প্রচার করতে হবে।
জঙ্গিরা সাধারণ মানুষকে কিভাবে ক্ষতি করছে সেটি নিয়ে রিপোর্ট করতে হবে বলেও পরামর্শ দেন তিনি।
ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (ক্রাব) ও ডিএমপি’র কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের যৌথ উদ্যোগে অপরাধ বিষয়ক সাংবাদিকদের নিয়ে এ কর্মশালার আয়োজন করা হয়।
সারাবাংলা/ইউজে/জেডএফ