Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ঢাকায় আন্দোলন, তৃণমূলে ধুঁকছে শিক্ষা-স্বাস্থ্যখাত


২৯ জানুয়ারি ২০১৮ ০৮:০৩

মেসবাহ শিমুল, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: সরকারি প্রাথমকি বিদ্যালয়, নন-এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি শিক্ষকদের পর ঢাকায় আন্দোলন শুরু করেছেন সারাদেশের এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা। সম্প্রতি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও যোগ দিয়েছেন রাজপথের আন্দোলনে। এদিকে, শনিবার থেকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেছেন সারাদেশের প্রায় ১৪ হাজার কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার-সিপিএইচসি’রা। যেনো রাজপথ দখল করলেই হবে দাবি আদায়।

বিজ্ঞাপন

সে আদায় যে হচ্ছে না, তা নয়। মিলছে প্রতিশ্রুতি। পানি ফলের রস খাইয়ে মন্ত্রীরা তাদের অনশন ভাঙছেন। আন্দোলনকারীরা ঘরে ফিরে যাচ্ছেন। কিন্তু এ বছরের চিত্রটি একটু ভিন্নরকম। একদলের আন্দোলন শেষ হয়তো, অন্য দল এসে আন্দোলনে বসে পড়ে। ফলে রাজধানীতে শিক্ষকদের আন্দোলন থামছেই না। কিন্তু ওদিকে, এসব আন্দোলনের কারণে স্থবির হয়ে পড়েছে তৃণমূলের শিক্ষা ও স্বাস্থসেবা খাত। আন্দোলনকারীরা দাবি আদায়ে অনড় থাকায় কবে নাগাদ এ স্থবিরতা কাটবে সে নিশ্চয়তা দিতে পারছেন না কেউ।

শিক্ষকদের কয়েক দফা আন্দোলনের পর গত ১০ জানুয়ারি থেকে রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করে বেসরকারি শিক্ষা জাতীয়করণ বাস্তবায়ন লিয়াঁজো কমিটি। বর্তমানে তারা আমরণ অনশনে রয়েছেন। এরইমধ্যে সারাদেশের প্রায় ২৭ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৫ দিন ধর্মঘটও পালিত হয়েছে। বছরের শুরুতে শিক্ষার্থীদের যেখানে নতুন বইয়ে পাঠমগ্ন হয়ে উঠার কথা সেখানে বন্ধ রয়েছে স্বাভাবিক পাঠদান। আজ সোমবার থেকে ফের লাগাতার ধর্মঘটের ডাক দেওয়ায় অচলাবস্থার মধ্যে পড়ছে সারাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের একটি বড় অংশ।

বিজ্ঞাপন

এদিকে শিক্ষকদের আন্দোলনের কারণে আগামী পহেলা ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় বিঘ্ন ঘটার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। রোববার আন্দোলনরত শিক্ষকরা দাবি মানা না হলে এসএসসি পরীক্ষা বর্জনের হুমকি দিয়েছেন।

এ বিষয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ লিয়াজোঁ ফোরামের আহবায়ক অধ্যক্ষ আব্দুল খালেক জানিয়েছেন, এ সময়ের মধ্যে দাবি মানা না হলে আমরা এসএসসি পরীক্ষা বর্জন করবো। বিষয়টি আমাদের ফোরামের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে।

ঢাকায় কেন্দ্রীয় কর্মসূচির সঙ্গে তাল মিলিয়ে সারাদেশের ২৭ হাজার শিক্ষ প্রতিষ্ঠানের কয়েক লাখ শিক্ষকও দাবির পক্ষে অটল রয়েছেন। এ বিষয়ে পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার রঘুনাথপুর হক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক মোস্তাবশির রহমান সারাবাংলাকে জানান, কেন্দ্রের যে কোনো সিদ্ধান্তের সঙ্গে তারা একমত রয়েছেন। সেখান থেকে যদি এসএসসি পরীক্ষা বর্জনের কর্মসূচি দেওয়া হয় তাও মানবেন।

এছাড়া একই উপজেলার বরইবুনিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সারাবাংলাকে জানান, তাদের উপজেলার প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্মঘট পলিত হয়েছে। স্কুলের প্রধান শিক্ষকরা অন্যান্য স্কুল পরিদর্শন করছেন। এসএসসি পরীক্ষা বর্জনের বিষয়ে তারা এখনও কিছু জানেন না এমন জানিয়ে তিনি বলেন, ঢাকায় যারা আন্দোলন করছেন তারা আমাদেরই প্রতিনিধি। সেখান থেকে যে সিদ্ধান্ত আসবে সে বিষয়ে তাদের সমর্থন রয়েছে।

এ বিষয়ে ওই বিদ্যালয়ের এবারের এসএসসি পরীক্ষার্থী হাসিবুর রহমান জানায়, পরীক্ষার প্রস্তুতি হিসেবে তাদের স্কুলের হোস্টেলে রাখা হয়েছে। তবে গেল কয়েকদিন স্কুলে কোনো ক্লাস-পরীক্ষা না হওয়ায় তাদের হোস্টেলেও অতিরিক্ত মনিটরিং হয়নি। এ অবস্থায় শিক্ষকরা পরীক্ষা বর্জনের সিদ্ধান্ত নিলে তারা বিপদে পড়বে।

এদিকে চাকরি রাজস্বভুক্ত করার দাবিতে গত শনিবার থেকে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন সারাদেশের প্রায় ১৪ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিকের স্বাস্থ্যকর্মীরা। স্বাস্থ্যকর্মীরা সব ঢাকায় থাকায় বন্ধ রয়েছে তৃণমূলের দরিদ্র মানুষের স্বাস্থ্যসেবা।

এ বিষয়ে পিরোজপুরের মাটিভাংগা ইউনিয়নের তারাবুনিয়া বাজার কমিউনিটি ক্লিনিকের স্বাস্থ্য সহকারী মিলন রায় জানান, ক্লিনিক তালাবদ্ধ করে বর্তমানে ঢাকায় রয়েছেন।

ওই ক্লিনিকের সামনে চায়ের দোকান দেন স্থানীয় মিটুল শেখ। তিনি বলেন, শনিবার থেকে ক্লিনিক তালাবদ্ধ। অনেকে চিকিৎসা নিতে এসে ফিরে গেছেন। তিনি বলেন, অনেকেই জিজ্ঞেস করেন ক্লিনিক বন্ধ কেন। তাদেরকে বলেছি ডাক্তার আন্দোলন করতে ঢাকায় গেছেন। ফিরলে আবার চিকিৎসা সেবা চালু হবে।

এদিকে চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে ক্লিনিক কর্মীদের আন্দোলনও এখন তুঙ্গে। রোববার সারাদিন জাতীয় প্রেস ক্লাবও আশপাশের এলাকায় হাজার হাজার স্বাস্থ্য সহকারী বিক্ষোভ করেছেন। এ বিষয়ে চাকরি জাতীয় করণ সমন্বয় ফোরামের আহবায়ক শহীদুল ইসলাম সারাবাংলাকে জানান, তৃণমূলের স্বাস্থ্য সেবায় তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। কিন্তু তাদের চাকরি জাতীয়করণের দাবি মেনে নেওয়া হচ্ছে না। দাবি মেনে নেওয়া না হলে ক্লিনিকগুলো খোলা হবে না বলেও জানান তিনি।

সারাবাংলা/এমএস/একে

তৃণমূল

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর