২০ দলীয় জোট ছাড়লেন আন্দালিভ রহমান পার্থ
৬ মে ২০১৯ ২০:৪১
ঢাকা: বিএনপি ও জামায়াত নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি- বিজেপি’র চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিভ রহমান পার্থ। সোমবার (৬ মে) রাতে আন্দালিভ রহমান পার্থ স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, বিজেপি ১৯৯৯ সাল থেকে বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন চার দলীয় জোট এবং পরবর্তীতে ২০ দলীয় জোটে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে আসছে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠিত হওয়ার পর থেকে ২০ দলীয় জোটের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ক্রমশই স্থবির হয়ে পড়ে। বিরোধীদলীয় রাজনীতি অতিমাত্রায় ঐক্যফ্রন্টমুখী হওয়ায় ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনের আগে এবং পরবর্তীতে সরকারের সঙ্গে সংলাপসহ বহু গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে ২০ দলীয় জোটের বিএনপি ছাড়া অন্য কোনো দলের সম্পৃক্ততা ছিল না।
কেবল মাত্র সংহতি এবং সহমত পোষণের জন্য ২০ দলীয় জোটের সভা ডাকা হতো। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর প্রহসনের ও ভোট ডাকাতির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার পর ২০ দলীয় জোটের সবার সম্মতিক্রমে এই নির্বাচন প্রত্যাখান করা হয়। কিন্তু পরবর্তীতে প্রথমে ঐক্যফ্রন্টের দুইজন এবং বিএনপির সম্মতিতে চারজন সংসদ সদস্য শপথ নেওয়ায় দেশবাসীর মতো বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি বিজেপিও অবাক এবং হতবাক। শপথ নেওয়ার এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে বিএনপি ছাড়া ২০ দলের অন্য কোনো দলের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
আন্দালিভ রহমান পার্থ বলেন, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপি মনে করে, এই শপথের মাধ্যমে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি এবং ঐক্যফ্রন্ট ৩০ ডিসেম্বরের প্রহসনের নির্বাচনকে প্রত্যাখান করার নৈতিক অধিকার হারিয়েছে। যে কারণে ২০ দলীয় জোটের বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে বিজেপি ২০ দলীয় জোটের সব রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে বেরিয়ে আসছে।
১৯৯৯ সালে বিএনপির নেতৃত্বে দলীয় জোট গঠন করা হলে, সে জোটের অন্যতম প্রধান শরিক ছিল হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি (জাপা)। কিন্তু জোট থেকে এরশাদ বেরিয়ে গেলে জাপার সেই সময়ের মহাসচিব নাজিউর রহমান মঞ্জু ‘বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপি’ গঠন করে বিএনপি জোটের সঙ্গে থেকে যান।
এর পর ২০০৪ সালের এপ্রিল মাসে নাজিউর রহমান মঞ্জুর মৃত্যু হলে বড় ছেলে আন্দালিভ রহমান পার্থ বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপি’র চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। বাবার অবর্তমানে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটে শক্ত অবস্থান তৈরি হয় আন্দালিভ রহমান পার্থের। ধীরে ধীরে তারেক রহমানের প্রিয়ভাজন হয়ে ওঠেন তিনি।
এর পর ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোলা-১ আসনে চারদলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেন আন্দালিভ রহমান পার্থ। সে নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ইউসুফ হোসেন হুমায়ুনকে পরাজিত করে বিজয়ী হন তিনি।
এর পরের পাঁচ বছর সংসদে ঝাঁঝালো বক্তব্য দিয়ে সবার নজরে আসেন ব্যারিস্টার আন্দালিভ রহমান পার্থ। বিএনপি নেতৃত্বাধীন চার দলীয় জোটের যে কোনো ধরনের আন্দোলন-সংগ্রামে জ্বালাময়ী বক্তব্য দিয়ে মাঠ গরমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছিলেন তিনি।
এরপর ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন জোটগতভাবে বয়কটের সিদ্ধান্ত হলে সেটি মেনে নেন আন্দালিভ রহমান পার্থ। ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি ঢাকা-১৭ আসনে ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোটের প্রার্থী হন।
কিন্তু নির্বাচনের আগে ড. কামাল হোসেন নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নিয়ে বিএনপি অতিমাত্রায় মাতামাতি এবং নির্বাচনের পর জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সাত জন বিজয়ী প্রার্থী শপথ নেওয়ায় ক্ষুব্ধ হন আন্দালিভ রহমান পার্থ। সেই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে আজ ২০ দলীয় জোট থেকে সরে গেলেন তিনি— যা তার লিখিত বক্তব্যে পরিষ্কার উল্লেখ রয়েছে।
প্রায় ২০ বছর বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের সঙ্গে থাকলেও আন্দালিভ রহমান পার্থ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরিবারেরই সদস্য। আন্দালিভ রহমানের মা শেখ রেবা রহমান শেখ মুজিবুর রহমানের ভাইয়ের মেয়ে ও শেখ ফজলুল করিম সেলিমের বোন ছিলেন। আন্দালিভ রহমান নিজেও বিয়ে করেছেন শেখ হাসিনার চাচাতো ভাই শেখ হেলালের মেয়েকে।
সারাবাংলা/এজেড/এটি