বরাদ্দ পেলেই থেমে যাবে পাটকল শ্রমিকদের আন্দোলন: বিজেএমসি
৯ মে ২০১৯ ১৪:৪৭
ঢাকা: ‘অর্থ বরাদ্দ না পাওয়ায়’ শ্রমিকদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে পারেনি বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশন (বিজেএমসি)। এতে শ্রমিকেরা আবারও রাস্তায় নেমে আসার ঘোষণা দিয়েছেন। সারাদেশে আগামী ১৩ মে থেকে অনির্দিষ্টকালের শ্রমিক ধর্মঘট ডেকেছে পাটকল শ্রমিকরা। একই সঙ্গে সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করে রাজপথেই ইফতারের ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
গত তিন দিন ধরে দেশের কয়েকটি স্থানে শ্রমিকদের আন্দোলন চলছে। বিজেএমসি বলছে, প্রধানমন্ত্রী দেশে ফেরার পরই অর্থ বরাদ্দের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট ঘোষণা আসতে পারে। আর অর্থ বরাদ্দের ঘোষণা এলেই এই আন্দোলন স্থিমিত হয়ে পড়বে বলে প্রত্যাশা তাদের।
এক প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের (বিজেএমসি) চেয়ারম্যান শাহ মোহাম্মদ নাসিম সারাবাংলাকে বলেন, বিজেএমসির হাতে টাকা থাকলে দিতে সমস্যা ছিল না। অর্থমন্ত্রী দেশের বাইরে ছিলেন। আমরা তার অপেক্ষায় ছিলাম। প্রধানমন্ত্রী এখন দেশের বাইরে। তিনি দেশে ফিরলেই আশা করি আগামীকাল (১০ মে) থেকে এ সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। তিনি দেশে ফেরার পরই ভালো খবর পাওয়া যাবে। দ্রুতই বরাদ্দ পাওয়া বলে আমরা আশা করছি।
শ্রমিকদের দেওয়া কোনো প্রতিশ্রুতিই পূরণ করা হয়নি এমন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বিজেএমসি চেয়ারম্যান বলেন, শ্রমিকদের পক্ষ থেকে সব কঠিন কঠিন শর্ত দেওয়া হয়। আর সাদা কাগজে চুক্তি হয়না। একটা সমঝোতা হয়েছিল। আমরা বলেছিলাম অর্থ মন্ত্রণালয় কর্তৃক অর্থ বরাদ্দ প্রাপ্তি সাপেক্ষে। কিন্তু সেদিন তা লিখতে দেওয়া হয়নি। সরকারের পক্ষ থেকে বরাদ্দ না পাওয়ায় প্রতিশ্রতি পূরণ করা সম্ভব হয়নি। তবে, আমরা আশাবাদী দ্রুতই তা সম্ভব হবে।
অসন্তোষ মেটাতে গত ১৫ এপ্রিল পাটকল শ্রমিকদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন শ্রম প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান। শ্রম অধিদফতরের সম্মেলন কক্ষে দীর্ঘ ৮ ঘন্টারও বেশি সময়ের ওই বৈঠক শেষ দাবি পূরণে বিজিএমসি ও সরকারের পক্ষে বেশ কিছু প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়। ত্রিপক্ষীয় ওই সমঝোতা চুক্তিতে বলা হয়, আগামী ১৭ মের মধ্যে পাটকল শ্রমিকদের মজুরি ফিক্সেশন (বকেয়া নির্ধারণ) করা হবে। পরদিন ১৮ মে খাতায় উঠবে, অর্থাৎ শ্রমিকদের অনুকূলে মজুরি স্লিপ দেওয়া হবে। এছাড়া ২৫ এপ্রিলের মধ্যে ১০ সপ্তাহের বকেয়া মজুরি পূর্বের হারে এবং তিন মাসের বকেয়া পরিশোধ করা হবে। তবে, শ্রমিক নেতাদের দাবি ২৫ এপ্রিল পেরিয়ে গেলেও প্রতিশ্রুতির কোনোটিই এখন পর্যন্ত বাস্তবায়ন হয়নি। তবে, বিজেএমসি বলছে, প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী শবেবরাত উপলক্ষ্যে এক সপ্তাহের মজুরি পরিশোধ করা হয়েছে। রমজান উপলক্ষ্যেও অধিকাংশ কারখানায় এক সপ্তাহের মজুরি দেয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ পাটকল শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সরদার মোতাহার উদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘সরকারের পক্ষ থেকে দেয়া প্রতিশ্রুতি কার্যকর হয়নি। পাটকল শ্রমিকেরা মানবেতর জীবনযাপন করছে। তারা কারো কথা শুনছে না। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবে বলে ঘোষণা দিয়েছে। আমরা নিজেরা বৈঠক করে তাদের আন্দোলনে সমর্থন জানিয়েছি।’
সারাবাংলা ডটনেটের এক প্রশ্নের উত্তরে খালিশপুর জুটস মিলসের সিবিএ সভাপতি আবু দাউদ দ্বীন মোহাম্মদ বলেন, ‘বারবার প্রতিশ্রুতি দেয়া হলেও তা পূরণ হচ্ছে না। এর আগে একবার ২৮ মার্চের ভেতর বকেয়া বেতন ও অন্যান্য পাওনা পরিশোধের কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু হয়নি। পরে আবার আন্দোলন শুরু হলে ২৫ এপ্রিলের মধ্যে দাবি-দাওয়া পূরণের প্রতিশ্রতি দেয়া হয়। এবারও তা পূরণ হয়নি। শ্রমিকরা স্ব-উদ্যোগে ধর্মঘট ডেকেছে। আমরা শ্রমিক লীগের পক্ষ থেকে সিবিএ ও নন-সিবিএ নেতারা সমর্থন দিয়েছি।’
কার্পেটিং জুট মিলসের সিবিএ সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা ৯ দফা দাবি দিয়েছিলাম। সেই দাবি বাস্তবায়ন হয়নি। বকেয়া মজুরি রয়েছে ১২ থেকে ১৩ সপ্তাহের। বকেয়া বেতন রয়েছে ৩ মাসের। জাতীয় মজুরি কমিশন বাস্তবায়ন হয়নি। বারবার আশ্বস্ত করা হলেও আমাদের দাবি পূরণ করা হয়না। চুক্তি অনুযায়ী ২৫ তারিখের মধ্যে আমাদের সব দাবি পূরণের কথা ছিল। চুক্তির কোনো একটি বিষয়েরও বাস্তবায়ন ঘটায়নি সরকার।’
এদিকে, প্রতিশ্রুতি পূরণ না হওয়ায় সারাদেশের পাটকলে আগামী ১৩ মে থেকে অনির্দিষ্টকালের শ্রমিক ধর্মঘটের ঘোষণা এসেছে। ধর্মঘট চলাকালে প্রতিদিন বিকেল ৪ টা থেকে সন্ধ্যা ৭ টা পর্যন্ত রাজপথ-রেলপথ অবরোধ করা হবে। এবং রাজপথে ইফতার করার ঘোষণা দিয়েছে শ্রমিকরা করবে।
গত ৮ মে বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের (বিজেএমসি) শ্রমিক ও কর্মচারী ইউনিয়নের (সিবিএ) কার্যালয়ে পাটকল শ্রমিক লীগ ও সিবিএ ও নন সিবিএ’র বৈঠকে ওই সিদ্ধান্ত আসে। একই সময়ে পাটকল শ্রমিকদের ৯ দফা দাবি বাস্তবায়নে দেশের কয়েকটি স্থানে গত তিন দিন ধরে আন্দোলন চলছে বলেও খবর পাওয়া গেছে।
সারাবাংলা/ইএইচটি/জেএএম