বাজেটের আকার বাড়ছে, বাড়ছে ঘাটতিও
৭ মে ২০১৯ ১০:১৬
ঢাকা: টানা তৃতীয় মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর প্রথম বাজেট উত্থাপন হতে যাচ্ছে আগামী ১৩ জুন। এই বাজেটের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো বাজেটের আকার ছাড়িয়ে যাচ্ছে ৫ লাখ কোটি টাকা। তবে বাজেটের আকার যেমন বাড়ছে, তেমনি বাড়ছে বাজেট ঘাটতির পরিমাণও। সর্বশেষে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, এবারের বাজেটে সামগ্রিক ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে ১ লাখ ৪৫ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
দেশের ৪৯তম এই বাজেট প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, সঙ্গত কারণেই এবার বাজেটের আকার অনেক বাড়বে। এবারের বাজেট শুধু একবছরের জন্য হবে না, এই বাজেটে ২০৪১ সাল পর্যন্ত করণীয় বিষয়ে দিক নির্দেশনা দেওয়া থাকবে।
তিনি বলেন, ২০১০-২০ অর্থবছরের বাজেটের নতুত্ব হলো— এটি হবে একটি সহজ বাজেট। যাদের জন্য বাজেট, তারা যেন বাজেটটি সহজেই বুঝতে পারেন। একইসঙ্গে বাজেটটি হবে স্বচ্ছ ও দুর্নীতিমুক্ত বাজেট।
অর্থ বিভাগ সূত্র জানায়, আগামী ২০১৯-২০ অর্থবছরে জন্য সম্ভাব্য বাজেটের আকার ধরা হয়েছে ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। এবারের বাজেটে সামগ্রিক ঘাটতি প্রাক্কলন করা হয়েছে ১ লাখ ৪৫ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা। এই পরিমাণ সর্বশেষ ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে ২০ হাজার ৬৫৭ কোটি টাকা বেশি। তবে বাজেট ঘাটতি জিডিপি’র ৫ শতাংশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকছে এবারও।
কেবল এ বছর নয়, গত পাঁচ বছরেই বাজেটের আকারের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে বাজেট ঘাটতির পরিমাণ।
২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটের আকার ছিল ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা। মূল বাজেটে সামগ্রিক ঘাটতির পরিমাণ ছিল ১ লাখ ২৫ হাজার ২৯৩ কোটি টাকা। এই অর্থবছরের বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ আগের অর্থবছরের চেয়ে ১৩ হাজার ১৭ কোটি টাকা বেশি। ওই ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৪ লাখ ২৬৬ কোটি টাকার বাজেটের বিপরীতে ঘাটতির পরিমাণ ছিল ১ লাখ ১২ হাজার ২৭৬ কোটি টাকা। এই ঘাটতি আবার আগের অর্থবছরের (২০১৬-১৭) বাজেট ঘাটতির তুলনায় বেশি ছিল ৪৩ হাজার ৯৮৭ কোটি টাকা।
২০১৬-১৭ অর্থবছরে বাজেটের আকার ছিল ৩ লাখ ৪০ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা। ঘাটতি ছিল ৬৮ হাজার ২৮৯ কোটি টাকা। ঘাটতি আগের অর্থবছরের তুলনায় ২ হাজার ৮০৭ কোটি টাকা বেশি। একইভাবে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বাজেটের আকার ছিল ২ লাখ ৯৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা। ওই বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৬৫ হাজার ৪৮২ কোটি টাকা।
অর্থ বিভাগ বলছে, আগামী বাজেটে ঘাটতি পূরণে বৈদেশিক উৎস থেকে নিট ৫২ হাজার ২২০ কোটি টাকা ঋণ নেওয়া হতে পারে। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে এর পরিমাণ ৫০ হাজার ১৬ কোটি টাকা। এছাড়া অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে নিট ৯৩ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা নেওয়া হবে। এর মধ্যে ব্যাংক খাত থেকে ৬৮ হাজার ৪৬০ কোটি টাকা (চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে এর পরিমাণ ৪২ হাজার ২৯ কোটি টাকা) এবং সঞ্চয়পত্র খাত থেকে ২২ হাজার ২৭০ কোটি টাকা (চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে এর পরিমাণ ২৬ হাজার ১৯৭ কোটি টাকা) নেওয়া হতে পারে।
সূত্র জানায়, প্রাথমিক প্রাক্কলন অনুযায়ী, আগামী ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটের মোট আকার নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। এটি আগামী অর্থবছরের জিডিপি’র ১৮ শতাংশ এবং চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের মূল বাজেটের আকার থেকে ১২ দশমিক ৬ শতাংশ বেশি। নতুন বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) খাতে ১ লাখ ৯৮ হাজার ৩০০ কোটি টাকা (জিডিপি’র ৬ দশমিক ৮ শতাংশ) এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি ব্যতীত পরিচালনসহ অন্যান্য অনুন্নয়ন ব্যয় বাবদ ৩ লাখ ২৪ হাজার ৮৯০ কোটি টাকা (জিডিপি’র ১১ দশমিক ২ শতাংশ) ধরা হয়েছে।
এর আগে, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা আসার পর একই বছরের ১১ জুন জাতীয় সংসদে বাজেট পেশ করে। ওই বাজেটের আকার ছিল ১ লাখ ১৩ হাজার ১৭০ কোটি টাকা। ওই বাজেটের মাধ্যমে দেশে প্রথমবারের মতো বাজেটের আকার লাখ কোটি টাকার সীমা অতিক্রম করে। এরপর পর্যায়ক্রমে বাজেটের আকার বেড়েইছে। ২ লাখ, ৩ লাখ ও ৪ লাখের গণ্ডি পেরিয়ে এবার তা স্পর্শ করতে যাচ্ছে ৫ লাখ কোটি টাকার মাইলফলক। অর্থাৎ গত ১০ বছরে বাজেটের আকার বেড়ে হয়েছে সাড়ে চার গুণেরও বেশি।
সারাবাংলা/জিএস/টিআর