ভারতে প্রথম নারী ইমামের নামাজ পরিচালনা, হত্যার হুমকি
২৮ জানুয়ারি ২০১৮ ১৫:৪১
সারাবাংলা ডেস্ক
‘ইসলাম নারী ও পুরুষের বিভেদ করে না। ইসলাম কখনও নারীকে ইমাম হতে বারণ করেনি।’-কথাগুলো ভারতের কেরল রাজ্যের ৩৪ বছর বয়সী কোরআন সুন্নাহর শিক্ষক জামিধার। শুধু বলেই ক্ষান্ত দেননি এই ধর্মীয় শিক্ষক। বরং ইসলাম উদার ধর্ম- মতে বিশ্বাসী এই নারী শিক্ষক জুমার নামাজও পরিচালনা করেছেন।
সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়ার তথ্য অনুযায়ী, গত শুক্রবার (২৬ জানুয়ারি) জামিধা কেরলের কুরআন সুন্নাত সোসাইটির অফিসে জুম্মার নামাজ পরিচালনা করেছেন। প্রায় ৮০ জন নারী ও পুরুষের উপস্থিতিতে এই নামাজ ভারতে প্রথম নারী ইমামের পরিচালিত নামাজ বলেছে সংবাদমাধ্যমগুলো। দ্য হিন্দুর তথ্যানুযায়ী, জুমার নামাজের আগে জামিধা মুসল্লিদের খুতবাও পড়ে শোনান।
ভারতে এর আগে কোনো নারীর নামাজ পড়ানোর ইতিহাস নেই। তাই নারী হয়ে জুমার নামাজের ইমামতি করার এই খবর যখন দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে তখন ‘মৌলবাদীরা’ জামিধার বিরোধিতা করেছেন।
ভারতের প্রভাবশালী ধর্মীয় সংগঠন ইসলামিক ইয়ুথ ফ্রন্টের নেতা আবদুল হামিদ ফয়েজী আম্বালাক্কাডাভু সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘জামিধাহর এই কাজ ইসলাম বিরোধীদের ষড়যন্ত্র হতে পারে। ইসলামে নারীদের ইমামতি করার কোনো ঐতিহ্য নেই। বরং ইসলাম নারী ও পুরুষের মধ্যে অবাধ মেলামেশা নিষেধ করেছে যেন তারা কোনো অনাচার না করতে পারে।’
আরেকটি ধর্মীয় সংগঠন গ্লোবাল ইসলামিক মিশনের মুখপাত্র সি পি সালেম বলেছেন, ‘কেরলের এই ঘটনাটি শুধু আলোচনায় আসার উদ্দেশেই করা হয়েছে। এর আরেকটি লক্ষ্য এতকাল ধরে চলে আসা ইসলামের আচার-প্রথাকে অসম্মান করা।’
শুধু সমালোচনা করেই ক্ষান্ত দেননি ধর্মীয় নেতারা, জামিধাকে ফোনে প্রাণনাশের হুমকিও দেওয়া হয়েছে। আর এর জেরে গতকাল শনিবার থেকে নিরাপত্তার খতিরে জামিধাকে পুলিশের হেফাজতে রাখা হয়েছে।
তবে জামিধার পক্ষে দাঁড়ানো মানুষের সংখ্যাও কম নয়। ইসলামের উদারীকরণে বিশ্বাসী কেরলের কুরআন সুন্নাত সোসাইটির মানুষরা মনে করেন, কোরআন এবং হাদিসই ইসলামের শেষ কথা আর সেখানে ইমামতি শুধু পুরুষরাই করবে নারীরা করতে পারবে না এমন কোনো কথা বলা নেই।
এদিকে জামিধা জানিয়েছেন, ‘যারা এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন তাঁরা চান না নারীরা স্বনির্ভর হোন। অথচ কোরানে নারী- পুরুষের সমানাধিকারের কথা স্পষ্ট লেখা রয়েছে।’
দ্য হিন্দু লিখেছে, ইসলামে নারীর প্রতি বৈষম্যের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরেই সোচ্চার জামিধা। আর সেজন্য বার বার কট্টরপন্থীদের হুমকির মুখে পড়তে হয়েছে তাকে। এর আগে মৌলবাদীদের হুমকির জেরে নিজ এলাকা তরুবনন্তপুরম ছাড়তে হয়েছিল তাঁকে।
২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের অধ্যাপক আমিনা ওয়াদুদ ইতিহাসে প্রথম নারী হিসেবে জুমার নামাজ পড়ানো শুরু করেছিলেন। সেই সময়ে তাঁর এই উদ্যোগটি খুব সাড়া ফেলেছিল। এরপর বিভিন্ন সময়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপের নানা দেশে নারীদের নামাজ পড়ানোর নজির দেখা গেছে।
সারাবাংলা/এমএ/এসবি