নুসরাত হত্যার একমাস: দ্রুত বিচারের অপেক্ষায় স্বজনরা
১০ মে ২০১৯ ১০:৫৩
ফেনী: সোনাগাজী মাদরাসার ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যার একমাস পূর্ণ হলো আজ (১০ মে)। গত ৬ এপ্রিল তার শরীরে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার পর ১০ এপ্রিল রাত সাড়ে ৯টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিটে নুসরাত মারা যান। সারাদেশে আলোড়ন ফেলা এই হত্যাকাণ্ড তদন্ত করছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। এই হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের দ্রুত বিচারের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি কার্যকরের অপেক্ষায় রয়েছেন স্বজনরা।
নুসরাতের বড় ভাই, তার হত্যা মামলার বাদী মাহমুদুল হাসান নোমান জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করে সারাবাংলাকে বলেন, নুসরাতকে নৃশংসভাবে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় দেশে-বিদেশে নিন্দার ঝড় উঠেছে। আশা করছি দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হবে, যেন আর কোনো নুসরাতকে এভাবে পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে না হয়। একই দাবি করেছেন নুসরাতের বাবা মাওলানা মুছা, মা শিরিন আক্তার ও ছোট ভাই রাশেদুল হাসান রায়হান।
গত ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে যৌন নিপীড়নের দায়ে ওই মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাকে আটক করে পুলিশ। ওই সময় থেকে তিনি কারাগারে আছেন। কারাগার থেকেই নুসরাতের পরিবারকে যৌন হয়রানির মামলা তুলে নিতে চাপ দিতে থাকেন তিনি। শত চাপেও নুসরাতের পরিবার মামলা তুলে না নিলে নুসরাতকে হত্যার পরিকল্পনা করেন অধ্যক্ষ সিরাজ। সেই পরিকল্পনা অনুাযায়ী ৬ এপ্রিল নুসরাত পরীক্ষা দিতে মাদরাসায় গেলে তাকে কৌশলে মাদরাসা কেন্দ্রের সাইক্লোন শেল্টারের ছাদে নিয়ে যায় অধ্যক্ষের সহযোগীরা। সেখানে তার শরীরে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। টানা পাঁচ দিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে ১০ এপ্রিল শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন নুসরাত। এ ঘটনায় নিহতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বাদী হয়ে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাসহ আট জনের নামে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন।
আলোচিত এ মামলায় এখন পর্যন্ত এজহারভুক্ত আট আসামিসহ ২১ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ও পিবিআই। এদের মধ্যে আছেন— ওই অধ্যক্ষ এসএম সিরাজ উদ দৌলা, কাউন্সিলর ও পৌর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ আলম, শিক্ষক আবছার উদ্দিন, সহপাঠী আরিফুল ইসলাম, নূর হোসেন, কেফায়াত উল্যাহ জনি, মোহাম্মদ আলা উদ্দিন, শাহিদুল ইসলাম, অধ্যক্ষের ভাগনি উম্মে সুলতানা পপি, জাবেদ হোসেন, জোবায়ের আহমেদ, নুর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, মো. শামীম, কামরুন নাহার মনি, আবদুর রহিম ওরফে শরিফ, ইফতেখার হোসেন রানা, এমরান হোসেন মামুন, মহিউদ্দিন শাকিল, হাফেজ আবদুল কাদের ও আওয়ামী লীগ সভাপতি ওই মাদরাসার সহ-সভাপতি রুহুল।
এ মামলায় অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাসহ ১২ জন আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন। তারা হলেন— নুর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, উম্মে সুলতানা পপি, কামরুন নাহার মনি, জাবেদ হোসেন, আবদুর রহিম ওরফে শরীফ, হাফেজ আবদুল কাদের ও জোবায়ের আহমেদ, এমরান হোসেন মামুন, ইফতেখার হোসেন রানা ও মহিউদ্দিন শাকিল। নুসরাত হত্যার ঘটনায় আদালতে সাত জনের সাক্ষ্যও নেওয়া হয়েছে। গত বুধবার (৮ মে) দুপুরে ফেনীর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. জাকির হোসাইনের আদালত তাদের সাক্ষ্য নেন।
পিবিআইয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মনিরুজ্জামান বলেন, নুসরাতের ওপর অগ্নিসন্ত্রাসের ঘটনায় কেরোসিন ও বোরকা ব্যবহার করেছে চিহ্নিত দুর্বৃত্তরা। এরই মধ্যে কেরোসিন ও বোরকা বিক্রেতা ও বোরকা দোকানের কর্মচারী, নুসরাতের দুই বান্ধবী তথা আলিম পরীক্ষার্থী, মাদরাসার একজন নৈশপ্রহরী ও একজন পিয়নসহ মোট সাত জনের সাক্ষ্য নিয়েছেন আদালত। এই সাত জনই মামলার গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী হিসেবে বিবেচিত। নুসরাত খুনের ঘটনাটি দ্রুত উদ্ঘাটিত হয়েছে ও দ্রুত সময়ের মধ্যে শতভাগ আসামি গ্রেফতার হয়েছে। সব আসামির জবানবন্দি নেওয়ার কাজ শেষ হলে অভিযোগপত্র তৈরির কাজে হাত দেওয়া হবে। তবে চলতি মে মাসের মধ্যেই অভিযোগপত্র দাখিল সম্ভব বলে আমরা আশাবাদী।
জবানবন্দিতে যা বললো নুসরাতের ‘খুনিরা’
নুসরাত হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নেওয়া পাঁচ জনই আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। ফেনীর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জাকির হোসাইনের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন নুসরাত হত্যাকাণ্ডের অন্যতম আসামি শাহাদাত হোসেন শামীম।
সিরাজের হুকুমেই হত্যা: শ্লীলতাহানির পর নুসরাতকে কেরোসিন ঢেলে পুড়িয়ে হত্যার দায় স্বীকার করে গত ২৮ এপ্রিল ফেনীর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জাকির হোসাইনের আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা। ওই দিন রাত সাড়ে ৮টায় পিবিআইয়ের বিশেষ পুলিশ সুপার মো. ইকবাল হোসেন এ বিষয়য়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। এসময় তিনি বলেন, অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার সঙ্গে কারাগারে শাহাদাত হোসেন শামীম ও নুর উদ্দিন দেখা করতে এলে তিনি নুসরাতকে মামলা তুলে নিতে চাপ প্রয়োগ করতে বলেন, চাপ প্রয়োগে কাজ না হলে পুড়িয়ে মেরে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন।
পপির নাম গোপন রেখেছিল হত্যাকারীরা: ফেনীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সরাফ উদ্দিন আহমেদের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় আরেক আসামি উম্মে সুলতানা পপি (শম্পা)। সে জানায়, নুসরাতকে হত্যা করার জন্য ঘটনার দিন পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে সে-ই ছাদে ডেকে নিয়ে গেছিল। তার নাম পপি হলেও সেদিন হত্যাকারীরা তার পরিচয় গোপন রেখে ‘শম্পা’ নামে ডেকেছিল। সেজন্য নুসরাতও নিজের বয়ানে তাকে ডেকে নেওয়া বোরকা পরিহিত ছাত্রীটির নাম শম্পা বলে গিয়েছিল। জবানবন্দিতে পপি জানায়, সে হত্যার সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিল। বান্ধবী নিশাতকে ছাদে কেউ মারছে— এমন খবর দিয়ে সে নুসরাতকে ছাদে ডেকে নিয়ে যায়। তারপর অন্য সহযোগীরা মিলে নুসরাতের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়।
কেরোসিন ঢালে জাবেদ, বুক চেপে ধরে মনি: ২০ এপ্রিল বিকেলে একই ধরনের জবানবন্দি দেয় আসামি জাবেদ ও কামরুন্নাহার মনি। কয়েক ঘণ্টার জবানবন্দি রেকর্ডের পর রাত ১০টার দিকে তাদের স্বীকারোক্তির বিষয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন পিবিআই’র চট্টগ্রাম বিভাগের স্পেশাল পুলিশ সুপার মো. ইকবাল। তিনি বলেন, আদালতে এ দু’জন স্বীকারোক্তি দিয়েছে যে, তারা তাদের সহপাঠী নুসরাত জাহান রাফিকে হত্যার মিশিনে সরাসরি জড়িত। জাবেদ নুসরাতের সারাশরীরে কেরোসিন ঢেলে দেয়। আগুন ভালো করে লাগার জন্য মনি নুসরাতের বুকসহ শরীর চেপে ধরে।
ম্যাচের কাঠি দিয়ে আগুন ধরায় জুবায়ের: একই আদালতে জবানবন্দি দেয় সাইফুর রহমান মো. জোবায়ের। স্বীকারোক্তি অনুযায়ী, সে ঘটনার দিন কিলিং মিশনে সরাসরি অংশ নিয়ে নুসরাতে গায়ে কেরোসিন ঢেলে দেয় এবং ম্যাচের কাঠির মাধ্যমে আগুন ধরিয়ে দেয়। এছাড়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী নুর উদ্দিন, হাফেজ আবদুল কাদের ও আবদুর রহিম শরীফ।
গেট পাহারার দায়িত্বে ছিলো মামুন ও রানা: এদিকে, ৬ মে বিকেলে ফেনীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জাকির হোসাইনের আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় আসামি ইমরান হোসেন মামুন ও ইফতেখার হোসেন রানা। জবানবন্দি শেষে সন্ধ্যায় পিবিআইয়ের বিশেষ পুলিশ সুপার মো. ইকবাল সাংবাদিকদের তাদের জবানবন্দির ব্যাপারে ব্রিফ করেন। এসময় তিনি বলেন, দুই আসামি আদালতে বলেন, ৬ মে হত্যাচেষ্টার ঘটনার দিন তারা দু’জন গেট পাহারার দায়িত্বে ছিল, যেন ছাদে কিলিং মিশনে কেউ প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে না পারে। এছাড়া নুসরাত হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় যাবতীয় যত পরিকল্পনা হয়েছে সব বিষয়ে তারা জানত।
সিঁড়ি পাহারার দায়িত্বে ছিল শাকিল: জাকির হোসাইনের আদালতেেই গত ৭ মে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় নুসরাত হত্যা মামলার আরেক আসামি মহি উদ্দিন শাকিল। জবানবন্দি শেষে পিবিআইয়ের বিশেষ পুলিশ সুপার মো. ইকবাল সাংবাদিকদের বলেন, আসামী মহি উদ্দিন শাকিল আদালতে বলেন, হত্যাচেষ্টার ঘটনার দিন সে সাইক্লোন শেল্টারের সিঁড়ি পাহারার দায়িত্বে ছিলো, যেন কেউ ছাদে উঠতে না পারে ও কিলিং মিশনে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে না পারে। নুসরাত হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় যাবতীয় পরিকল্পনা সেও জানত বলে জানায় আদালতে।
চলতি মাসেই অভিযোগপত্র দাখিল
আলোচিত এ হত্যা মামলার অভিযোগপত্র এ মাসের মধ্যেই দাখিল করা সম্ভব হবে বলে আশা করছে পিবিআই। সংস্থাটির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মনিরুজ্জামান বলেন, নুসরাত হত্যার রহস্য দ্রুত উদ্ঘাটিত হয়েছে এবং দ্রুততম সময়ে সব আসামি গ্রেফতার হয়েছে। সব আসামির জবানবন্দি নেওয়ার কাজ শেষ হলে অভিযোগপত্র তৈরির কাজে হাত দেওয়া হবে। আমরা আশা করছি, চলতি মাসের মধ্যেই অভিযোগপত্র দাখিল করা হবে।
কঠোর ব্যবস্থা নিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ
আলোচিত নুসরাত হত্যার ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম বাসসকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নুসরাতের হত্যাকারীদের বিচারের আওতায় আনতে এবং শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে নির্দেশ দিয়েছেন।
খেয়াল রাখবে হাইকোর্ট
নুসরাত জাহান রাফির মামলা কোন দিকে মোড় নিচ্ছে, এ মামলায় কোনো গাফিলতি হচ্ছে কি না— তা খেয়াল রাখবে হাইকোর্ট। সাগর-রুনি, তনুসহ অন্যান্য মামলার মতো কোনোভাবেই যেন নুসরাতের মামলা হারিয়ে না যায়, তা হাইকোর্টের নজরে থাকবে। নুসরাত হত্যার ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত চেয়ে আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ এসব কথা বলেন। পাঁচটি পত্রিকায় প্রকাশিত খবরগুলো তুলে ধরে আদালতে বিচার বিভাগীয় তদন্ত চেয়ে এ আবেদন করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সৈয়দ সায়েদুল হক।
যৌন হয়রানির ঘটনাকে নাটক বানাতে চেয়েছিলেন ওসি
যৌন হয়রানির অভিযোগ করতে গিয়ে ফেনীর সোনাগাজী থানার সদ্য বরখাস্ত ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোয়াজ্জেম হোসেনের কক্ষে আরেক দফা হয়রানির শিকার হতে হয়েছিল মাদরাসাছাত্রী নুসরাতকে। ওসি নিয়ম ভেঙে জেরা করতে করতেই নুসরাতের বক্তব্য ভিডিও করেন। মৌখিক অভিযোগ নেওয়ার সময় দুই পুরুষের কণ্ঠ শোনা গেলেও সেখানে নুসরাত ছাড়া অন্য কোনো নারী বা তার আইনজীবী ছিলেন না। ভিডিও করার সময় নুসরাত অঝোরে কাঁদছিলেন ও তার মুখ দুই হাতে ঢেকে রেখেছিল। তাতেও ওসির আপত্তি। বার বারই ‘মুখ থেকে হাত সরাও, কান্না থামাও’ বলার পাশাপাশি তিনি এ-ও বলেন, ‘এমন কিছু হয়নি যে এখন তোমাকে কাঁদতে হবে।’
গত ২৭ মার্চ মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার হাতে শ্লীলতাহানির শিকার হয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগ করতে গিয়েছিলেন নুসরাত। থানায় পুলিশের কক্ষে নুসরাতকে জিজ্ঞাসাবাদের সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এতে অধ্যক্ষের কক্ষে কী ঘটেছিল সেই বিবরণ দিয়েছেন নুসরাত। পরে নুসরাতকে জিজ্ঞাসাবাদে আপত্তিকর প্রশ্ন করা ও জিজ্ঞাসাবাদের ভিডিও ধারণ করে ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগে ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে সাইবার ট্রাইব্যুনালে মামলাও হয়েছে।
শেষ চিঠিতেও লড়াইয়ের কথা বলেছিলো নুসরাত
১০ এপ্রিল বুধবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে নুসরাতকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার হাতে যৌন হয়রানির শিকার হওয়ার পরে কঠিন পরিস্থিতিতেও ভেঙে না পড়ে বাঁচতে চেয়েছিলেন তিনি। সহপাঠী বান্ধবীদের উদ্দেশে হার না মেনে লড়াইয়ের কথা লিখেছিলেন তিনি। তার লেখা শেষ চিঠি উদ্ধার করেছে পুলিশ। ৯ এপ্রিল নুসরাতের বাড়ি থেকে উদ্ধার হওয়া চিঠিতে দিন-তারিখ লেখা না থাকলেও বিষয়বস্তু বিবেচনায় এটি কয়েকদিন আগের লেখা বলে মনে করছে তদন্তকারী সূত্র।
চিঠিতে নুসরাত জাহান রাফি তার সহপাঠীদের কাছে যৌন হয়রানির শিকার হওয়া ও অধ্যক্ষের শাস্তির দাবি তুলে ধরেছেন। পুলিশ জানায়, তার পড়ার টেবিলের খাতায় দুই পাতার ওই চিঠি তামান্না ও সাথী নামে দুই বান্ধবীকে লেখা হয়েছে। ওই চিঠিতে আত্মহত্যা করবে না বলেও উল্লেখ করেন নুসরাত। এদিকে, সিরাজ উদ দৌলা যৌন হয়রানির মামলায় গ্রেফতার হলে তার মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন হয়েছিল সোনাগাজীতে। এ নিয়ে নুসরাত তার চিঠিতে ক্ষোভও জানিয়েছেন।
নিজের প্রতি যে অন্যায় হয়েছে, সেই অন্যায়ের বিচার আদায় করেই ছাড়বেন— এমন প্রত্যয় জানিয়ে চিঠিতে নুসরাত লিখেছেন, ‘আমি লড়ব শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত। আমি প্রথমে যে ভুলটা করেছি আত্মহত্যা করতে গিয়ে, সেই ভুলটা দ্বিতীয়বার করব না। মরে যাওয়া মানে তো হেরে যাওয়া। আমি মরব না, আমি বাঁচব। আমি তাকে শাস্তি দেবো। যে আমায় কষ্ট দিয়েছে আমি তাকে এমন শাস্তি দেবো যে তাকে দেখে অন্যরা শিক্ষা নেবে। আমি তাকে কঠিন থেকে কঠিনতম শাস্তি দেবো ইনশাল্লাহ।”
সারাবাংলা/জেএএম/টিআর