তীব্র গরমে বেড়েছে হিটস্ট্রোকের ঝুঁকি
৯ মে ২০১৯ ০৭:৫৪
ঢাকা: চলতি মাসেই একটি তীব্র ও দুইটি মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। এই সময় সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। তারা বলছেন, গরমের কারণে হিটস্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে। বয়স্কদের পাশাপাশি শিশুরাও রয়েছে এই ঝুঁকিতে। সেই সঙ্গে রয়েছে কিডনি রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা। এ সময় বাড়বে ডায়রিয়া ও ভাইরাসজনিত জ্বরের প্রকোপ।
চিকিৎসকরা বলছেন, দিনের বেলায় তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার প্রভাব পড়ছে মানুষের শরীরে। ফলে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে গিয়ে হিটস্ট্রোক হতে পারে। সাধারণত মানবদেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রক্ত ভূমিকা রাখে। আবহাওয়া উষ্ণ হলে রক্তনালি প্রসারিত হয় এবং শরীরের তাপ অনিয়ন্ত্রিত হয়ে যায়। ফলে শরীরের স্বাভাবিক ক্ষমতা হারিয়ে হিটস্ট্রোক হয়। এটাকে অবহেলা করার সুযোগ নেই, হিটস্ট্রোকের কারণে মৃত্যুও হতে পারে।
এদিকে দেশে গত কয়েকদিন ধরেই তীব্র গরম পড়ছে। আবহওয়া অধিদফতর জানাচ্ছে, সামনের দিকে তাপমাত্রা আরও বাড়বে। সবশেষ আবহাওয়া বার্তায় বলা হয়েছে, চলতি মাসেই দেশের উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে একটি তীব্র তাপপ্রবাহ (>৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস) এবং অন্য অংশে ১-২টি মৃদু (৩৬-৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস) কিংবা মাঝারি (৩৮-৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস) তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে।
তীব্র গরমের কারণে হিটস্ট্রোকের পাশাপাশি এই সময় মানুষ বেশি আক্রান্ত হচ্ছে ডায়রিয়াতে। আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি) থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, মে মাসের প্রথম সপ্তাহে ডায়রিয়াতে আক্রান্ত হয়ে সেখানে ভর্তি হয়েছেন চার হাজার ৩৩৮জন। এর মধ্যে পহেলা মে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ছিল ৬৯৪ জন, ২ মে ৭০১ জন, ৩ মে ৫৪৯ জন, ৪ মে ৫৩৩ জন, ৫ মে ৬২৭ জন, ৬ মে ৬৩৯ জন এবং ৭ মে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা ছিল ৫৯৫ জন।
অর্থাৎ গড়ে প্রতিদিন ভর্তি হওয়া রোগির সংখ্যা ৬২০ জন । চলতি মৌসুমে এখন পর্যন্ত ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে একদিনে আইসিডিডিআরবিদে ভর্তি হওয়া সর্বোচ্চ রোগীর সংখ্যা ছিল ৯৫০ জন।
এ বিষয়ে সারাবাংলার কথা হয় জনস্বাস্থ্য ও প্রিভেন্টিভ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরীর সঙ্গে। তিনি বলেন, বয়স্ক ও শিশু উভয়ের শরীরে তাপ নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা কম থাকায় তীব্র গরমের কারণে এরা বেশি হিটস্ট্রোকের ঝুঁকিতে থাকে। তীব্র গরমের কারণে যখন শরীরের তাপ নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়, শরীরের তাপমাত্রা ১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট ছাড়িয়ে গেলে আমরা তাকে হিটস্ট্রোক বলি। এছাড়া যারা উচ্চ রক্তচাপ, চর্মরোগ ও ডায়াবেটিস রোগে ভুগছেন এবং যারা নিয়মিত মানসিক রোগের ও ব্যথানাশের ওষুধ খান, তাদের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি।
হিটস্ট্রোকের লক্ষণগুলো সম্পর্কে এই চিকিৎসক জানান, প্রাথমিকভাবে বোঝার উপায় হলো শরীর থেকে প্রচণ্ড ঘাম ঝরবে। মনে হতে পারে জ্ঞান হারিয়ে যাচ্ছে বা জ্ঞান হারিয়েও যেতে পারে।
তিনি আরও বলেন, অতিরিক্ত গরমে মানুষ বেশি ঘামে, ফলে শরীরে পানিস্বল্পতা দেখা দেয়। শরীর থেকে সোডিয়াম বের হয়ে গিয়ে ইলেকট্রোলাইট ইমব্যালান্স তৈরি হতে পারে।
এছাড়া এই চিকিৎসক জানান, তীব্র গরমে প্রসাবের থলি ও নালিতে সংক্রমণের (ইনফেকশন) ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। এর ফলে কিডনি আক্রান্ত হতে পারে।
এসময় শরীর থেকে অতিরিক্ত পানি বের হয়ে যাওয়ার কারণে রক্তচাপ কমে যেতে পারে। এসব ক্ষেত্রে সময় নষ্ট না করে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে বলে পরামর্শ দেন ডা. লেলিন।
এই গরমে সুস্থ থাকতে কিছু সাধারণ পরামর্শ দিয়েছেন ডা. লেলিন।
এগুলো হলো:
১. প্রয়োজন ছাড়া বাইরে যাওয়া উচিত হবে না।
২. দিনে অন্তত তিন থেকে সাড়ে তিন লিটার পানি পান করতে হবে।
৩. ঘাম বেশি হলে খাবার স্যালাইন পান করতে হবে।
৪. শরীর দুর্বল হলে গরম থেকে দ্রুত ঠান্ডা স্থানে যেতে হবে এবং ধীরে ধীরে পানি পান করতে হবে।
৫. ঢিলেঢালা সুতির পোশাক পরা উচিত।
৬. মৌসুমী ফল যেগুলো বাজারে রয়েছে যেমন, তরমুজ, জামরুল, শসা প্রচুর পরিমাণে খেতে হবে।
৭. ইফতারে গুরুপাক খাবার কম খেতে হবে।
৮. টয়লেট ব্যবহারের পর ভালো করে হাত ধুতে হবে, ছোটরা মল-মূত্র ত্যাগ করার পরে তাদের দ্রুত পরিষ্কার করতে হবে।
৯. খোলা জায়গায় বিক্রি করা শরবত পান করার বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।
এছাড়া ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, সব ধরনের পরীক্ষা করে দেখা গেছে, ওয়াসার পানিতে প্রচুর জীবাণু রয়েছে। তাই পানি পান ও খোলা স্থানে বিক্রি হওয়া শরবত পানের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন তিনি।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের শিশু বিভগের অধ্যাপক ডা. ইফফাত আরা শামসাদ সারাবাংলাকে বলেন, গরমে শিশুরা সর্দি, ঠান্ডা, জ্বর ডায়রিয়াতে আক্রান্ত হয় বেশি। এ সময় শিশুদের পাতলা কাপড় পরাতে হবে, নিয়মিত গোসল করাতে হবে। কিছুক্ষণ পরপর প্রচুর পরিমাণে পানি খাওয়াতে হবে। কোনোভাবেই যেন শরীরে পানিস্বল্পতা তৈরি না হয়।
গরমের এই সময় শিশুদের ঘামাচি হয় বেশি। ঘামাচি হলে ভেজা কাপড় দিয়ে শরীর মুছিয়ে দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, শুরু থেকেই যত্ন নিতে হবে। শিশুদের স্বাভাবিক খাবার দিতে হবে। কোনো ধরনের গুরুপাক খাবার দেওয়া যাবে না। শিশু যদি বুকের দুধ পান করে, তাহলে মায়েদের আরও বেশি পানি পান করার পরামর্শও দেন তিনি।
সারাবাংলা/জেএ/এটি/এসএমএন/এমএম