Saturday 28 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

নিয়ম-আদেশ-নির্দেশনার তোয়াক্কা না করেই প্রাথমিকে পদন্নোতি!


১০ মে ২০১৯ ০৮:২৩

খাগড়াছড়ি: খাগড়াছড়িতে প্রধান শিক্ষকের চলতি পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে কোনোকিছুরই তোয়াক্কা করা হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। জেলার বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে জ্যেষ্ঠতার নীতি, আদালতের আদেশ ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা লঙ্ঘন করে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। ফলে পুরো জেলায় ৮২ জন সিনিয়র সহকারী শিক্ষক পদোন্নতি বঞ্চিত হয়েছেন।

পদোন্নতিবঞ্চিত জ্যেষ্ঠ শিক্ষকদের অভিযোগ, ঘুষ নিয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফাতেমা মেহের ইয়াসমিন তাদের বঞ্চিত করেছেন। এ নিয়ে নানা জায়গায় আবেদন করলেও কোনো ফল মিলছে না।

বিজ্ঞাপন

দিঘীনালা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. মারেফাতুল ইসলাম অভিযোগ করে জানান, জেলা শিক্ষা অফিসার ফাতেমা মেহের ইয়াসমিন স্বাক্ষরিত সহকারী শিক্ষকদের জ্যেষ্ঠতার তালিকায় তার ক্রমিক নং- ১৯। কিন্তু তাকে পদোন্নতি না দিয়ে যারা তালিকায় ৩১-৪২ নম্বরে আছেন তাদের পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে।

শুধু দিঘীনালা নয়। একই দৃশ্য খাগড়াছড়ি সদর, পানছড়ি, মহালছড়ি, মাটিরাঙা, মানিকছড়ি, লক্ষিছড়ি, রামগড় ও গুইমারাসহ জেলার সব উপজেলায় বলে অভিযোগ করেন মারেফাতুল।

খাগড়াছড়ি সদরের ইটছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক ক্যজসাই মারমা জানান, জেলা শিক্ষা অফিসার ফাতেমা মেহের ইয়াসমিন নিজেই ২০১৭ সালের ৪ ডিসেম্বর সহকারী শিক্ষকদের জ্যেষ্ঠতার তালিকা তৈরি করেছেন এবং মন্ত্রণালয়েও পাঠিয়েছেন। পরে তিনি ঘুষ নিয়ে জুনিয়রদের সিনিয়র দেখিয়ে ২০১৮ সালের এপ্রিল মাসের ১ তারিখে নতুন আরেকটি গ্রেডেশান তালিকা করেন।

দিঘীনালা উপজেলার ছোট মেরং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. মোজাম্মেল হক বলেন, ‘জ্যেষ্ঠতার বিষয়ে আমরা ৪০ জন সহকারী শিক্ষক ২০১৮ সালের মে মাসের ১৬ তারিখে হাইকোর্টে রিট পিটিশন নং- ৬২০৬/১৮ দায়ের করি। সেই রিটের শুনানি শেষে আদালত ২৭/১১/২০১৮ তারিখে আদেশ দেন। ওই আদেশে বলা হয়, চলতি দায়িত্বের গেজেটের (মেমো নং- ৩৮.০০.০০০০.০০৮.১২.০৪১.১৮-৭২১) বাস্তবায়নের পূর্বে রিট পিটিশনারদের জ্যেষ্ঠতা প্রদান করে ৪০টি পদ সংরক্ষণ করার জন্য। কিন্তু তার বাস্তবায়ন না করে জেলা শিক্ষা অফিসার ১৩৯ পদে তড়িঘড়ি করে পদোন্নতি ও বদলি করেছেন।

বিজ্ঞাপন

তাছাড়া চলতি দায়িত্বের শর্তে স্পষ্ট উল্লেখ আছে, চলতি দায়িত্ব দেওয়া হলে পদ শূন্য হবে না। কিন্তু খাগড়াছড়িতে চলতি দায়িত্ব দেওয়ার পর পদ শূন্য দেখিয়ে বদলি করা হয়েছে। বদলি নিয়েও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টরা ব্যাপক ঘুষ বাণিজ্য করেছেন বলেও অভিযোগ করেন মোজাম্মেল হক।

মাটিরাঙা উপজেলার পূর্ব ধলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘জেলা শিক্ষা অফিস থেকে বারবার বলা হচ্ছে নন-ক্যাডার কর্মকর্তা ও কর্মচারী (জ্যেষ্ঠতা ও পদোন্নতি) বিধিমালা, ২০১১ অনুযায়ী গ্রেডেশান তালিকা করা হয়েছে। খাগড়াছড়ি জেলা শিক্ষা অফিসার ২০১১ সালের ৪ মে প্রকাশিত গেজেটের ৪ (১)(ক)(খ) ধারা অনুসরণ করে পারস্পরিক জ্যেষ্ঠতার তালিকা করেছেন। কিন্তু খাগড়াছড়ি জেলায় পদোন্নতির ক্ষেত্রে এই ধারা অনুসরণ করা হয়নি। কারণ খাগড়াছড়ি জেলায় রাজস্ব খাতভূক্ত শূন্য পদের বিপরীতে প্রথম বিজ্ঞপ্তি হয় হয় ২০০০ সালে। পরে দ্বিতীয় বিজ্ঞপ্তি হয় ২০০২ সালে।’

অন্যদিকে, এডিবি প্রকল্পভূক্ত সৃষ্টপদের জন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি হয় ২০০৩ এর জানুয়ারিতে। পরীক্ষা ও নিয়োগ শেষ হয় ২০০৩ সালের এপ্রিল মাসের মধ্যেই। আর ২০০০ ও ২০০২ সালের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী পরীক্ষা হয়েছে জুন মাসে এবং শিক্ষকেরা যোগদান করেছেন জুলাই মাসে। এডিবির প্রকল্পভুক্ত সৃষ্ট পদে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা আগে হয়েছে, শিক্ষকেরা আগে যোগদান করেছেন।

অন্যদিকে, রাজস্ব খাতভুক্ত শুন্যপদের বিজ্ঞপ্তি দু’টি আগে হলেও পরীক্ষা পরে হয়েছে। শিক্ষকরাও পরে যোগদান করেছেন। তাহলে দু’টি নিয়োগের পদ ভিন্ন, পরীক্ষা ভিন্ন তারিখে হয়েছে, ভিন্ন প্রশ্নপত্রে হয়েছে, নিয়োগ ভিন্ন তারিখে হয়েছে। তারপরও তাদের জ্যেষ্ঠতার ক্ষেত্রে পারস্পরিক জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ বিধিমালা লঙ্ঘণ করা হয়েছে। তাছাড়া প্রকল্পভূক্ত শিক্ষকগণ বিভিন্ন সময়ে রিট করলেও তার রায়ও শিক্ষকদের পক্ষে আসে। কিন্তু সে আদেশও বাস্তবায়ন করেননি জেলা শিক্ষা অফিসার।

 

মাটিরাঙা উপজেলার করল্যাছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ সহকারী শিক্ষক মো. শহিদুল হক বলেন, ‘বর্তমান জেলা শিক্ষা অফিসার মামলার কোনো তোয়াক্কা না করে আবারো নতুন করে গ্রেডেশান তালিকা প্রণয়নের মৌখিক নির্দেশ দিয়েছেন। তার নির্দেশ অমান্য করলে উপজেলা শিক্ষা অফিসারদের শোকজ করা হয়।’

পদোন্নতিপ্রাপ্ত আমতলী হাকিমপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘এডিবির প্রকল্পভুক্ত শিক্ষকেরা অযৌক্তিক দাবি করছেন। তারা ২০০৩ সালের এপ্রিলে যোগদান করলেও ২০০৫ সালের ২০ জুন রাজস্ব খাতে হস্তান্তরিত হয়েছেন। সেসময় তারা দ্বিতীয়বার যোগদানপত্র জমা দিয়েছে। ফলে তারা সিনিয়রিটি পাবেন না।’

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সংক্ষুদ্ধ ৪০ শিক্ষকের রিটের কারণে হাইকোর্ট পদোন্নতি প্রক্রিয়া স্থগিত করেননি। এ কারণে আমাদের পদোন্নতি অবৈধ হতে পারে না।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাও অধিদফতরের সর্বশেষ নির্দেশনা বা আদালতের সর্বশেষ রায় বাস্তবায়ন করা যুক্তিযুক্ত বলেই মনে করছেন।

এ নিয়ে জেলা শিক্ষা অফিসার ফাতেমা মেহের ইয়াসমিন বলেন, ‘এডিপির প্রকল্পভুক্ত শিক্ষকরা অযথা ঝামেলার সৃষ্টি করছেন। ২০১৩ সালের নিয়োগ বিধি ও মন্ত্রণালয়ের আদেশ অনুযায়ীই গ্রেডেশান তালিকা করা হয়েছে। আমি মন্ত্রণালয়ের আদেশের বাইরে যেতে পারি না। আইন অনুযায়ী প্রথম ধাপে প্রধান শিক্ষক চলতি দায়িত্ব পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে।’

আপনি তো ২০১৭ সালের ৪ ডিসেম্বর উপজেলা শিক্ষা অফিসারদের মাধ্যমে গ্রেডেশান তালিকা করেছেন এবং আপনার স্বাক্ষরে তা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছেন। পরে কেন ১ এপ্রিল ২০১৮ সালে আরেকটি গ্রেডেশান তালিকা করা হলো, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সব কিছু তো আর আমার হাতে নেই।’

ঘুষ নিয়ে পদোন্নতি ও বদলি বাণিজ্যের অভিযোগ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘যারা পদোন্নতি পায়নি তাদের নানা অভিযোগ থাকে। এসব অভিযোগের সত্যতা নেই। তদন্ত করলে একটি অভিযোগেরও সত্যতা পাওয়া যাবে না।’ এসব অভিযোগ অহেতুক ও মিথ্যা বলেও জানান তিনি।

সারাবাংলা/এমও

আদর্শ তোয়াক্কা নিয়ম নীতি প্রাথমিক শিক্ষক

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর