সপ্তাহ শেষে ফিরতে চান কাদের, খুলে দেবেন মেঘনা-গোমতী ২ সেতু
১০ মে ২০১৯ ১০:৩৩
ঢাকা: টানা দুই মাসের চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে উঠেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সিঙ্গাপুরে এখন তিনি নিয়মিত হাঁটাচলা করছেন এবং চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী শরীরের যত্ন নিচ্ছেন। এ অবস্থায় দেশে ফিরে আসতে চান ওবায়দুল কাদের। সপ্তাহ শেষে তিনি দেশে ফিরে আসতে পারেন বলে জানিয়েছেন তার সঙ্গে থাকা ঘনিষ্ঠজনরা।
১৫ তারিখের একটি ফ্লাইটে দেশে আসার প্রস্তুতি চলছে বলেও জানিয়েছে কাদেরের একান্ত সূত্র।
সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব মো. নজরুল ইসলামও সারাবাংলাকে এমন আভাস দিয়েছেন। আগামী ২৫ মে দ্বিতীয় মেঘনা ও দ্বিতীয় গোমতী সেতু উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ওবায়দুল কাদের থাকবেন এমন আশা সচিবের।
ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কে ভয়াবহ যানজট নিরসনে এই সেতু দুটি বড় ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। ওবায়দুল কাদের দেশে থাকা অবস্থায় বহুবার সরেজমিনে সেতু নির্মাণ কাজের অগ্রগতি দেখতে চলে যেতেন।
তাই মাসখানেক আগে ওবায়দুল কাদেরের অনুপস্থিতিতেই দ্বিতীয় কাঁচপুর সেতু উদ্বোধন করা হয়। তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন ওবায়দুল কাদের সুস্থ হয়ে ফিরে আসলে তাকে নিয়েই সেতু দেখতে যাবেন।
ওবায়দুল কাদের দেশে ফিরে আসলে দ্বিতীয় মেঘনা ও গোমতী সেতু সেখানে গিয়েই উদ্বোধন করতে পারেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রণালয় সূত্র এমনটা জানিয়েছে। এজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সময় চাওয়া হয়েছে।
সিঙ্গাপুরে ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে রয়েছেন তার সহধর্মিনী ইসরাতুন্নেসা কাদের, এপিএস মহিদুল হক, সেতু বিভাগের তথ্য কর্মকর্তা শেখ ওয়ালিদ ফাইয়াজ, ব্যক্তিগত কর্মকর্তা সুখেন চাকমা, ব্যক্তিগত ফটোগ্রাফার মনসুরুল আলম সহ ঘনিষ্ঠ কয়েকজন।
সিঙ্গাপুর মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালের কাছেই একটি ভাড়া নেওয়া অ্যাপার্টমেন্টে থাকছেন তিনি। এখান থেকেই নিয়মিত তার চিকিৎসক ডা. ফিলিপ কোহের চেম্বারে চেকআপের জন্য যাতায়াত করছেন।
গত ২ মার্চ ভোররাতে ঢাকায় নিজ বাড়িতে শ্বাসকষ্ট শুরু হলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন ওবায়দুল কাদের। সেখানে দ্রুত এনজিওগ্রাম করা হলে তার হৃৎপিণ্ডের রক্তনালীতে তিনটি বড় ব্লক ধরা পড়ে। এরমধ্যে একটি ব্লক স্টেন্টিংয়ের (রিং পরানো) মাধ্যমে দ্রুত অপসারণ করেন চিকিৎসকরা। ৪ মার্চ বিকেলে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে ওবায়দুল কাদেরকে সিঙ্গাপুরে মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়।
গত ২০ মার্চ সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে ওবায়দুল কাদেরের বাইপাস সার্জারি সম্পন্ন হয়। সার্জারি করেন তার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সিনিয়র সদস্য কার্ডিওথোরাসিক সার্জন ডা. সিবাস্টিন কুমার সামি। ডা. ফিলিপ কোহে এই চিকিৎসা বোর্ডের নেতৃত্বে ছিলেন।
এদিকে ওবায়দুল কাদের সুস্থ হয়ে ওঠায় আগামী ২৫ মে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দ্বিতীয় গোমতী ও দ্বিতীয় মেঘনা সেতুর দুটি চালু কার্যক্রম নিশ্চিত ধরে নিয়ে এগুচ্ছে মন্ত্রণালয়।
সেতু দুটি চালু হলে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যাতায়াতে অন্তত এক ঘন্টা সময় এগিয়ে আসবে। সেতু দুটি এখন সরু থাকার কারণে যান চলাচলে প্রায়ই সমস্যার সৃষ্টি হয় দীর্ঘ যানজটে আটকা পড়ে হাজার হাজার গাড়ি। বিশেষ করে ঈদের মৌসুমে জনদুর্ভোগ চরমে উঠে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানবাহনের চলাচলের গতি আনতে গেল সপ্তাহে মেঘনা টোল প্লাজায় ডিজিটাল মাধ্যমে টোল আদায়ের পদ্ধতি চালু করা হয়।
দ্বিতীয় কাঁচপুর দ্বিতীয় মেঘনা ও দ্বিতীয় গোমতী সেতু প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয় ৮,৪৮৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাইকার ৬,৪২৯ কোটি টাকা এবং সরকারি তহবিল থেকে যোগান দেয়া হয় ২,০৫৭ কোটি টাকা। এ প্রকল্পের প্রথম সেতু হিসেবে এরইমধ্যে কাঁচপুর দ্বিতীয় সেতু চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হয়েছে।
সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ৯৩০ মিটার দৈর্ঘ্যের দ্বিতীয় মেঘনা সেতু এবং ১ হাজার ৪১০ মিটার দৈর্ঘ্যের গোমতি সেতু যান চলাচলের জন্য প্রস্তুত হয়ে এসেছে। এখন সেতু দুটিতে চলছে শেষ মুহূর্তের কাজ। সেতুতে লাইটপোস্ট বিদ্যুতের তার টানা এবং অন্যান্য সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ চলছে এখন।
সেতু ৩টি যৌথভাবে নির্মাণ করেছে জাপানি প্রতিষ্ঠান ওবায়শি করপোরেশন, সিমিজু করপোরেশন এবং জেএফই ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন।
সারাবাংলা/এসএ/জেএএম